Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চৈতির মৃত্যু ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬, ১২:১৭ পিএম


চৈতির মৃত্যু ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

জয়নুল আবেদীন: মেয়েটির নাম চৈতি রায়। বাবা রবীন্দ্রনাথ রায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। ১৭ ফেব্রুয়ারী ছিলো চৈতির ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। চৈতি তার বাবা মায়ের দুই কন্যার মধ্যে প্রথমা। ভিকারুননেসা নূন স্কুল থেকে জে.এস.সি পরীক্ষায় পাস করেছে। জিপিএ ছিল ৪.৬০। তার ইচ্ছা ছিল নবম শ্রেণীতে গিয়ে সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে। কিন্তু বাধ সাধলো তার জে.এস.সি ফলাফল। চৈতির মৃত্যুর পর ভিকারুননেসা নূন এর অধ্যক্ষ খোলামেলা ভাবেই বললেন যে, চৈতির যে জিপিএ আছে তাতে তাকে বিজ্ঞান দিতে গেলে এরকম আরও অন্তত ১ হাজার শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান দিতে হবে যা কর্তৃপক্ষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। ফলে চৈতির ভাগ্যে পড়ে ব্যবসায় শিক্ষা যা সে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তার প্রতিষ্ঠানের বিধান হচ্ছে বিজ্ঞান পেতে হলে জে.এস.সি তে জিপিএ ৫ থাকতে হবে।

মেয়ে বিজ্ঞান পায়নি বলে চৈতির বাবা বা তার পরিবারের অন্য কেউ চৈতিকে নেতিবাচক কোন কথাই বলেনি, বরং বাবা মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন- তুমি ডাক্তার হলে তো আর সচিবালয় পর্যন্ত যেতে পারবে না; সচিব হতে পারবে না। বাণিজ্য বিভাগে পড়লে তুমি সচিব পর্যন্ত যেতে পারবে। পড়। কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু এ ছোট্ট মেয়েটির ভেতরে অভিমান আর ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। তার দুঃখ লাগে, তার অমুক বন্ধবী, অমুক বান্ধবী বিজ্ঞান পেয়েছে। তারা ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর সে হতে পারছে না। অবশেষে সে তার এ ছোট্ট মনের কোণে জমা স্তুপীকৃত অভিমান আর ক্ষোভের ইতি টানল গত ২০ ফেব্রুয়ারী। পরদিন তার বাবার অফিস থেকে পিকনিকে যাওয়ার কথা, চৈতিরও বাবার সাথে পিকনিক যাওয়ার কথা ছিল। তার বাবা রক্ত চাপের জন্য যে ঔষধটা সেবন করেন সে সেই ঔষধটাই যোগাড় করেছে এবং তার বাবার ভাষ্যমতে চৈতি কমপক্ষে ৩০টি ট্যাবলেট খেয়েছে। তাকে নিয়ে সরকারী বেসরকারী নানা হাসপাতালে ছুটাছুটি করেও শেষ রক্ষা হয়নি। না ফুটিতেই ঝরে গেলে ধরার কানন থেকে আর একটি ফুল।

