Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শেষ হাসি কে হাসবেন; ‘বাইডেন না ট্রাম্প’

রায়হান আহমেদ তপাদার

অক্টোবর ৭, ২০২০, ০৭:৪৭ পিএম


শেষ হাসি কে হাসবেন; ‘বাইডেন না ট্রাম্প’

গণতন্ত্রের চেয়ে উত্তম কোনো রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতি নেই-কথাটা আপাত সত্যি। কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটা সংস্কার অথবা বিকল্প এখন বের হলে ভালো।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক গুণীজনরা ভবিষ্যতে মিলে যদি বর্তমান গণতন্ত্র ও রাজনীতির আইনসম্মত ও যুক্তিসংগত বিকল্প বা সংস্কার দিয়ে যেতে পারেন, তার একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে পারে সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ কল্যাণে।

তাই আমেরিকার আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, কল্পনা-জল্পনা। কে হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন তা অনেকরই প্রশ্ন। আমেরিকার ভোটাররা ৩রা নভেম্বর নির্ধারণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারা আরো চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে দেখতে চান কিনা।

নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন, যিনি বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত, যদিও তিনি গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

সারাদেশে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কোন প্রার্থী কতোটা এগিয়ে আছেন সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপ বা সমীক্ষা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে এসব জরিপ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন।

উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ওই নির্বাচনের আগে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

সেই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

কিন্তু এবছর জাতীয় পর্যায়ে যতো জরিপ হয়েছে তার বেশিরভাগ ফলাফলেই জো বাইডেন এগিয়ে আছেন। গত কয়েক সপ্তাহে যেসব জরিপ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০ শতাংশ এর কাছাকছি। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন ১০ পয়েন্টে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েকদিনে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

৪ আগস্টের জরিপে দেখা যচ্ছে জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন যেখানে ৪৯ শতাংশ, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে সমর্থন ৪৫  শতাংশ। গত নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কার অবস্থান কোথায় এই চিত্রটা ততোটা পরিষ্কার ছিলো না। এবার দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি, কোথাও কোথাও ৫  শতাংশ  থেকে ১০  শতাংশ।

অথচ ২০১৬ সালের জনমত জরিপগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সামান্য কিছু পয়েন্ট। বিভিন্ন রাজ্যেই নির্ধারিত হবে কে নির্বাচনে জয়ী আর কে পরাজিত হবেন।

কিন্তু চলমান প্রাণঘাতী করোনা মহামারির কারণে আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠীয় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এখনো তেমন তোড়জোড় ও কর্মকা্ল পরিলক্ষিত না হলেও, পর্দার অন্তরালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের কমতি নেই। তবে বাইডেন এর আগে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সময়ে ৬ মেয়াদে ৩৬ বছর মার্কিন সিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জো ট্রাম্প হচ্ছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী। ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লোট ও ফ্লোরিডার জ্যাকসভিলে অনুষ্ঠিতব্য রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশনে দলের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। প্রথম দিনের অধিবেশন হবে শার্লোটে এবং বাকি তিন দিনের অধিবেশন হবে জ্যাকসনভিলে।

ইতোমধ্যে নির্বাচনের পূর্বে দুই প্রার্থীর মধ্যে তিনটি বিতর্ক অনুষ্ঠানের বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্রাম্পের নির্বাচনি শিবিরের পক্ষ থেকে অন্তত আরো দুটি বেশি বিতর্ক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেয়া হলেও বাইডেন শিবির থেকে সে ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো হয়নি।

তথ্যমতে, বাইডেন শিবির বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স নিয়ে তেমন উচ্চ ধারণা পোষণ করেন না। বলা হয়, বয়সের কারণে বাইডেনের কগনিটিভ অর্থাৎ মানসিক তীক্ষনতা তেমন ধারালো নয় এবং তার তোতলামোরও কিছুটা সমস্যা রয়েছে বিধায় অধিকসংখ্যক বিতর্কে অংশ নিতে তিনি তেমন ইচ্ছুক নন।

অবশ্য বাইডেনের পক্ষ থেকে এসব তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে। অন্য দিকে এসব তথ্যের সমর্থনে বাইডেনের প্রতিপক্ষ সামপ্রতিক দুটি ঘটনার উল্লেখ করেন।

একটিতে বাইডেন আমেরিকায় করোনায় নিহতের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজারের স্থলে এক কোটি ২৫ লাখ বলে উল্লেখ করেন এবং অপরটিতে সামপ্রতিক এক বক্তৃতায় তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার বদলে সিনেটর পদের জন্য লড়ছেন বলে জানান।

অবশ্য ট্রাম্পকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের বিগত সাড়ে তিন বছরের শাসনামলের প্রায় দেশজুড়ে তিনি তাঁর নানা বক্তব্য বিবৃতি ও কর্মকা্লের জন্য প্রবলভাবে সমালোচিত ও নিন্দিত হন। বিশেষ করে চলমান করোনা মহামারি ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় তার কট্টর সমর্থকদের অনেককেও নাখোশ হতে দেখা যায়।

তিনি করোনা নিয়ে সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলেছেন বলে অনেকেই মনে করেন। প্রথম থেকে করোনা ভাইরাসকে যথাযথ পাত্তা বা গুরুত্ব না দেয়া এবং এটা এমনিতেই চলে যাবে এ জাতীয় বক্তব্য দান ও এ ক্ষেত্রে তার বিলম্বিত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বহুসংখ্যক মার্কিন নাগরিকের প্রাণহানি ও অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

