Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

এক মির্জার কথা আরেক মির্জার মুখে?

অজয় দাশগুপ্ত

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৫:৫৫ এএম


এক মির্জার কথা আরেক মির্জার মুখে?

‘‘ছাত্রজীবনে আমি ঢাকায় ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি আমাকে চট্টগ্রামে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।… ওবায়দুল কাদেরের ধারণা ছিল আমি ঢাকায় পড়াশোনা করে রাজনীতি করলে হয়তো তার চেয়ে বড় নেতা হয়ে যাব। 

তাই তিনি চাননি আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি।’’ ‘‘আমি যখন বলি ওবায়দুল কাদের সাহেবের ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলছে, সে চাকরি কোথায়? আমি যখন প্রতিবাদ করি তখন বলে আমি নাকি পাগল, আমি উন্মাদ।’’

কথাগুলো কে বলতে পারে বলে মনে হয়? না কোনো বিএনপি, জামায়াত বা বিরোধীদলের নেতার মুখ থেকে এগুলো বের হয়নি। যে ভাবেই দেখুন বা শুনুন না কেন এগুলো সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের মুখ নিঃসৃত বাণী। নিন্দুকেরা বলছেন এও নাকি পাতানো। মির্জা সাহেব ভোট বাড়ানোর জন্য এগুলো বলেছেন। হলে হতেও পারে। 

কারণ যেভাবেই জিতুক না কেন জিতে আসার পর তিনি বলেছেন এ জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয়। এ জয় ওবায়দুল কাদেরের জয়। এই মতদ্বৈততা বা এই যে কথার মারপ্যাঁচ এখানেই আমাদের রাজনীতির বারোটা বেজে যায়। বেজে গেছে।

মির্জা সাহেব নোয়াখালীতে চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কথা বলেছেন জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ে। ভাইয়ের বিরুদ্ধে বলেছেন তো বলেছেনই সাথে আওয়ামী লেগের নেতাদের নিয়েও বলেছেন। 

আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে তার বক্তব্য: “বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।’”

হঠাৎ সত্যভাষী আর বেপরোয়া হয়ে ওঠা কাদের পরিবারের আবদুল কাদের মির্জাকে বলতে শোনা যায়, “নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সত্য। 

কিন্তু আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও অনেক লোক জড়ো করতে পারব। না হয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেব”।

এখন সাধারণ মানুষ জানতে চাইবে তারা কোন কথাগুলো নেবে আর কোনগুলো নেবে না? দায়িত্বশীল পদের সম্পাদককে যিনি এমন ভাষায় আক্রমণ করতে পারেন তিনি যদি স্বাভাবিক বা প্রকৃতিস্থ না হন তা হলে কি বসুর হাটের মানুষের ভাগ্যে জুটল অস্বাভাবিক আচরণের কোন চেয়ারম্যান? আর যদি তা সত্য হয় তাহলে জনগণ কি এতই বোকা যে তারা একজন এমন কাউকে বেছে নিলেন যিনি অগোছালো ও অস্বাভাবিক?

আমাদের রাজনীতিতে যদি জবাবদিহিতা বলে কিছু থাকত, যদি সংসদ ও গণতন্ত্রের সঠিক ব্যবহার এবং শক্তিশালী বিরোধী দল থাকত তাহলে এই ঘটনা রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তুলত। 

আমরা সাধারণ মানুষ হয়েও যেটুকু জানি তাতে এটা স্পষ্ট ভোটের দিন ও তার ব্যবহার ছিল দুর্বিনীত। আচরণ অসংযত। একজন মানুষ এমন করেই যাবে আর বাকীরা দেখতে থাকবে এটাই কি রাজনীতি?

একক দল ও একমুখি রাজনীতিতে আলোচনা বা মুখরোচক খবর হিসেবে মির্জা কাদের কেন্দ্রবিন্দুতে আসলেও এর ভেতর দলের জন্য আছে অশণি সংকেত। স্পষ্টই প্রতীয়মান কোথাও শৃঙ্খলা বা নিয়ম মানা হচ্ছে না। আছে অসংগতি। 

কথা বলতে দিলে হাত খুলে লিখতে দিলে এগুলো কবেই উবে যেতে বাধ্য হতো। যত ধামাচাপা তত এসব অনিয়ম বিশৃঙ্খলা আর কূটতর্ক বাড়বে। শেখ হাসিনা না থাকলে কি হতো তা যেমন অনুমান করতে কষ্ট হয় না তেমনি তিনি চলে গেলে কি হতে পারে এও তার এক নির্জলা উদাহরণ।