কিন্তু কেন? দায়ী কে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? বাবা না কি সরকার? না কি চৈতি নিজেই? না, সরকারী পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা না বাড়ানো এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনাই চৈতিদের স্বপ্নকে চিতার আগুনে পোড়ানোর জন্য দায়ী। বঙ্গবন্ধু যে সময় শাসন ক্ষমতা হাতে নিলেন তাঁর নিজের চেয়ারটাও তো ছিল না। তা তাঁকে তৈরী করে নিতে হয়েছে। তাঁর টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানীরা। সম্পূর্ণ যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশ। দেশে কল কারখানা নেই, রাস্তাঘাট নেই, বিদ্যুৎ নেই, বিমান নেই, ব্যাংক বীমা, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবই বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত। সে অবস্থায় জিরো থেকে তাঁকে সব কিছু করতে হয়েছে। সে সংকটপূর্ন মুহর্তে ৭২ সালে তিনি ১১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ৪৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেন। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সরকারী করণ করেন। এ পর্যন্ত যতবার সরকার বদল হয়েছে, রাষ্ট্রপতি হিসাবে এ পর্যন্ত যতজন শপথ নিয়েছেন প্রত্যেক সরকারের আমলে যদি সেই অনুপাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী হতো তাহলে কি আজ শিক্ষা ব্যবস্থার এ বেহাল দশা হতো? সিট নাই, ভর্তি করা যাবে না- এসব কথা শুনতে হতো? ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু ৩৭১৭২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করণ করেন। আর আজ ২০১২ সাল নাগাদ ৩৭৬৭২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর পরে গত ৩৭ বছরে মাত্র ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করণ করা হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশে যদি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সরকারী করণ করতে পারেন, পরবর্তী প্রত্যেক সরকার দুই ক্লাস দুই ক্লাস করে সরকারী করণ করলেও তো আরো বহু বছর আগে এদেশে মাস্টার্স পর্যন্ত সরকারী হয়ে যেত। সারা জীবন ধরে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা পোষণকারী শিক্ষার্থীকে ইসলামের ইতিহাস বা দর্শন পড়তে হতো?

