Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বছরে ৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে টিসিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


 বছরে ৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে টিসিবি

করোনা সংকটে অসহায় মানুষকে স্বল্পমূল্যে দেয়া পণ্য সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মাধ্যমে দেয়া পণ্য দোরগোড়ায় পৌঁছাতে গত অর্থ বছরে ৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের আগে বাজার চাহিদার ১ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করতো টিসিবি। করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে পণ্য সরবরাহ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়। বর্তমানে মোট বাজার চাহিদার ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো হচ্ছে বলে টিসিবি সূত্র জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে ৪৫০টি পয়েন্টে ট্রাক ও মিনি পিকআপের মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৯৫ থেকে ১০০ পয়েন্টে এই কার্যক্রম চলছে।

রাজধানীতে টিসিবির পণ্য সরবরাহকারী ডিলাররা বলছেন, রাজধানীসহ সারা দেশের কোনো কোনো পয়েন্টে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ পয়েন্টে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে ঢাকা প্রেস ক্লাব পয়েন্টের টিসিবির পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাম্মি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাম্মি আকতার আমার সংবাদকে বলেন, ‘চাহিদা বেশি রয়েছে এটা সত্য। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি পণ্য ক্রয় করতে এসে কেউ যেনো খালি হাতে ফিরে না যায়। সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন যতটুকু পরিমাণ পণ্য দেয় তা বাজারে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে লাভটাও সীমিত। কেজি প্রতি পাঁচ টাকা মুনাফা হয়।’  

হিসাব নিরীক্ষণে দেখা যায়, পণ্য সরবরাহ করে প্রতিটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দৈনিক পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা মুনাফা করতে সমর্থ হয়। এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করানোর কারণে পণ্য বিক্রয়ে অনিয়ম হচ্ছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্য লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য ক্রয় করছেন। এ ছাড়া  দোকানিরা টিসিবির পণ্য ক্রয় করে প্যাকেট বদলে নিজেদের দোকানে বিক্রি করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরান ঢাকার চকবাজার, নাজিরাবাজার এলাকায় ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোলা মোড়ক, ভোজ্যতেলের বোতল কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখান থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেসব মোড়ক ও বোতল সংগ্রহ করছে। রাজধানীতে টিসিবি পণ্যের চাহিদা যেমন বাড়ছে তেমনি ওইসব মোড়ক ও বোতলের চাহিদাও বাড়ছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিদর্শক জানান, অনেকে পোশাক পাল্টে এসে একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। মাস্ক পরিধান করে থাকার কারণে এসব অসাধু লোকদের শণাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

মোহাম্মদপুরের বছিলায় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রুম্পা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অশোক কুমার বসাক জানান, ‘পোশাক পাল্টানো পার্টির উৎপাতে আমাদের প্রতিনিধিরা প্রায় নাজেহাল হচ্ছেন। যাদেরকে সন্দেহ করা হয় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উল্টো বিপত্তিতে পড়তে হয়। তবে এক্ষেত্রে আমরা সন্দেহভাজনদের পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখি এবং পরিদর্শককে জানাই। পরিদর্শকদের তৎপরতা বাড়লে এসব অসাধু লোকের উৎপাত কমতে পারে।’     
 
টিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার গত দুই বছর টিসিবির পণ্য সরবরাহ ১০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে। এই কার্যক্রম পরিচালনায় যাতে কোনোরূপ অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একাধিকবার নির্দেশনা এসেছে। আমরা সেদিকে বিশেষ নজর রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো কোনো স্থানে কিছু অনিয়ম হয়তো হয়ে থাকতে পারে যা আমাদের নজরে এখনো আসেনি।

তিনি বলেন, যেহেতু এ কার্যক্রম জনগণের সেবার উদ্দেশে পরিচালিত করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে যদি কেউ এ ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে সরাসরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর অনুরোধ করছি।’

তথ্যমতে, রাজধানীর খুচরা বাজারের পয়েন্টগুলোতে প্রতিদিন ২০০ ভোক্তাকে ৪০০ লিটার ভোজ্যতেল, ১৫০ ভোক্তাকে ৩০০ কেজি করে চিনি ও মসুরের ডাল, ১৪০ ভোক্তাকে ৭০০ কেজি পেঁয়াজ সরবরাহ করা হচ্ছে।