Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই কাজ সম্পন্ন

অজয় সরকার ঝুটন ও এস এম জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর

অক্টোবর ১৮, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই কাজ সম্পন্ন

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকা। গাজীপুরে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। এই উন্নয়নের বেশির ভাগজুড়েই রয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকার সড়ক সমপ্রসারণ কাজ। সড়ক প্রশস্ত করার কারণে প্রায় চার হাজারেরও বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কেই রয়ে গেছে। ফলে নগরবাসীর চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি। 

মহানগরীর পশ্চিম ধীরাশ্রম, মৈরান, জাঝড়, ডেগেরচালা, মোগরখাল, কোনাবাড়ি, আমবাগ, বাগিয়া, কাশিমপুরের হাতিমারা, জয়দেবপুরের নীলেরপাড়া, ভাওরাইদ, হাতিয়াব, সালনা পশ্চিম কাঁচা বাজার, মৈশালবাড়ি রোড, জালা মার্কেট, জোলারপাড়, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোডসহ সিটি কর্পোরেশনের ভেতর অধিকাংশ সড়কেই এখন দেখা যাচ্ছে এই চিত্র।  

একাধিক সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করেছে অনেক আগেই। এসব সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো রাস্তার মাঝ বরাবর দণ্ডায়মান রয়েছে। ব্যস্ত এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচল করছে। 

এলাকাবাসী  জানান, এসব রাস্তায় ট্রাক মিনিবাস প্রাইভেটকারসহ ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চলাচল করে। বৈদ্যুতিক এ খুঁটিগুলো এখন সড়কের মাঝে থাকায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ খুঁটিগুলো। 

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দিলেও তারা এই খুঁটি স্থানান্তরের কোনো উদ্যোগ নেয়নি, তাই বাধ্য হয়েই সড়কের মাঝে খুঁটি রেখেই উন্নয়নকাজ করেছে সিটি কর্পোরেশন। দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সিটি এলাকার আঞ্চলিক সড়কে। ভাঙাচোরা সড়ক, সরু সড়কের কারণে একদিকে যেমন এলাকার উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, অপরদিকে সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি এই সড়ক সমপ্রসারণের মাধ্যমে উন্নয়নকাজ শুরু করেন। 

সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক সড়কগুলোর মধ্যে প্রায় সকল রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে সিটি এলাকায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। গাজীপুরকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়তে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। বিশেষ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়ককে ৩০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত সমপ্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

কিন্ত এই কাজে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি। ইতোপূর্বে গাজীপুর সিটির অধিকাংশ এলাকার সড়কগুলো ছিলো আট থেকে ১০ ফুট। আর পরিকল্পনা ছাড়াই পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ শহরজুড়েই নিজেদের ইচ্ছেমতো খুঁটি স্থাপনের ফলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। 

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনের কারণেই এ দুর্ভোগে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সড়কের নির্মাণকাজ শুরুর আগেই তাদেরকে চিঠি দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরের জন্য বলেছি। তবে তারা এ বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত আমরা সড়কের উন্নয়নকাজ করছি, এতে অনেক সড়কের মাঝে খুঁটি রেখেই নির্মাণকাজ করতে হয়েছে। এতে যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে আবার একসময় খুঁটি অপসারণ করলে সড়ক পুনরায় খনন করতে হবে। এতে সড়কের উন্নয়ন ব্যয় বেড়ে যাবে।  এ জন্য মেয়র বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা ও সমন্বয় কামনা করেন। 

এ বিষয়ে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জে সি পাল আমার সংবাদকে জানান, সড়কপথ রেলপথ সকল কাজের প্রকল্পের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ খুঁটি স্থানান্তরের প্রকল্প থাকে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা প্রশস্ত করার কোনো প্রকল্প ছিলো না। আমাদের পক্ষ থেকে একাধিকবার কথা বললেও সিটি কর্পোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ইতোপূর্বে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার কাজ করেছে ঠিকাদাররা। এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন বিলের টাকা না দেয়ায় তারা টাকার জন্য ঘুরছে। এ ছাড়া রাতের বেলা সিটি কর্পোরশনের লোকজন পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙছে বলে তিনি দাবি করেন। 

অপরদিকে পাঁচ বছর আগে সিটি কর্পোরেশন পল্লী বিদ্যুতকে চিঠি দিয়েছে কিন্তু কোনো ধরনের চিঠি পল্লী বিদ্যুৎ পায়নি বলে অস্বীকার করেন এবং পল্লী বিদ্যুৎ থেকে একাধিকবার চিঠি সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। শহরজুড়ে সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকার কারণে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। হতে পারে বড় ধরনের ট্রাজেডি। তাই পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ দিয়ে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।