Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বয়স্করা এখনো টিকার বাইরে

মাহমুদুল হাসান

অক্টোবর ১৮, ২০২১, ০১:৫৫ এএম


 বয়স্করা এখনো টিকার বাইরে
  • টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে নেই সুনির্দিষ্ট জরিপ তথ্য
  • এভাবে চললে দুই বছরেও শেষ হবে না কর্মসূচি
  • সুফল পেতে মাসে তিন কোটি ডোজ প্রয়োগের পরামর্শ
  • জানুয়ারির মধ্যে ১৬ লাখ ডোজ টিকাদানের আশ্বাস

গতি নেই কোভিড-১৯ প্রতিষেধক প্রয়োগে। গত সোয়া সাত মাসে মাত্র পৌনে চার কোটি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। নিবন্ধনের পর এখনো দেড় কোটির বেশি মানুষ পাননি টিকা। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচির এই ধীরগতি চলতে থাকলে দেশে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে অন্তত দুই বছরেরও বেশি সময় লাগবে। এই লম্বা সময়ে করোনার কোনো নতুন ঢেউ শুরু হলে সামাল দেয়া কঠিন হবে। 

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪তম দেশ হিসেবে করোনার প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও প্রায় সোয়া সাত মাসে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এদিকে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ৫৫ বছর তদুর্ধ্ব ঝুঁকিপূর্ণ বয়স্ক একটি বড় অংশ এখনো টিকার আওতায় আসেনি। কেন অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ৫৫ বছর তদুর্ধ্ব সবাইকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি সে বিষয়েও সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ও জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল এডভাইজরি গ্রুপের (নাইট্যাগ) সদস্য অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ টিকাদানে আরও গতি দরকার। এভাবে টিকা দিলে দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। ততদিনে হয়তো এর রিলিভেন্স নাও থাকতে পারে। যদি সত্যি আমরা উপকার পেতে চাই তাহলে অতি দ্রুত সময়ে টিকা দিতে হবে। মাসে দুই থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা দিলে তাহলে হয়তো নতুন করে কোনো করোনার ওয়েভ (সংক্রমণের ঢেউ) আসলে পরিত্রাণ পেতে পারি। বিশৃঙ্খলভাবে টিকা দিয়ে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। দ্রুত বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা এনে সবাইকে টিকার আওতায় আনা শেষ করতে হবে। তাহলেই টিকার সুফল মিলবে। এদিকে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দিয়েছেন আশ্বাস শিগগিরই দেশের বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। সরকারের হাতে এ পর্যন্ত সাত কোটি ২২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। আগামী জানুয়ারি নাগাদ বাংলাদেশের হাতে পাওয়া টিকার পরিমাণ ১৬ কোটি ডোজে পৌঁছাবে। ফলে গতি ফিরে আসবে বলেই মত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আরও একটি মহা সমস্যা রয়ে গেছে। ৫৫ বছর তদুর্ধ্ব নাগরিক যারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের এখনো টিকার কভারেজ অত্যন্ত কম। আশঙ্কাপূর্ণ। এটা খুব দ্রুত কভার করা দরকার এবং কারা টিকা পেয়েছে কারা টিকা পায়নি সেটা জানা দরকার ছিলো। কিন্তু সেটাও আমরা জানি না। আমাদের প্রান্তিকের কমিউনিটি ক্লিনিকের চারদিকে যে ১২ থেকে ১৮শ খানা আছে সেখানে যদি আমরা জরিপ করতাম। পুরো ফ্যামিলির জরিপ করে কাদের আমরা টিকা দিয়েছি সেটা জানা থাকতো। কারা পায়নি  তাদের টিকার আওতায় আনতে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টা সহজ হয়ে যেতো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত পর্যন্ত পাঁচ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৪ জন করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৮ জন এবং পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে সাত লাখ ৩৭ হাজার ২০৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এক ডোজ টিকা নিয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৪ জন। নিবন্ধন শেষে টিকার অপেক্ষায় আছে আরও এক কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইস বিভাগের তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত দেশে পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ ৭২ হাজার ৩০৫ ডোজ করোনার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৪ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে এক কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৭৫১ জন। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড প্রয়োগ করা হয়েছে এক কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৫০৮ ডোজ। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ৩০১ ডোজ। চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪৮ ডোজ। আর মডার্নার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৫১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৮ ডোজ।