Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

কাটছে না দীর্ঘসূত্রতা

মাহমুদুল হাসান 

অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


কাটছে না দীর্ঘসূত্রতা

১০ মাসে মাত্র দুই কোটি মানুষ পেয়েছে দুই ডোজ টিকা। টিকাদানের এটাই হলো বাস্তবতা। বিভিন্ন দেশে যখন বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা হচ্ছে তখন দুই ডোজ টিকা নিশ্চিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ তুলনামূলক অন্যান্য দেশের আগে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ প্রতিষেধক প্রয়োগ শুরু হয়।

টিকায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকলেও মজুত কম থাকায় তেমন গতি নেই। দেড় কোটি ডোজ টিকার মজুত থাকলেও তার চেয়ে বেশি মানুষ রয়েছে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায়। 

অন্যদিকে এক কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ নিবন্ধন করে টিকার জন্য দিনক্ষণ গুনছে। নিবন্ধনের পর মাস পেরিয়ে গেলেও মুঠোফোনে মিলছে না এসএমএস। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই বছরেও দেশের নাগরিকদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে কি-না সে বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ও জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপের (নাইট্যাগ) সদস্য অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘কোভিড-১৯ টিকাদানে আরও গতি দরকার। এভাবে টিকা দিলে দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। ততদিনে হয়তো এর রিলিভেন্স নাও থাকতে পারে। যদি সত্যি আমরা উপকার পেতে চাই তাহলে অতি দ্রুত সময়ে টিকা দিতে হবে। 

মাসে দুই থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা দিলে তাহলে হয়তো নতুন করে কোনো করোনার ওয়েভ (সংক্রমণের ঢেউ) এলে পরিত্রাণ পেতে পারি। বিশৃঙ্খলভাবে টিকা দিয়ে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। দ্রুত বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা এনে সবাইকে টিকার আওতায় আনা শেষ করতে হবে। তাহলেই টিকার সুফল মিলবে।’ 

টিকা প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক এবং এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, টিকার রেজিস্ট্রেশন অনেক বেশি। ধরুন, কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রতিদিন তিনশ, পাঁচশ ডোজ টিকাদানের ক্যাপাসিটি থাকে। এখন সেই কেন্দ্রে যদি ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টিকার নিবন্ধন করেন তাহলে তো টিকাদানের সিরিয়ালটা লম্বা হয়ে যায়। এ জন্যই এসএমএস আসতে একটু সময় লেগে যায়।’ টিকার আরও চালান এলে এই সমস্যাটা কেটে যাবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে গত ১০ মাসে কেনা, উপহার ও টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজারের দুই ডোজের টিকা এসেছে সাত কোটি ৭২ লাখ ৭২ হাজার ৪২০। এদিকে গত সোমবার বিকেল পর্যন্ত পাঁচ কোটি ৬৬ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬৭ জন করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। 

এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৯ জন এবং পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে আট লাখ ১৯ হাজার ১১৮ জন নিবন্ধন করেছে। নিবন্ধন শেষে টিকার অপেক্ষায় আছে আরও এক কোটি ৫৭ লাখ ৬২ হাজার ৭২১ জন।

 স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইস বিভাগের তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত দেশে ছয় কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৩ ডোজ করোনার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে চার কোটি ছয় লাখ ২৭ হাজার ৬৮৮ জন। 

আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে দুই কোটি আট লাখ ৬২ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড প্রয়োগ করা হয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ১৩০ ডোজ। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ছয় লাখ ছয় হাজার ১৮৭ ডোজ। চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে চার কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৫ ডোজ। আর মডার্নার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৫২ লাখ চার হাজার ১১১ ডোজ।