Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

এইডস প্রতিরোধে বিনামূল্যে ওষুধ-চিকিৎসা সেবা মিলছে

মাহমুদুল হাসান

নভেম্বর ২৪, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম


এইডস প্রতিরোধে বিনামূল্যে ওষুধ-চিকিৎসা সেবা মিলছে

ভয়াবহভাবে না ছড়ালেও দেশে এইডস রোগী কম নয়। প্রায় সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি রোগী রয়েছে। তবে আশঙ্কার বিষয় এখনো প্রায় অর্ধেক রোগী শনাক্তের বাইরে। সচেতনতার অভাব আর সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে চিকিৎসা নিতে আসে না। অথচ সরকার এইডস মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর। দেশে এইচআইবি এইডস শনাক্তের সক্ষমতা বেড়েছে। সম্ভাব্য জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। 

জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এইডস নির্মূল করতে হলে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্ততা খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে ২৮টি এইচআইভি শনাক্তকরণ ও কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করেছে। ১১টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। 

একই সাথে কোনো নবজাতক যেন এইডস আক্রান্ত না হয় সে লক্ষ্যে ১৩টি মা থেকে শিশুতে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ (পিএমটিসিটি) সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে সারা দেশে এইডস রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান ও এইডস প্রতিরোধে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

শনাক্তদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ রয়েছে ৩৭ শতাংশ। বিদেশফেরত রয়েছে ১৯ শতাংশ, শিরায় মাদক সেবনকারী রয়েছে ২৪ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া যৌনকর্মী এবং আক্রান্তদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছে। দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা শহরে আক্রান্ত বেশি রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশে ২৮টি এইচআইভি শনাক্তকরণ ও কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানীতে পাঁচটি, কক্সবাজার দুইটি, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বগুড়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে একটি করে সেন্টার রয়েছে। এদিকে আরও ১১টি এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার রয়েছে। এসব কেন্দ্রে এইনচআইভি-এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করা হয়। 

একই সাথে দাতা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন রাজধানীসহ দেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ছয়টি কম্প্রিহেনসিভ ড্রপ ইন সেন্টার চালু করেছে। সেখানেও চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, মৌলভীবাজার, যশোর ও কক্সবাজারে সরকার আরও ১৩টি মা থেকে শিশুতে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ (পিএমটিসিটি) সেন্টার চালু করেছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারের বেশি। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র অর্ধেক রোগী। শুধু ২০১৯ সালে এক বছরে শনাক্ত হয়েছিল ৯১৯ জন। এদের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছে। 

২০১৮-এর একটি সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। সেখানে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে কমপক্ষে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলা ও মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের অধিকাংশ বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। তাদের অধিকাংশকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের মতে, বিশ্বে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৫০০ জনেরই বয়স ১৫ বছরের নিচে। আক্রান্ত ৩২ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের নিচে, যার ২০ ভাগই নারী। আক্রান্তদের ৬১ ভাগ সাব-সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলে বসবাসকারী। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক লোক ৩৬ দশমিক ২ মিলিয়ন। 

মোট আক্রান্তের ১৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন নারী এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন শিশু। শুধু ২০১৮ সালে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন। এ সময় এইডস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার মানুষের। যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ছয় লাখ ৭০ হাজার এবং শিশু এক লাখ।