Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বেড়েছে ভোট ফিরেছে শৃঙ্খলা

রফিকুল ইসলাম 

জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০৭:১৫ পিএম


বেড়েছে ভোট ফিরেছে শৃঙ্খলা

সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। কেমন হবে ভোটের পরিবেশ, ভোট দিতে পারবেন তো ভোটারারা? হাজারো প্রশ্ন। দলীয় বিভেদ চরমে। নৌকার জয়  নিশ্চিতে সব মিলিয়ে অগ্নিকাণ্ডেরর মধ্যে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার গল্পটা খুব সহজ ছিল না। 

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোরতা সেটা প্রমাণ করেছে। যেখানেই দলীয় বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হয়েছে, সেখানেই কঠোরতায় যেমন শৃঙ্খলা ফিরেছে, বেড়েছে ভোট। নির্বাচনি প্রচারের প্রথম দিন থেকে শেষ অবধি সবগুলো সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির গঠিত টিম নগরজুড়ে চষে বেরিয়েছে, যাদের সাথে ছিলেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। যার কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভেদে জড়াতে পারেননি আর কোন্দলের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি বিরোধী পক্ষ। আর এতে করেই সহজ জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী। নৌকার হয়ে নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নেয়া একাধিক নেতা এমনটাই মনে করেন। 

সুজিত রায় নন্দী। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নৌকায় ভোট চেয়ে উঠান বৈঠক, কর্মিসভা, ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা সভা, পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় ও নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সুজিত রায় নন্দী। তার ছোট ছোট প্রচেষ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে নৌকার ভোট। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয় অর্জন করেছেন। 

নৌকার বিজয় নিয়ে সুজিত রায় নন্দী বলছেন, এ বিজয় গণতন্ত্রের বিজয়। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সুফল।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ওয়ার্ডভিত্তিক টিম গঠন করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তারা। নির্বাচনি আলোচনা সভা, পথসভা, শোডাউন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মীদের বৈঠক ও নৌকার লিফলেট বিতরণ। নির্বাচনি এই সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন খোদ যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুল হোসেন খান নিখিল আমার সংবাদকে বলেন, ‘নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, শান্তির প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। সেই প্রতীকের পক্ষে কাজ করাই যুবলীগের আদর্শ। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ভোটারের বাড়ি বাড়ি গেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সালাম পৌঁছে দিয়েছেন, উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। নৌকা প্রতীকের বিজয়ের জন্য যুবলীগ সব সময় ঐক্যবদ্ধ।’

নির্বাচনের শুরু থেকে সিটির বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে নৌকার পক্ষে বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে ছিলেন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। 

নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগে গত রোববার বিলুপ্ত করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর, আওতাধীন সকল থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি। নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করা নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

গত ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ ছিল ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসই নোমান আমার সংবাদকে বলেন, স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচনে সবসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সেই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটিতে কাজ করেছে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল ওয়ার্ড ভিত্তিক নির্বাচনি টিম। তারা স্থানীয় ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

সমীর চন্দ্র আমার সংবাদকে বলেন, ‘নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। নারায়ণগঞ্জবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে তা আবার প্রমাণ করেছেন। এই জয়ের মধ্যে নিয়ে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’ 

নৌকার পক্ষে স্থানীয় ভোটারের কাছে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী মৎসজীবী লীগের নেতাকর্মীরা। মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়ীদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্করের নেতৃত্বে নৌকার ভোট চেয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। 

জানতে চাইলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শফিউল আলম শফিক বলেন, ‘নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছি। সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রতি পৌঁছে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে আওয়ামী মৎসজীবী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাতী লীগ এবং নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মীরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের আগে দলের অভ্যন্তরীণ সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে অনেকটাই বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। তবে সৃষ্ট ওই সকল দলীয় সমস্যা শক্ত হাতে সামাল দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের নেতৃত্বে গঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনি টিম। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করেছেন নৌকার মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। নানক-আজমের নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব ভুলে শেষ মুহূর্তে নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে নেমেছে কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা। 

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া,  প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি-বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা নৌকায় ভোট চেয়ে উঠান বৈঠক, কর্মিসভা, ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা সভা, পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় ও নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 

কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন কৌশল নির্ধারণে খুশি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। তারা বলছেন, প্রার্থীর ক্লিন ইমেজ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর পরিশ্রমের সুফলই নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই আমার সংবাদকে বলেন, নৌকার বিজয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের প্রচেষ্টায় দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন।   

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘অশুভ রাজনৈতিক শক্তি যতই শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে না কেন  অশুভ শক্তিকে কখনো দেশের জনগণ মেনে নেয় না, সমর্থন করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের মধ্যে দিয়ে একটি শুভ রাজনৈতিক শক্তি বিজয় হয়েছে। এ বিজয় জনসাধারণের বিজয়, এ বিজয় নারায়ণগঞ্জবাসীর বিজয়, এ বিজয় জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকার বিজয়।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং উৎসবমুখরতা সুস্পষ্টভাবে গণতন্ত্রের বিজয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বছরের শুরুতেই একটি বড় নির্বাচন ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার এ বিজয়।’