Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

পুঁজিবাজারে ফিরেছে আস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ৩১, ২০২০, ০৬:৫০ পিএম


পুঁজিবাজারে ফিরেছে আস্থা

দীর্ঘদিন ধরেই সার্বিক সুশাসনের ঘাটতি আর ক্রমাগত সূচক-শেয়ারের দরপতন ও সবশেষ করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পুঁজিবাজারের হারানো সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ভালো কোম্পানির আইপিও আনাসহ বাজার চাঙ্গা করতে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের কড়া অবস্থান এ ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা কেটে যাচ্ছে।  নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসায় লেনদেনেও বড় উল্লম্ফন হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তে অর্থনীতিতে বড় মন্দার শঙ্কায় মূলধন তুলে নিয়ে পুঁজিবাজার ছাড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। উপর্যুপরি শেয়ার বিক্রির চাপে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন বিগত সাত বছর পেছনে ফিরে যায়।

পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে তড়িঘড়ি করে ১৮ মার্চ শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর প্রাইস) বেঁধে দেয় পুঁজিবাজারের বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যদিও দাম বেঁধে দেয়ার পর শেয়ার লেনদেন হয়েছে মাত্র কয়েক দিন।

এরপর সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে পুঁজিবাজার। বন্ধ বাজার চালুর পর চাঙ্গা করতে কমিশন বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যার ফলে টানা ১০ সপ্তাহ ধরে সূচকে রয়েছে চাঙ্গাভাব আর দীর্ঘদিন পর দেশের পুঁজিবাজারে বিরাজ করছে ফুরফুরে অবস্থা।

গত জুনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স যেখানে চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায় সেখানে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার তা পৌঁছেছে চার হাজার ৯০০ পয়েন্টের কাছাকাছি। এছাড়া জুন মাসেই একপর্যায়ে লেনদেন নেমে গিয়েছিল ৫০ কোটির ঘরে, সেই দশাও কাটিয়ে গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮২৮ কোটি টাকারও বেশি।

 সবমিলিয়ে বাজারে সুশাসন ফিরবে এমন আশায় বাজারমুখী হচ্ছেন সাইডলাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরাও। পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এতে ধারাবাহিকভাবে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে পুঁজিবাজারে।

বাজার বিশ্লেষকরাও বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেয়ার পর বাজার ও বিনিয়োগবান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ নেয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

তাছাড়া করোনাভীতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। সূচক কমতে কমতে এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল যে অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামও যৌক্তিক মূল্যের অনেক নিচে নেমে যায়।

ফলে এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানী বিনিয়োগকারী ভালো মুনাফার প্রত্যাশায় কম দামে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। আর এসব কিছুর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে বর্তমান বাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা এও মনে করছেন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিরো টলারেন্সে অবস্থান করছেন। আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি থাকায় ইতোমধ্যে ১১টি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছেন।

শেয়ার কারসাজির দায়ে বড় ধরনের জরিমানা করেছেন কয়েকটি কোম্পানিকে। ফ্রিজ করেছেন অনেক কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকদের বিও হিসেবে থাকা শেয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে অনেকের ব্যাংক হিসাবও।  এর বাইরেও ম্যাজিকের মতো কাজ করছে পরিচালকদের ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শেয়ার ধারণের বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা।

বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করতে এনবিআরের সাথে বৈঠক করে কর সুবিধা বাড়ানো, ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ সেপ্টেম্বরের আগে না দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা বলা, আইসিবিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেয়াসহ অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তারা।
 
বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, একটি সুন্দর পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান কমিশন। তবে নতুন কিছু করছি না। আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা একটি ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। সেই ভিত্তিকে আরও মজবুত করার জন্য কাজ করছে নতুন কমিশন।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি পুঁজিবাজার গঠন করতে চাই- যাতে ব্যাংক খোলা থাকলে বিনিয়োগকারীরা সব সময় লেনদেন করতে পারেন। কোনোভাবেই যাতে পুঁজিবাজার বন্ধ না থাকে।

এদিকে একাধিক বিনিয়োগকারী আমার সংবাদকে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই মূলধন খোয়ানোর কারণে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তবে পুঁজিবাজারের বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পেয়েছে।

এদিকে ব্যাংকিং খাতে সুদের হার কমে যাচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকের চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এখন অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। সবমিলিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা করতে পারবেন।

এদিকে বাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বাজারে নতুন নতুন পণ্য চালু করতে সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার কথা ব্যক্ত করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদে শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের নিয়োগ- নিঃসন্দেহে তার সম্ভাব্যতা ও দক্ষতা নিয়ে সরকারের যে আস্থা রয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ। তার সফল নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা এবং দিকনির্দেশনায় পুঁজিবাজার আগামীতে আরও বেশি উচ্চতা এবং সাফল্য অর্জন করবে— এমনটাই আশা করছেন তারা।

শুধু তাই নয়, শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের একাডেমিক রেকর্ড, দক্ষতা এবং করপোরেট জগতের বহুমুখী পেশাদারিত্ব ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ পুঁজিবাজারের গতিশীলতা এবং অধিকতর স্বচ্ছতাও আনয়ন করবে বলে মনে করছেন ডিএসইসহ সংশ্লিষ্টরা।

একই সাথে দেশের শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার অংশীদারিত্ব হিসেবে কাজ করবে। যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আরও বেশী উৎসাহিত করবে।

আর্থিক খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের যোগদানে দেশের পুঁজিবাজার নতুন রূপে এবং নতুন আঙ্গিকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় পুঁজিবাজারে পরিণত হবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমারসংবাদ/এসটিএম