Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

জো-বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা

আমার সংবাদ ডেস্ক

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ১১:২৫ এএম


জো-বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনের অবসান ঘটছে। ব্যর্থ হয়েছে ক্যাপিটল হিল দখলে নিতে ট্রাম্পের ভয়ানক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। সূচিত হয়েছে গণতন্ত্রের বিজয়। 

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস অভিষিক্ত হবেন ২০ জানুয়ারি, বুধবার। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন ৫৯তম এ অভিষেকের দিকে। 

এদিন দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো-বাইডেন শপথ গ্রহণ করছেন। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম চত্বরে অনুষ্ঠেয় অভিষেকে পরবর্তী চার বছর দায়িত্ব পালনের জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে ৩৫ শব্দের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম ধারার ৮ উপধারায় শপথ বাক্যের বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত আছে।

বাইবেলের উপর বাম হাত রেখে ডান হাত উঁচিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করার রীতি চলছে ২৩২ বছর ধরে। মাত্র এক মিনিটের এই শপথ অনুষ্ঠানের জন্য এতো বিশাল আয়োজনের রেকর্ড পৃথিবীর কোথাও নেই। 

গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিপুল বিজয়ের ৭৯ দিন পর অনুষ্ঠেয় ঐতিহ্যবাহী এই অভিষেকে থাকবে প্রেসিডেন্টের ভাষণ, প্যারেড সহ উৎসব আয়োজন। মঞ্চে একসাথে এক হাজার ৬০০ অতিথির আসনগ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। তন্মধ্যে সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, সকল রাজ্যর গভর্নর ও অতিথিদের জন্য থাকবে বিশেষ আসন। 

মহামারি করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে এবারের অভিষেক হবে অনেকটাই অনাড়ম্বর। প্রথা অনুযায়ী অভিষেক অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ২০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সিনেট ও হাউজ প্রতিনিধিদের নির্বাচনী এলাকার জন্য বিতরণ করা হয় ২ লাখ আমন্ত্রণ পত্র। 

এছাড়া উন্মুক্ত ময়দানে দাঁড়িয়ে লক্ষ, লক্ষ মানুষ উপভোগ করেন অভিষেকের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। এবার থাকছে না তেমন আয়োজন। শুধু ১১৭তম কংগ্রেস সদস্য এবং তাদের প্রত্যেকের পছন্দনীয় একজন অতিথি অংশ নিতে পারবেন অনুষ্ঠানে। অতিথিদের জন্য মাস্ক পরিধান, কোভিড টেস্ট থাকছে বাধ্যতামূলক। 

এবারের অভিষেককে কেন্দ্র করে ক্যাপিটল হিল এলাকাসহ গোটা ওয়াশিংটন ডিসি ঢেকে ফেলা হচ্ছে নিরাপত্তার চাদরে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বাহিনী নিশ্চিত করছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অভিষেক সফল করতে গঠিত কমিটি কাজ করছে রাতদিন। 

মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে।

জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের দিন ২০ জানুয়ারি কী হতে চলছে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে আমেরিকা। জো বাইডেনের শপথে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এমন আশঙ্কা জানিয়ে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এফবিআই। কোনো রকম অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১২টি রাজ্যে জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। রাজধানী ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলকে মুড়ে ফেলা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে। মোতায়েন করা হয়েছে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড। 

২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়াশিংটন সৌধে জারি হয়েছে পর্যটন নিষেধাজ্ঞা। জো বাইডেনের শপথকে সামনে রেখে ট্রাম্পের উগ্র সমথর্করা ব্যাপক পরিকল্পনা করছে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে জড়ো হওয়ার। এর আগে ১৭ই জানুয়ারি ডাক দেয়া হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে গোপন সমাবেশের। ক্রমবর্ধমান হামলার আশঙ্কা এবং অনভিপ্রেত ঘটনা সত্ত্বেও বাইডেনের উদ্বোধনী কমিটি রাজনৈতিক ও জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের সময়ে বিভক্ত জাতিকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

বাইডেন নিজে খোলা জায়গায় উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এবারের শপথের থিম হ’ল ‘আমেরিকা ইউনাইটেড’। বাইডেন আমেরিকার ৩ সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামার সঙ্গে আর্লিংটন জাতীয় সমাধি পরিদর্শন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেকোন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকা- ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৭টি বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ওয়াশিংটনে নিয়োজিত করা হচ্ছে নিরাপত্তা রক্ষার্থে। সিনিয়র এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অভিহিত করেছেন ‘নজিরবিহীন’ বলে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে অভিষেকে অংশ নিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

