Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

তিন মাসে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১৭ শতাংশ

রেদওয়ানুল হক

অক্টোবর ১৮, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


 তিন মাসে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১৭ শতাংশ

কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যংক ঋণ বাড়ছে বলে জানা গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে সেপ্টেম্বরে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ ছিলো এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সেপ্টেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ছয় হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছে ৯ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এ পরিমাণ সরকারের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬ শতাংশ। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুখপাত্র) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধ বাড়িয়েছে— এটি অর্থনীতির জন্য ভালো দিক। সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় ব্যাংকগুলো থেকে ঘাটতি বাজেট মেটাতে ঋণ কম নিতে হচ্ছে। একই সাথে ঋণ পরিশোধ বাড়িয়ে দিয়েছে।’ 

এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল ব্যাংক খাত। তাই এবারো ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রয় প্রায় ৫৪ শতাংশ কমে গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রয় ছিলো দুই হাজার ১০৪ কোটি টাকা যা এক মাস আগে জুন মাসে ছিলো চার হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। একই সাথে কমেছে আমানতের পরিমাণও। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) মোট আমানতের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৩৮.৩৭ শতাংশ কম। 

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিলো লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে। মূল বাজেটে সরকারের ব্যাংকর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি ঋণ আসায় সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা করা হয়। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়েছিল ৬৬ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ কিছুটা কম ছিলো— ১৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। মূলত সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের ওঠানামার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরেও মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। 

কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। তবে জুন শেষে ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ ঋণ বেড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত এ খাত থেকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যংক ঋণ বাড়ছে।