Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বিচারপ্রার্থীর ভোগান্তির শেষ নেই

শরিফ রুবেল ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


বিচারপ্রার্থীর ভোগান্তির শেষ নেই

মো. ইদ্রিস হোসেন। বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নে। প্রতিবেশীর সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল ইদ্রিসের। পরে প্রতিকার চেয়ে ২০১৯ সালে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন তিনি। 

তবে দুই বছরেও মামলার শুনানি হয়নি। ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হওয়ার পর দেখেন আইনজীবীরা আদালত বর্জন করছেন। তারপর থেকেই আদালতে আসা-যাওয়া চলছে। কিন্তু আদালত চালু হয়নি। ধার্য তারিখে আসেন আর ফিরে যান। কিন্তু বিচার কাজের কোনো অগ্রগতি হয় না। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। 

এ বিষয়ে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, আদালতে এসে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। বিচারক আইনজীবীদের দোটানায় ভুগতে হচ্ছে। আদালত বিচারপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধান করেন। এখন আদালতেই সমস্যা লেগে আছে, এটা সমাধান করবে কে? আমরা যদি এখানেও ঝুলন্ত অবস্থায় থাকি, তাহলে আমরা কোথায় যাবো। শুধু দেলায়ার হোসেনই নয়, প্রায় এক বছর ধরে আদালত বন্ধ থাকায় সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা। যেন দেখার নেউ নেই। অসংখ্য মামলার আসামি রায়ের অভাবে জেল-হাজতে রয়েছেন। বিচার পাচ্ছে না। এক প্রকার  বিনাবিচারে অনেক আসামি জেল হাজতে আছে। 

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর বাগেরহাট অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এবং সিনিয়র সহকারী জজ আদালত-সদর আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ এনে আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় আইনজীবী সমিতি। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে ওই দুটি আদালতের কার্যক্রম। ফলে দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও সুরাহা মেলেনি। তবে বিরোধ মিটিয়ে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী।

বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, আদালত চলাকালীন দুইজন বিজ্ঞ বিচারক আইনজীবীদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য আদালত কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিনের সময় দিয়েছিলাম। কোনো সমাধান না হওয়ায় আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আদালত বর্জন করেছি। 

তিনি আরও বলেন, অবিচারক সুলভ আচরণ ও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আদালত বর্জন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটি আদালত এক বছর ধরে বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীদের অবর্ণনীয় ক্ষতি হচ্ছে।  দ্রুত দুই বিচারককে প্রত্যাহার করে সৎ ও নিষ্ঠাবান বিচারকদের পদায়নের দাবি জানান তিনি।  

আইনজীবী সমিতির সদস্য শিকদার ইমরান বলেন, ‘আমার এক মক্কেলের হত্যামামলায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিলো ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে। যদি নিষ্পত্তি করতে সম্ভব না হয় তাহলে তাকে উপযুক্ত আদেশ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বছরকে বছর পার হলেও কোনো যুক্তিতর্ক না হওয়ায় বিনাবিচারে অভিযুক্ত এখনো জেলে রয়েছেন।’ 

বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী জানান, ইতোমধ্যে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। বার এবং বেঞ্চে আলাপ হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে। 

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, পুরাতন কোর্টের আদালত ভবনের জমি নিয়ে বাগেরহাট আইনজীবী সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। সেই থেকে আদালত বর্জন রয়েছে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল এসেছিলেন। ত্রিপক্ষীয় সমন্বয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। পরবর্তীতে কি সিদ্ধান্ত হয় তা এখনো জানা যায়নি।