Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাংলাটা ঠিক আসে না...

পবিপ্রবি প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১, ০৭:১০ এএম


বাংলাটা ঠিক আসে না...

৮ই ফাল্গুন বা ২১শে ফেব্রুয়ারি : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর বিশ্বের সকল দেশের সকল নাগরিকরা একযোগে এই দিনটিতে সম্মান জানায় নিজের মাতৃভাষাকে। এই ইতিহাসটুকু আমাদের সবার জানা।

তবে ভাষা দিবসের সঠিক পটভূমি ক'জন বাঙালি জানেন সেটি হচ্ছে ভাববার বিষয়। তাই হয়তো কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের কবিতা "বাংলাটা ঠিক আসে না!" এর সাথে মিলে যায় বর্তমানের বহু বাঙালির চিত্র।

ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে এমন নজির বিশ্বে প্রথম স্থাপন করেছে বাংলাভাষীরাই। তবে শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির মাধ্যমে।ভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান,সংস্কৃতি,ভাষা এবং আরও অনেক দিক থেকে অমিল থাকা সত্ত্বেও বাঙালীদের জুড়ে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানিদের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সাথে। তখনকার পাকিস্তান সরকার অন্যায়ভাবে পশ্চিম পাকিস্তানি (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণের মতামতের পরোয়া না করে তাদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইলেন উর্দু ভাষা।

১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ঘোষণা করলেন,উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। বাংলা ভাষাভাষী অগণিত জনগণ মেনে নিতে পারলেন না এ সিদ্ধান্ত। তারা হয়ে উঠলেন প্রতিবাদ মুখর। সর্বস্তরের জনগণ শামিল হলেন ভাষার জন্য আন্দোলনে। তবুও দমে যায়নি পাকিস্তান সরকার। তারা তাদের অন্যায় শাসন ও সিদ্ধান্ত বহাল রাখলেন সমগ্র পাকিস্তানের উপর।

একপর্যায়ে সরকারের অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় আন্দোলন করতে বাধ্য হলেন বাঙালী জনতা। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদী জনতা বেরিয়ে পরলেন পথে। দমে ছিল না পাকিস্তানি সরকার, প্রশাসন ও পুলিশবাহিনী। নির্মমভাবে গুলি বর্ষণ করতে লাগলেন আন্দোলনরত ছাত্রজনতার উপর।

সেই ঘটনায় প্রাণ হারালেন রফিক,সালাম,বরকত,জব্বারসহ নাম না জানা অসংখ্য ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবি ভাইয়েরা ও বোনেরা। এই বর্বোরচিত ঘটনার প্রতিবাদে ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি চললো পুরোদমে আন্দোলন।

এরপর আরো কয়েক বছর আন্দোলন সংগ্রামের ফলস্বরূপ ১৯৫৬ সালে প্রথম সংবিধান প্রণয়নকালে বাংলা নথিভুক্ত হয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায়। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের স্মরণে সেবছর ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজে হোস্টেল প্রাঙ্গণে তৈরী করা হয় শহীদ মিনার।

পরবর্তীতে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বা ৮ই ফাল্গুন প্রভাতফেরী ও পুরোদিন নানা আয়োজনে স্মরণ করা হয় ভাষা শহীদদের।যাদের সূত্র ধরে,বাঙালীর ছিনিয়ে আনতে পেরেছে শোষক শ্রেণির হাত থেকে স্বাধীনতা,পেয়েছে সার্বভৌমত্ব,অর্জন করেছে বীরের খেতাব বিশ্ব দরবারে।

তবে দিনের পর দিন পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, নিজস্বতা চর্চার অভাবে বাঙালীরা হারিয়ে ফেলছে নিজেদের গৌরবান্বিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম জানতেই পারছে না তাদের রক্তক্ষয়ী, সংগ্রামী অগ্রজদের কথা। কেবল প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার খাতিরেই অধিকাংশরা শিখছে বাংলা ভাষা।হতাশাজনকভাবে ক্রমশ বাড়ছে এ সংখ্যা।

উপযুক্ত ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে হয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলা ভাষা ও এর আন্দোলনের গৌরবময় সাক্ষ্য। দুঃখজনকভাবে তখন ৮ই ফাল্গুন অর্থাৎ ভাষার দিনটির সঠিক তাৎপর্য জানা তো দূরে থাক,কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের কবিতার ভাষায় হয়তো বলতেই হতে পারে,"বাংলাটা ঠিক আসে না!"।

আমারসংবাদ/এআই