এর আগে আরো তিনজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বর্জন করেন অভিষেক। প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন সর্বশেষ ১৮৬৯ সালে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উইলেসিস অভিষেক বয়কট করেন। শপথ গ্রহণের পর জো বাইডেন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। এদিন তার বয়স হবে ৭৮ বছর ৬১ দিন। অপরদিকে জন এফ কেনেডির পর দ্বিতীয় ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট হবেন জো বাইডেন। অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিবাদন গ্রহণ করবেন বর্ণাঢ্য প্যারেডের। সশস্ত্র বাহিনীর সকল বিভাগের সম্মিলিত প্যারেড তাদেরকে নিয়ে যাবে হোয়াইট হাউজে। প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে অপরাহ্ন আড়াইটায় পেনসিলভেনিয়া এভিন্যুতে ৩য় এবং ১৭ স্ট্রিটের মাঝে। মহামারির কারণে এবার থাকছে না অভিষেক বল পর্ব। 

প্রথা অনুযায়ী অভিষেকের পূর্বে ১৭ই  জানুয়ারী পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহর থেকে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবার ১৩৫ মাইলের ট্রেন যাত্রা শুরু করার কথা ছিল। নিরাপত্তার কারণে পরে তা বাতিল করা হয়। 

প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ সালে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে পদাপর্ণের পূর্বে ১২ দিনে কয়েকটি রাজ্য ভ্রমণ সম্পন্ন করেন। ১৯৩৯ সালে ফ্লোরিডায় তৈরি জর্জিয়া-৩০০ নামের প্রাইভেট ট্রেনটিতে সবধরণের আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা অভিষেকের পূর্বে এই ট্রেনে ভ্রমণ করেন। 

২০ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১১ টায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম আঙ্গিনায়। শুধু আমন্ত্রিত টিকিটধারী অতিথিগণ অভিষেকস্থলে যেতে পারবেন।
অভিষেকে ব্যয় হবে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার। ২০ জানুয়ারী থেকে জো-বাইডেন তার স্ত্রী জিল বাইডেনকে নিয়ে উঠবেন হোয়াইট হাউজে। অভিষেকের পূর্বেই জো-বাইডেন চূড়ান্ত করেছেন তার কেবিনেটের সদস্যদের নিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জো-বাইডেনের স্বাগত ভাষণ শুনতে। একুশে জানুয়ারির উষালগ্ন থেকে শুরু হবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের শাসনকাল। স্মরণকালের ভয়াবহ আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ও অস্থিরতার মধ্যে জো-বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্ববাসী। 

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে ১৭৮৯-এর ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন জর্জ ওয়াশিংটন। এরপর থেকে প্রথা অনুযায়ী চলে আসছে অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যানবুরা থেকে জিমি কার্টার পর্যন্ত অভিষেক অনুষ্ঠিত হয় ক্যাপিটাল হিলের পূর্বাঙ্গণে। ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগ্যান প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম চত্বরে। 

১৯৩৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের তারিখ ছিলো ৪ মার্চ। সংবিধানের ২০তম সংশোধনীর মাধ্যমে তা ২০ জানুয়ারী নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন কারণে ২০ জানুয়ারি রোববার পড়লে প্রধান বিচারপতি আগের দিন শনিবার প্রাইভেটলি প্রেসিডেন্টকে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং পরবর্তী সোমবার অতিথি অভ্যাগতদের মাঝে সম্পন্ন করেন পুরো আনুষ্ঠানিকতা। ১৮১২-এর যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন ক্যাপিটল হিলের বাইরে ওয়াশিংটন ডিসির অন্যস্থানে অনুষ্ঠিত হয় শপথ গ্রহণ। 

এছাড়া প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড টিফট ও রোনাল্ড রিগ্যানের ৮৫এর অভিষেক প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে অনুষ্ঠিত হয় ক্যাপিটল হিলের অভ্যন্তরে। প্রতিটি শপথ গ্রহণ অবশ্য প্রধান বিচারপতি দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ১৭৮৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৫ জন প্রধান বিচারপতি, একজন সহযোগি বিচারপতি এবং একজন নোটারি পাবলিকও প্রেসিডেন্টের শপথ বাক্য পাঠ করান।

লেখক : সম্পাদক. সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক

আমারসংবাদ/জেডআই