Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

দালালের আখড়া মিটফোর্ড-ঢামেক

নভেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:২০ পিএম


দালালের আখড়া মিটফোর্ড-ঢামেক

দেশের স্বাস্থ্য খাতের বড় একটি অংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকেই সেবা নেন। চিকিৎসার জন্য চোখ ধাঁধাঁনো বেসরকারি অসংখ্য হাসপাতাল গড়ে উঠলেও সাধারণ মানুষের ভরসা এখনো সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপরই। 

নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, এমনকি অনেক সময় উচ্চবিত্তেরও শেষ ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ) ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপালতাল (এসএসএমসিএইচ)।  কিন্তু নিম্নবিত্তদের শেষ ভরসারস্থল এসব সরকারি হাসপাতাল হলেও এখানেও তারা দালালদের খপ্পরে পড়ছেন প্রতিনিয়ত।

 মিটফোর্ড হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন প্রায় তিন হাজারের অধিক রোগী সেবা নিতে ভিড় জমান এ হাসপাতালের বহির্বিভাগেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি। চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক কম থাকায় রোগীদের দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ লাইনে। এসব লাইনের ফাঁকেই রয়ে যায় শত শত দালাল। দুইশ টাকায় মিলে অগ্রিম সিরিয়াল। 

অনুসন্ধান বলছে, হাসপাতালে আসা এসব রোগীর সরকারি হাসপাতালের চেয়েও কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খ্যাতনামা অধ্যাপকদের দিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সুব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় দালালচক্রের সদস্যরা। 

সরেজমিন দেখা যায়, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের প্রতিনিধিরা ঢামেক ও মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায়। রোগীরা কোন ক্লিনিকে যাবে, তা একশ্রেণির অসাধু চিকিৎসক ঠিক করে দেন। ক্লিনিক ও প্রতিনিধির নাম এবং ফোন নম্বর লিখে দেন তারা। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রচলিত ফির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফি আদায়ের অভিযোগও রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। 

রাজধানী ঢাকাতে সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে— ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।  কিন্তু এখানে থেমে নেই দালালদের তৎপরতা। বিভিন্ন সময় দলালচক্রের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও থেমে নেই এসব চক্রের রমরমা বাণিজ্য কৌশল। 

অগ্রাধিকারভিত্তিক ওয়ার্ডের ব্যবসা, বেডের ব্যবসা, অপারেশন করানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব কিছুতেই সক্রিয় দালালচক্রের এসব সদস্য। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন  হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেও চুক্তিভিত্তিক কাজ করে এসব দালাল।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের     আনাচে-কানাচে প্রকাশ্যে দালালচক্রের নারী-পুরুষ সদস্যরা ঘোরাঘুরি করে। এদের কারো উদ্দেশ্য লাইনে না দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের সাথে দেখা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা, কারো নির্দিষ্ট সিরিয়াল ভেঙে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, আবার কেউ বা হাসপাতাল থেকে রোগীদের কম খরচে চিকিৎসার কথা বলে পাশের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। 

এদের মধ্যে আবার অনেকে আছে যারা, হাসপাতালের ওয়ার্ডে ও কেবিনে ভর্তির জন্য তদবির করে। এসব চক্রের প্রধান টার্গেট গর্ভবতী মায়েরা। উন্নত সেবার প্রলোভন দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এসব গর্ভবতী মায়েদের নেয়া হয় নিকটস্থ বেসরকারি হাসপাতালে। 

অভিযোগ রয়েছে, স্বাভাবিকভাবে প্রসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে এমন রোগীকেও কৌশলে সিজার করানো হচ্ছে। যারা তাদের ফাঁদে পা না দেন তাদের জন্য শুরু হয় বেড বাণিজ্যসহ সস্তা আন্তরিকতা।

হাসপাতালের দালালচক্রের বিষয়ে প্রশাসন কি পদক্ষেপ নিচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপালাতের পরিচালক কাজী মো. রশিদ উন নবী আমার সংবাদকে জানান, ‘সরকারি হাসপাতালগুলো স্বল্পমূল্যে সেবা দিচ্ছে। আমাদের (এসএসএমসি) একটি পৃথক টিমও কাজ করছে। তারপরও অগোচরে দালাল সিন্ডিকেট তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে। আমাদের হাসপাতালে ইনডোরে এক হাজার ৩০০ বেডের মাঝে প্রায় এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ বেড অবধি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। 

এছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ মিলে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজারের অধিক রোগী সেবা নিতে আসেন। এত রোগীর ভিড়ে দালালদের শনাক্ত করাটা কিছুটা কঠিন। তবে আমি নিজেই এ বিষয়ে মনিটরিং করছি। দালালদের উৎপাত অতি মাত্রায় বেড়ে গেলে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম উন্নত করার চেষ্টা করছি। করোনা ও ভ্যাকসিনের জন্য প্রচুর রোগী ভিড় করছে প্রতিনিয়ত। সেবা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হলেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হকের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।