আমিরুল ইসলাম
জানুয়ারি ৮, ২০২২, ০৬:৪০ পিএম
বাংলাদেশে অনুপস্থিত, নিরুদ্দিষ্ট, স্বীয় সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে দখল, তত্ত্বাবধান কিংবা ব্যবস্থাপনা করতে অযোগ্য বলে বিবেচিত ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গের সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান, ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করছে সরকার। যা বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি ) আইন ২০২১ নামে অভিহিত হবে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সেই ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পত্তি যিনি বাংলাদেশে অনুপস্থিত ও সন্ধানহীন, যিনি তার সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে দখল, তত্ত্বাবধান অথবা ব্যবস্থাপনা করতে অযোগ্য অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর যেকোনো সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে, সামরিক সংঘাতে লিপ্ত থাকা রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের যেকোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে গণ্য হবে।
এই আইনটি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের সকল পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে ঘোষিত সম্পত্তি সরকারের বরাবর ন্যস্ত হবে। আইনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো পরিত্যক্ত সম্পত্তির সম্পূর্ণ কিংবা আংশবিশেষ হস্তান্তর করেন অথবা ক্ষতি সাধন করেন, হস্তান্তরের অনুমতি প্রদান করেন, তাহলে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানার দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তবে জরিমানার পরিমাণ আইনে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়নি। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে কৃত আইন প্রণয়নের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সালেহ উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, আইনটি খসড়া আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখনো খসড়া পর্যায়েই রয়েছে। বাকি কার্যক্রম চলমান বলতে পারেন। এই আইনে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সমর্পণ করা সম্পত্তি প্রয়োজন মতো নিজেরা ব্যবহার করতে পারবে। সরকারপ্রধানের পূর্বানুমতিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তি সংস্থার অনুকূলে হস্তান্তর করা যাবে। হস্তান্তরিত সম্পত্তি ব্যক্তি অথবা সংস্থার অনুকূলে রেকর্ড সংশোধন করা যাবে।
এই আইনের বিধান অনুসারে তা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, এবং হস্তান্তর অথবা অন্য কোনোভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আইনটির খসড়া তৈরি করে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার একর পরিত্যক্ত সম্পত্তি রয়েছে। তার মধ্যে শুধু ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনেই রয়েছে পাঁচ হাজার একর।
এছাড়া শিল্প, বাণিজ্য, তথ্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ মোট আটটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে এক হাজার একর। এসব সম্পত্তি রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশ এবং বিভিন্ন সময় জারি করা পরিপত্র বলে এতদিন পরিচালিত হয়ে আসছে।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর যেকোনো সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে অথবা সামরিক সংঘাতে লিপ্ত রাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় এলাকায় অথবা আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ও সংঘবদ্ধ কোনো কোম্পানিও এই আইনের আওতায় আসবে। সম্পত্তি স্থাবর কিংবা অস্থাবর যাই হোক তা এই আইনের আওতায় আসবে। অর্থাৎ শেয়ার, স্ক্রিপ, স্টক, বন্ড, ডিভেঞ্চার স্টক, কিংবা কারো অনুরূপ প্রকৃতির বিপণনযোগ্য সংস্থাবদ্ধ ও সরকারি জামানত এই আইনের আওতায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে গণ্য হবে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা এবং হস্তান্তর অথবা অন্য কোনোভাবে নিষ্পত্তির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সরকার যে ধরনের প্রয়োজন মনে করবে সেই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এই আইন জারি অথবা আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালা জারির সঙ্গে সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওপর নিরঙ্কুশভাবে ন্যস্তকৃত পরিত্যক্ত সম্পত্তি খাস করে তা ১নং খতিয়ানভুক্ত করতে হবে। একই পদ্ধতিতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ওইসব মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ড করতে হবে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় সরকার এক বা একাধিক বোর্ড গঠন করতে পারবে। শর্তসাপেক্ষে পরিত্যক্ত সম্পত্তির রিসিভার নিযুক্ত করতে পারবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবসা চালু করতে পারবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তির অনাদায়ী অর্থ আদায়ে কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি সংক্রান্ত যেকোনো দলিল বা চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি অথবা তা থেকে সৃষ্ট বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ কোনো সুবিধা, স্বার্থ লভ্যাংশ কিংবা অধিকার বিক্রিয় বন্ধক, হস্তান্তর বা অন্য কোনো উপায়ে নিষ্পত্তি করতে পারবে। এই আইনের বিধান প্রতিপালন ছাড়া কোনো ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি কোনোভাবে হস্তান্তর বা ওই সম্পত্তির ওপর দায় সৃষ্টি করতে পারবেন না।