দু'চোখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নাঞ্জন মেখে ছিল যে চৈতি তাকে কি এভাবে আত্মহুতি দিতে হতো? (আমি চৈতির আত্মতহত্যাকে সমর্থন দিচ্ছি না) বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যা অধ্যয়নে আগ্রহী, কম্পিউটার বিজ্ঞান কিংবা অর্থনীতিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীকে হয়তবা চান্স না পেয়ে ফিরে আসতে হয়, না হয় তার অপছন্দের একটা বিষয় নিয়ে পড়তে হয়। অপছন্দের বিষয় পড়ার মানে হচ্ছে পড়াশোনাটা শুরুই হচ্ছে বিমর্ষ মনে। তখন আর নিজের কোন উৎসাহ-উদ্দীপনা-মনবল থাকে না। নিজেকে সমর্পন করে ভাগ্যের উপর। ভাগ্যের কাছে আত্ম সমর্পন। এক সময়কার তুখোর চৌকস ছাত্র, ভাগ্য বাতাসে তাড়িত হয়ে অজানা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যেতে থাকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সরকারী পর্যায়ে কেন প্রতিষ্ঠা হয়নি? প্রত্যেক বাজেটেই আমরা শুনি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সে অগ্রাধিকারের সুফল কি? একটা স্বাধীন দেশে বার রকম শিক্ষা ব্যবস্থা কেন? সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম, ইংলিশ ভার্সন, বাংলা মিডিয়াম, এম,পি,ও ভুক্ত, এম,পি,ও বহির্ভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ। এছাড়াও রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সেখানেও একাধিক ধারা-উপধারার শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায় এবং ইংলিশ মিডিয়ামের মান নির্ধারণ হয় টাকার অংকে। যে প্রতিষ্ঠান যত ব্যয়বহুল সে প্রতিষ্ঠান তত ভাল। অনেকগুলি তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর ভর্তির ফি ৪০ /৫০ হাজার টাকা। তাহলে আর একটু উপরের ক্লাস গুলোতে ভর্তির ফি কত হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। অথচ এসব স্কুলেই এক একজন শিক্ষক বেতন পান লজ্জাজনকভাবে কম। মালিক পক্ষই এর সিংহ ভাগ অর্থ পকেটস্থ করেন। আঙুল ফুলে কলা গাছ নয়, তালগাছ। ভর্তির ফি বলে যে ২০ হাজার, ৪০ হাজার ৫০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে আসলে এটা কি? এ শিক্ষার্থী তো এ প্রতিষ্ঠানে এখনো একদিনও ক্লাস করেনি। তাহলে তার পেছনে প্রতিষ্ঠান ২০/২৫ কিংবা ৩০ হাজার টাকার কি শ্রম দিয়েছ? তাকে ২০/৩০ হাজার টাকার কি বস্তুগত বা অবস্তুগত সম্পদ দিয়েছে? একজন শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্টার খাতায় এবং হাজিরা খাতায় তুলতে কি ২০/৩০ হাজার টাকা খরচ হয় ? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন। কবে এ বিদ্যা- বাণিজ্য বন্ধ হবে? গুলশান , বনানী , ধানমন্ডি , উত্তরার মত অভিজাত এলাকায় এসব বিদ্যা-বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত জায়গা। প্রত্যেক অলিতে গলিতে কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। ফার্মগেইট ইন্দিরা রোড এলাকায় জিলাপির দোকান, সিঙ্গারার দোকান তার পাশাপাশি অসংখ্য ইংরেজির দোকান , গণিতের দোকান , একাউনটিং এর দোকান। আহ্! বিদ্যার কী বিস্তার ঘটিয়ে দিয়েছি আমরা। দেশের সরকারী স্কুল কলেজগুলোতে ইংরেজি শিক্ষকের সংকট প্রকট। সেক্ষেত্রে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল শিক্ষক পাচ্ছে কোত্থেকে? দ’ুচার বছর কোচিং সেন্টার হিসাবে চলার পর হঠাৎ একদিন দেখা যায় সে কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ডের উপরে আর একটা রঙিন, চোখ ধাঁধানো সাইনবোর্ড। কোচিং সেন্টারটি স্কুল বা কলেজ হয়ে গেল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজ; বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোচিং সেন্টার। এসব সাইনবোর্ড সর্বস্ব বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনও পাচ্ছে, সাইনবোর্ডে আবার বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত কলেজ কোড নাম্বারও দেওয়া থাকে। অন্য দুই দশটি পন্যের বিজ্ঞাপন যেভাবে টিভিতে পত্র পত্রিকায় আসে, শিক্ষা নামক পণ্যটির (!!) বিজ্ঞাপনও সেভাবেই আসে। বরং ডিসেম্বর জানুয়ারীতে ঢাকা শহরের যে কোন অলি গলিতে স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার, ভর্তি কোচিং, ইত্যাদির পোস্টার, ব্যানারই বেশি নজরে পড়ে। জাতিকে শিক্ষিত করতে এসব ব্যবসায়ীদের কি প্রাণান্ত প্রচেষ্টা! কারণ একটাই বঙ্গবন্ধুর পরে আর কোন সরকার স্কুল কলেজ গড়ে তোলেনি। আবার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিভিতে, পোস্টারে, ব্যানারে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে-আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্র ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না। আসল কথা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট পড়াচ্ছে। ছুটির পর শিক্ষকদের দিয়ে দুই/আড়াই ঘন্টা অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়াচ্ছে। টাকাটা চলে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের পকেটে, গরীব শিক্ষক কলুর বলদের মতো খেটেই যাচ্ছেন। অপর দিকে অভিবাকদের গলা চিপে ভর্তির সময়েই এ অতিরিক্ত টাকাটা নিয়ে নেওয়া হয় বা মাসিক বেতন নির্ধারণের সময়ই এ অতিরিক্ত টাকা অর্ন্তভুক্ত করে নেওয়া হয়।

জামাত-শিবির কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরো করুন। এগুলো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাইয়ের ইন্ডাস্ট্রি। শিক্ষার্থীদের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে রাখা হয় জামাতী লাইনের প্রতিক্রিয়াশীল পত্রিকাগুলো। শেকড় পর্যায় থেকে ধর্মান্ধ, প্রক্রিয়াশীল , স্বদেশ বিরোধী, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী একটা প্রজন্ম গড়ে তোলাই হচ্ছে জামাত- শিবিরের এ শিক্ষা প্রকল্পের উদ্দেশ্য। নতুন করে নগরায়ণ হচ্ছে যেসব এলাকায় সেসব ঘনবসতির বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে তারা সবার আগে কিন্ডার গার্টেন, প্রাইভেট স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা এসব গড়ে তুলছে। জমজমাট ব্যবাসা করছে।

