Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধীরগতি

মাহমুদুল হাসান

ডিসেম্বর ৬, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধীরগতি
  • লক্ষ্যমাত্রার আগেই ভাবনায় ষাটোর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ
  • দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র সাড়ে ২২ শতাংশ নাগরিক
  • লক্ষ্য এপ্রিলের মধ্যে ৮০ শতাংশ নাগরিককে টিকাদানের
  • নিবন্ধনের পর এখনো আগ্রহীদের অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হচ্ছে

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছে। ২১ মাসের লম্বা সংক্রমণ থেকে মুক্তির স্বপ্নে ফের দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। করোনার আফ্রিকান ধরন বিশ্বজুড়ে এখন আতঙ্কের নাম। বৈশ্বিক মহামারি এড়ানোর সুযোগ নেই।

 যদিও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো তবুও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে শনাক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। মানুষ ফিরতে চাইছে স্বাভাবিক জীবনে। উপেক্ষিত এখন স্বাস্থ্যবিধি। নয়া ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এখনই সীমান্ত বন্ধ কিংবা লকডাউনের পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

 তবে ভাইরাস প্রতিরোধে বিদেশ থেকে ফেরা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, রোগী শনাক্তরণ পরীক্ষার পরিধি বৃদ্ধি, সন্দেহভাজন ও বিদেশফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টান, শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসা ও টিকায় জোর দিচ্ছে সরকার। একই সুরে কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের পরামর্শ— ওমিক্রন মোকাবিলায় ভাইরাসটির প্রতিষেধক টিকা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। 

সরকার বলছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে টিকাদান ও স্বাস্থ্যবিধিতেই জোর দিচ্ছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪তম দেশ হিসেবে টিকাদান শুরু হলেও দীর্ঘ ১০ মাসের বেশি সময়ে মাত্র সাড়ে ২২ শতাংশ নাগরিক দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। অথচ সরকার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে আগামী বছর এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। 

এর মধ্যেই ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের বুস্টার ড়োজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের অনুমতি দিয়েছেন। আমাদের টিকার কোনো ঘাটতি হবে না। দ্রুতই আমরা ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করবো।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০’-এর সর্বশেষ তথ্য মতে, পয়লা জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯১  লাখ। তার মধ্যে মাত্র তিন কোটি ৪৫ লাখ ৫১ হাজার ৪০৮ জন নাগরিক দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত রোববার বিকেল পর্যন্ত সাত কোটি ৩৭ লাখ ৮২ হাজার ২৪৬ জন করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে সাত কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৮১২ জন এবং পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৪ জন নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধন শেষে টিকার অপেক্ষায় আছেন আরও ৮৭ লাখ ৬০১ জন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইস বিভাগের তথ্য মতে, গত রোববার পর্যন্ত দেশে ১০ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ৯৮ ডোজ করোনার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ছয় কোটি ৫০ লাখ ৮১ হাজার ৬৪৫ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন তিন কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৩ জন। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড প্রয়োগ করা হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪০ ডোজ। 

ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৭ ডোজ। চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে সাত কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৯১৬ ডোজ। আর মডার্নার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৫ ডোজ। দুই ডোজ টিকা নিয়েছে মাত্র তিন কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনার টিকাদান শুরু হয়। নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত গণটিকাদানের দুটি বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশে করোনার গণটিকাদানের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। 

এ কর্মসূচিতে এক দিনে ৭৫ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই দিন সারা দেশে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯২২ ডোজ টিকা দেয়া হয়। এর আগে গত ৭ থেকে ১২ আগস্ট একটি বিশেষ সমপ্রসারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল। তার প্রথম দিনেই ৩০ লাখের বেশি টিকা দেয়া হয়েছিল। ওই কর্মসূচির প্রথম দিনে গ্রাম, শহর, প্রায় সবখানেই মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।