খসড়ায় বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত সম্পত্তি কারো দখলে না থাকলে তা জেলা প্রশাসক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে দখলে নেবেন। চিহ্নিত পরিত্যক্ত সম্পত্তি জেলা প্রশাসক দখল অব্যাহত রাখবেন। যদি পরিত্যক্ত সম্পত্তি কোনো ব্যক্তির দখলে থাকে এই আইন কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে তা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর সমর্পণ করবে।
সাত কর্মদিবসের মধ্যে কেউ পরিত্যক্ত সম্পত্তি জেলা প্রশাসক কিংবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সমর্পণ না করলে তাকে পরবর্তী সাত কর্মদিবস সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হবে এবং কোনো যৌক্তিক দাবি পেশ করতে না পারলে জেলা প্রশাসক অথবা মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ওই সম্পত্তির দখল গ্রহণ করবেন।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি কোনো কোম্পানির শেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হলে সে ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা হবে তা আইনটিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকার ওই শেয়ারের মালিক হবে। কোম্পানি আইন ১৯১৩ এর বিধানের আলোকে সরকার ওই শেয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধান করতে পারবে। সরকারের এই আইন বলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বরাদ্দকৃত, ইজারাকৃত, কোনো ব্যক্তির অধিকার, দখল অথবা পরিচালনায় রাখার দায়িত্ব এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তির যেকোনো বরাদ্দ বাতিল করতে পারবে।
এছাড়া যেকোনো ইজারা বিলুপ্ত করতে এবং চুক্তির শর্তাদি পরিমার্জন করতে পারবে। সরকারের চাহিদামাত্র কোনো পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারের বরাবর সমর্পণ করতে ব্যর্থ হলে সরকার যেরূপ নির্ধারণ করবে সে রূপ পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে উচ্ছেদ করে দখল গ্রহণ করতে পারবে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি কল্যাণের উদ্দেশে ধর্মীয় কিংবা দাতব্য প্রকৃতির ট্রাস্ট ও ওয়াকফ সম্পত্তি হলে সরকার নতুন ট্রাস্টি অথবা মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত করতে পারবে।
যতদিন মোতাওয়াল্লি বা ট্রাস্টি নিযুক্ত না হবে ততদিন ওই সম্পত্তি সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকবে। ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারের কাছে সমর্পণের নোটিস পাওয়ার পর ওই আদেশের বিরুদ্ধে দেশের কোনো আদালতে মামলা করা চলবে না। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশ জারির আগে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া থাকলে তাও বাতিল হয়ে যাবে।
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতি সাধন করেন তাহলে তিনি সরকার ধার্যকৃত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। আইনের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো পরিত্যক্ত সম্পত্তির সম্পূর্ণ কিংবা অংশবিশেষ হস্তান্তর করেন অথবা ক্ষতি সাধন করেন, হস্তান্তরের অনুমতি প্রদান করেন তাহলে তিনি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানার দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তবে জরিমানার পরিমাণ আইনে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়নি। সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি কেউ পরিত্যক্ত সম্পত্তি সমর্পণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানার দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উল্লিখিত অপরাধসমূহ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং প্রতিকারের জন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকার আদালতে মামলা করতে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচার করতে পারবে। এই আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি আদালতে কোনো মামলা করতে পারবেন না। অর্থাৎ আইনে তাদের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।
এই আইনে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সমর্পণ করা সম্পত্তি প্রয়োজন মতো নিজেরা ব্যবহার করতে পারবে। সরকার প্রধানের পূর্বানুমতিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তি সংস্থার অনুকূলে হস্তান্তর করা যাবে। হস্তান্তরিত সম্পত্তি ব্যক্তি অথবা সংস্থার অনুকূলে রেকর্ড সংশোধন করা যাবে। এই আইনের অধীনে সম্পাদিত কোনো কার্যক্রম অথবা গৃহীত ব্যবস্থা অথবা আদেশের বিষয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এই আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতোপূর্বে জারি করা পরিত্যক্ত সম্পত্তি সংক্রান্ত সকল অধ্যাদেশ, আদেশ, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়ে যাবে।