বিবিএ. এমবি এসব বাণিজ্যিক বিদ্যার প্রসার শিক্ষা ক্ষেত্রের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে দুনিয়া ব্যাপী। শিল্প- সাহিত্য, ধর্ম- দর্শন এখন আর কেউ পড়তে চায় না। অথচ ওগুলোই মানুষকে মানুষ করার বিদ্যা। ফলে দুনিয়া ব্যাপী মানবিক অধ্যায়ের প্রচন্ড ধ্বস নেমেছে। শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে কাঙ্খিত মানের মানুষ কাঙ্খিত সংখ্যায় বের হচ্ছে না। ত্রাস-সন্ত্রাস, হুকুম- হুমকি-হুংকার-হামলা, হলে হোস্টেলে হর হামেশা লেগেই থাকে। শহরের ব্যস্ত জায়গাগুলোতে, মাকেটর্, শপিং সেন্টারের উপরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, আধা কিলোমিটারের মধ্যে ৯ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, (প্রথম আলো ৫ মার্চ ২০১২) ১টি ক্যাম্পাসের অনুমতি নিয়ে দেশ জুড়ে ডজন ডজন ক্যাম্পাস খুলে বসা, ৫ বিষয়ের অনুমতি নিয়ে ১০ বিষয়ে পাঠদান, স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়া, পরীক্ষার উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ণ না করা- এসবই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। সারা দেশে বর্তমানে ৫৪ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান গ্রহণযোগ্য। বাকীগুলো সার্টিফিকেট বিক্রির কেন্দ্র বলেই শিক্ষাবিদদের ধারণা । এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান এদেশের সবচেয়ে খারাপ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মানের চেয়ে খারাপ। তেমনি রাজধানীসহ সারা দেশে অসংখ্য প্রাইভেট স্কুল, কলেজ গড়ে উঠলেও গুণে-মানে-মাপে-মাত্রায় গ্রহনযোগ্য প্রতিষ্ঠান বাড়েনি। ফলে রাজধানীর অভিবাবকদেরকে ছুটতে হয় সেই হলিক্রস, ভিকারুন্নেসা, রাজউক, নটরডেম, মণিপুরিপাড়া-এরকম হাতে গোনা কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের পেছনে । আর এসব প্রতিষ্ঠান অনেক ব্যয়বহুল। সরকারী চাকুরীজীবী রবীন্দ্রনাথ রায় চৈতি রায়কে ভিকারুন্নেসায় পড়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে সর্বসান্ত হয়ে গেছেন। আর এখন চৈতির মা এবং ছোট বোন অর্পিতা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার পথে। এ পরিবারটি ন্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও, চৈতির বেদনাদায়ক মৃত্যুর ২ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও সরকার ও প্রশাসনের নীরবতা জনগণকে আহত করেছে। আর্থিক এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এ পরিবারটির পাশে গিয়ে কেউ দাঁড়ায়নি। প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষ হলেও পরিবারটিকে দুটি শান্তনার বাণী তিনি শোনাননি- এটা বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে ঐ এলাকার মানুষ আশা করে নি। মানুষ এও আশা করে যে, ভবিষ্যতে আর কোন চৈতিকে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে আতœহত্যা করতে হবে না। যে যে বিষয়ে পড়তে চায়, যে বয়সে পড়তে চায়, যেখানে পড়তে চায় পারবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য এ দুটি সেবা খাত বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিলে সেবার আর মান থাকে না; সবই বাণিজ্যে পরিণত হয়ে যায়। পরিশেষে চৈতির বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করছি। আর কামনা করছি ভবিষ্যতে এদেশে শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়টি পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে। অপছন্দের বিষয়টি পছন্দের প্রতিষ্ঠানে অথবা পছন্দের বিষয়টি অপছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়তে হবে না।

লেখক: প্রভাষক, ইংরেজী বিভাগ, মাইস্টোন কলেজ, উত্তরা, ঢাকা।