তা ছাড়া, পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম হত্যকাণ্ডের ঘটনায় তার দুঃখ প্রকাশকে নেহায়েত লোক দেখানো বলে মনে হয়েছে। তিনি ওই ঘটনাকে হরিবল বলে বর্ণনা করেছিলেন।

 তাছাড়া, হোয়াইট হাউজের সামনে লাফিয়েট স্কোয়ারে সমবেত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কারীদের তিনি যেভাবে টিয়ারগ্যাস ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে নিকটবর্তী সেইন্ট জনস চার্চে গিয়ে হাতে বাইবেল তুলে লোক দেখানো দাবি তোলার মহড়া দেন সেটাও অনেকের কাছে ভালো লাগেনি।

প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনের জন্য প্রয়োজনে তার সেনা নামানোর ঘোষণাও খোদ প্রতিরক্ষাবাহিনী- সহ বহু মহলে সমালোচিত হয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি নিজেকে একজন ল অ্যান্ড অর্ডার প্রার্থী হিসেবে জাহির করেছিলেন।

এছাড়া করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডকেও বহু মানুষ যৎসামান্য বলে বর্ণনা করেন। করোনা মহামারির পূর্বে মার্কিন অর্থনীতিতে ও স্টকমার্কেটে তেজীভাব বিরাজমান ছিল। বেকারত্বের হারও ছিল মার্কিন ইতিহাসের সর্বনিম্নস্তরে শতকরা তিন ভাগের কিছু উপরে। করোনা মহামারি সবকিছু উল্টে-পাল্টে ল্লভ্ল করে দিয়েছে।

সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষ চাকরি ছাড়া হয়ে পড়েন। শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ লোক বেকার হয়ে পড়েন, বর্তমানে সেটা কমে ১১ ভাগের কিছুটা উপড়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪ কোটিরও অধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েন, বর্তমানে অবশ্য সেটা কমে ১১ ভাগের কিছুটা উপড়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪ কোটিরও অধিক মানুষ বেকার আছেন।

সহসাই অর্থনীতির অধোগতি থেকে উত্তরণ সহজসাধ্য হবে না বলে অনেকেই মনে করেন। তা ছাড়া করোনা ভাইরাসের টীকা ও ওষুধ আবিষ্কারও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার অথচ নির্বাচনের আর বাকি আছে মাত্র তিন মাসের মতো সময়।

এই সময়ে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না হলে নির্বাচনে ট্রাম্পের ভরাডুবি এক রকম নিশ্চিত বলে কেউ কেউ মনে করেন। ইতোমধ্যে একাধিক জনমত জরিপে বাইডেন জনপ্রিয়তায় ট্রাম্প থেকে বেশ এগিয়ে আছেন বলে লক্ষ্য করা যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ কর্তৃক পরিচালিত সামপ্রতিক এক জরিপে বাইডেন ৫০ শতাংশ ও ট্রাম্প ৩৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন পান বলে দেখা যায়।

কিন্তু বাস্তবতা হল তার বিরুদ্ধে যিনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন সেই বাইডেনকে অনেকে ট্রাম্পের চেয়েও দুর্বল প্রার্থী হিসাবে মনে করেন।
এদিকে অনেক আমেরিকানের কাছে এ বিষয়টা প্রতীয়মান হয়েছে যে, ডেমোক্র্যটরা ক্ষমতায় আসলেও দেশের তেমন কোনো অর্থবহ পরিবর্তন আসছে না।

এছাড়া ট্রাম্প এ ধারণাটা সমাজের একটা বড় অংশের মাঝে প্রোথিত করতে সমর্থ হয়েছেন যে, জনগণের করের ডলার বিশ্বের মোড়লগিরি করবার পিছনে ব্যয় করলে,তার মূল ভুক্তভোগী হন জনগণ। ডেমোক্র্যাটদের অন্য দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সরকার পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো শুধু বাম শিবিরে নয়, ডান এবং দক্ষিণপন্থি শিবিরের অনেকেই পছন্দ করছেন না।

এমনকি করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে চাকরি হারানো এবং বেতন কমে যাওয়া বহু মার্কিনি এ চেক না পাবার জন্য ডেমোক্র্যাটরা দায়ী বলে মনে করেন। এটিও আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দের ভোট দেয়ার সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।

জানিয়ে রাখা ভালো, সিনিয়র বুশ হলেন এখন পর্যন্ত সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ক্ষমতার দুই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ১৯৯২ সালে নির্বাচনে তিনি বিল ক্লিন্টনের কাছে পরাজিত হন।

১৯৯২ এর পর থেকে আর কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকেই পরাজিত করা যায়নি। তার মানে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে গত আঠাশ বছরে মার্কিন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতাশীন প্রেসিডেন্টকে দুই মেয়াদে কাজ করবার সুযোগ দেবার একটা ট্র্যাডিশন দাঁড়িয়ে গেছে।

তাই এ সমস্ত কিছু মিলে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে না গেলে, ট্রাম্পই পরবর্তী চার বছরের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। তবে সময়ই বলে দেবে শেষ হাসি কে হাসছেন।

আমারসংবাদ/এসটিএম