Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সাক্ষ্য আইন সংশোধন কবে

নভেম্বর ১৮, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম


 সাক্ষ্য আইন সংশোধন কবে

প্রায় দেড়শ বছর আগের সাক্ষ্য আইনে চলছে বিচারকাজ। পুরোনো আইনে গলদে ভরা। নানা দাবি ও আন্দোলনের পরও দীর্ঘদিনেও এ আইন সংস্কার করা হয়নি। তবে সম্প্রতি সাক্ষ্য আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হবে বলা হলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের একটি ধারা সংশোধনের ওপর জোর দিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা। 

তারা বলেছেন, এ ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এদিকে গেলো সপ্তাহে ‘যৌন অপরাধের অভিযোগকারী নারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা’ ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের এমন বিধানসহ দুটি ধারা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। মাবধিকারকর্মীরা বলছেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা নারীর মানবাধিকারের বিরোধী। তাই এটি বাতিলের প্রস্তাব হয়েছে। এ উদ্যোগ নারীর মর্যাদাহানি রোধ করবে।

জানা গেছে, দেড়শ বছর আগে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা অনুসারে, ‘কোনো লোক যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি অপরাধে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।’  

অন্যদিকে ১৪৬(৩)-এ বলা হয়েছে, ‘তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাস যোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এরূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে অথবা তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবুও অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।’ এই দুই ধারায় ধর্ষণসহ যৌন হয়রানির শিকার নারীকে দুশ্চরিত্রা দেখানো যায়। এতে করে অভিযোগকারিণী পুনরায় অপদস্থ ও হয়রানির হয় বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘বিচারপ্রার্থীকে আঘাত করে, সম্মানহানি করে কিংবা মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করে এমন আইন থাকা উচিত নয়। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কাউকে হেয় করার মতো কোনো কথা কোনো আইনে থাকা একেবারেই অনুচিত। আমি বলব এ ধরনের আইন সংশোধন করা হোক।’ 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু  বলেন, ‘দেড়শ’ বছরেরও আগের ব্রিটিশ আমলের আইন বর্তমান সময়ের উপযোগী নাও হতে পারে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ও ১৪৬(৩) ধারা দুটি এরই উদাহরণ। এখানে বিচার শেষ না হতেই একজনকে চরিত্রহীন বলে দেয়া যাচ্ছে। এটা অবশ্যই বাতিল করতে হবে। সমাজের এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আইনের এমন ধারায় কোনো বিচার চলতে পারে না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবি বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে আইনের চোখে সবাই সমান। কাউকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয় এমন আইন থাকতে পারে না। বিচার চলাকালে কোনো অবস্থায়ই কাউকে দুশ্চরিত্রা বলা সংবিধান পরিপন্থি। তাই এমন ধারা দ্রুত বাতিল করা উচিত।’ ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিদ্যমান ধারায় ১৫৫(৪) এবং ১৪৬(৩) দুটি বিধান বাতিল চেয়ে রোববার রিট করা হয়েছে। রিটে ‘যৌন অপরাধের অভিযোগকারী নারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা’ -১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের এমন বিধানসহ দুটি ধারা বাতিল চাওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড (ব্লাস), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং নারীপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার সারা হোসেন রিটটি করেন। রিটে ১৯৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ও ১৪৬(৩) ধারা কেন অসাংবিধানিক ও বাতিল করা হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। 

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘এ ধারাগুলোতে বলা আছে একজন নারী যদি যৌন অপরাধের অভিযোগকারী হয় তাহলে আদালতে তার চরিত্র এবং ইতিহাস নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা যায় ও জেরা করা যায়। অনেক দিন ধরে এগুলো বাতিলে আন্দোলন হয়েছে। এখন হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছি। আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে।’ 

তিনি জানান, এর আগে বলা হয়েছিল সাক্ষ্য আইনের ওই দুই ধারা সংশোধন করা হবে; কিন্তু সেটি করা হয়নি বলে রিট আবেদন করা হয়। 

রাজধানীর বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়ে আদালত তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। 

ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি। অহেতুক তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায় তা না নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’