রাজনীতি দেশে দেশে কঠিন সংকটের মুখে। বলতে গেলে নাই। ভারত বা এমন কয়েকটি দেশ বাদ দিলে সব দেশেই একমুখি সবকিছু। এ জায়গায় বাংলাদেশের সৌভাগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। উন্নয়ন প্রবহমান। না হলে যেসব বিপদ শকুনের মতো উড়ছে তারাই খুবলে নিত জাতির পরাণ। মির্জা কাদের আমাদের আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। 

উন্নয়নের পাশাপাশি যদি রাজনীতিকে শুদ্ধ করে ভালো মানুষের হাতে দেয়া না যায় বাংলাদেশের সামনে এমন মির্জা কাদের ছাড়া বাদবাকী কোনো নেতা থাকবে না। আমরা এটা মানি আওয়ামী লীগ এদেশের বৃহৎ প্রাচীনতম দল। তাদের অতীত ঐতিহ্য বর্তমানের দাপট সব সত্য। কিন্তু এমন ঘরের দুশমন কি আসলেই তাদের নিরাপদ রাখবে?

একথা ভাবার কারণ নাই যে মির্জা কাদের প্রলাপ বকেছেন। তার কথার ভিত্তি আছে। দেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে মির্জা কাদেরের কথা সত্য হবে না এমন গ্যারান্টি কোনো আওয়ামী লীগার দিতে পারবেন? বরং এটা মনে হচ্ছে বা এটাই সবাই জানেন আওয়ামী লীগ যেমনটা আশা করছে কোনভাবেই তা সম্ভব হবে না। ফলাফল সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। 

তখন এই মির্জা কাদের বা এমন কেউ কোন দলে যাবেন বা কিভাবে পালটি খাবেন সেটা বড় কথা না। বড় বিষয় দেশ ও মানুষের সর্বনাশ। আমরা পরিবর্তনে ভীত হবার কথা বলছি না, বলছি কার হাতে গিয়ে পড়বে ভবিষ্যত সেটা যেন ভুলে না যাই। আর সেটা ডেকে আনছে স্বয়ং সরকারি দলের নেতারা।

ছেলেবেলা থেকে শিখেছি, স্বীয় জিহবাকে শাসনে রাখিবে। এই নীতিবাক্য যারা মেনে চলেননি তারা সবাই আজ হয় ইতিহাস নয়তো আস্তাকুঁড়ে। অবাক হয়েছি এটা দেখে কোন মির্জার কথা শুনছি কোন মির্জার মুখে? মির্জা ফখরুলদের কথা সত্য প্রমাণ করার জন্য মাঠে নামা এই মির্জা কাদের কি দলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে? আর তার কথা যদি সত্য হয় তাহলে বাকীরা মুখ দেখাচ্ছেন বা দেখাবেন কীভাবে?

সত্যি সেলুকাস বড় বিচিত্র এই দেশ আরো বিচিত্র তার রাজনীতি।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেবে সৌদি

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি সংখ্যক দক্ষ কর্মীর সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসসা ইউসেফ এসসা আল দুহাইলান সৌজন্য সাক্ষাতের সময় স্পিকার এ অনুরোধ জানান।


জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।  

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সাক্ষাৎকালে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কোভিডকালীন উদ্ভূত বৈশ্বিক পরিস্থিতি, অভিবাসন ইস্যু, সংসদীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেন।  

স্পিকার বলেন, দু’দেশের সংসদ সদস্যদের পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সংসদীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করা সম্ভব। দক্ষ কর্মী সৌদি আরবে পাঠাতে বাংলাদেশ যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি সংখ্যক দক্ষ কর্মী সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান স্পিকার। এসময় মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সামনে রেখে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে শুরা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানান স্পিকার।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কোভিডকালীনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক রাখতে প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন ব্যক্তিও যেন খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ না করে সেজন্য সারা দেশে খাদ্যসামগ্রী যথাসময়ে বিতরণ করেছে সরকার। সবার জন্য করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে কোভিড পরিস্থিতিতেও দেশে খাদ্যাভাব পরিলক্ষিত হয়নি।

স্পিকার বলেন, অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে ও তাদের প্রতি মানবিক ভূমিকা রেখে বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

এসময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সৌদি আরবের সহযোগিতা কামনা করেন স্পিকার।

এসময় রাষ্ট্রদূত এসসা ইউসেফ এসসা আল দুহাইলান কোভিডকালীন সরকারের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, একত্রে কাজ করার জন্য দু’দেশের মধ্যে সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ তৈরি করা প্রয়োজন।  

রাষ্ট্রদূত এসসা ইউসেফ এসসা আল দুহাইলান বাংলাদেশকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

আমারসংবাদ/এআই