Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’

খাদিজা ইসলাম

মে ৩১, ২০২১, ১০:০৫ এএম


 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’

নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন কে পুঞ্জিভূত করে রচিত ‘পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসটি। ঔপন্যাসিক সমাজ বাস্তবতার চিত্র এঁকেছেন মানসপটে। যা বাস্তব জীবনের চেয়ে নাটকীয়।

উপন্যাসের নায়ক শশী। কলকাতা থেকে পাশ করা গাঁওদিয়া গ্রামের তরুণ ডাক্তার শশী। সামান্য জ্বর থেকে শুরু করে সন্তান প্রসবের মতো কঠিন বিপদেও একমাত্র তিনিই তাদের অবলম্বন। মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ফুটে ওঠে কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরার পথে। তালপুকুরে বজ্রপাতে মৃত হারুঘোষের সৎকার-উৎসাহী মানসিকতা যখন তিনি নিজ চোখে দেখেন।

মুমূর্ষু সেনদিদিকে দিনরাত্রি সেবা করে মৃত্যুর মুখোমুখি থেকে বাঁচিয়ে তুলেন শশী ডাক্তার। গাঁয়ের সব কাজে তাকে পাওয়া যায়।

কলকাতায় শিক্ষা জীবনের বন্ধু কুমুদ। নিয়ম-নীতি, দায়- দায়িত্ব, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত এইগুলি বিষের মতো লাগে কুমুদের কাছে। বিচিত্র মানুষ সে, তার চেয়েও বিচিত্র তার মন। সে কখনো জীবন সম্পর্কে ভাবুক কখনো নিরাবেগ নির্মোহ উদাসী। আবার সে ই আবেগ বিহ্বল এক জীব। নিজেকে সে আবিষ্কার করতে পারে না। সবমিলিয়ে যেন অদ্ভুত একটা মানুষ কুমুদ। গ্রামের সামান্য কিশোরী বালিকা মতির জন্য পাগলপ্রায় কুমুদ।

শশীর পিতা গোপাল। চিরকালই জমিজমা আর অর্থ নিয়ে ব্যস্ত এক মানুষ। সুদের কারবার ও বিবিধ কাজকর্মে একজন পাকা দক্ষ হাতের মানুষ। শশীর সাথে তার সবসময়ই মতের অমিল থাকে।

গল্পের নায়িকা চরিত্রে দেখা যায় কুসুমকে। কুসুম শশীর গ্রাম্য বন্ধু পরাণের স্ত্রী। নিঃসন্তান কুসুমের প্রতি শশী বেশ দুর্বল।

শশীর সহোদরা বোন বিন্দু। মাতৃহারা এই মেয়েকে গোপাল বিয়ে দেয় নাগরিক জীবনে উচ্ছন্নে যাওয়া মদ্যপ নন্দলালের সাথে। গৃহে আমাদের যোগান দেওয়াই যেখানে বিন্দুর কাজ। রক্ষিতা করে রাখে তাকে । তার একমাত্র কাজ হচ্ছে নন্দর প্রমোদ শয্যার কায়া-সঙ্গী হওয়া। মায়ার ছিটেফোটাও নন্দের মনে দেখা যায় না। আপনজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন বিন্দু কলকাতায় অত্যাচারী স্বামীর গৃহে দিন যাপন করে মানসিক দৈন্যদশায়। বহুকাল পর ভাই শশীকে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলে বিন্দু।

উপন্যাসের মাঝ পর্যায়ে লেখক দেখিয়েছেন শশী-কুসুমের মানসিক টানাপোড়েন। একদা কুসুম কত ছলে কত অজুহাতে শশীকে ব্যতিব্যস্ত রাখত। কুসুমের হৃদমাঝারে একদা শশীকে দেবতার আসনে বসিয়েছে। কত অর্ঘ্য দিয়ে হৃদয়-কুঞ্জের সেই আসনটি মনের মতো করে সাজিয়ে রাখত। গোপনে দেহ-মনে পুলক রোমাঞ্চকর অনুভূতিকে শিহরিত হত তনুমন। আর শশীর মন পবনে যেন কুসুমের প্রতি ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই।

শশী যখন কুসুমকে অনুরোধ করে গাঁওদিয়ায় থেকে যেতে বলে কুসুম মুখে উপহাসের সুর এনে বলে, আপনাকে কি বলব ছোটবাবু; আপনি এত বোঝেন। লাল টকটকে করে তাতানো লোহা ফেলে রাখলে তাও আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে যায়। যায় না?

শশীর এমনই পোড়া কপাল! যে কি না এতকালে নিজের মনকেই চিনতে পারল না! হায়, মানুষের অবোধ অবুঝ অবাধ্য মন। একদা কত সহজে কত আপন ই না কুসুম হতে চেয়েছিল! সামাজিক কটাক্ষ আড় চোখের চাহনি সর্বোপরি বন্ধুর স্ত্রী বলে শশী একে সচেতন মনে স্থান দেয় নাই।

দূরে যাবার এমন ক্ষণে প্রণয় রশ্মির বাধঁনে এবার গলায় যেন ফাসঁ লেগে গেল শশীর।

মাটির উপর সূর্যাস্ত দেখিবার শখ এ জীবনে আর একবারও শশীর আসিবে না ।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখে আঙুল দিয়ে গ্রামীণ অসহায় দুস্থ মানুষের জীবনের মর্মস্পর্শী সুখ দুঃখ দেখাতে চেয়েছেন। মানব মনের চাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর জীবন-প্রবাহ বাস্তব প্রতিকৃতি তুলে ধরেছেন তিনি উপন্যাসে। ভালোবাসা টানাপোড়েন, চাওয়া, পাওয়া না পাওয়ার কথা তিনি পুরো উপন্যাস জুড়ে বর্ণনা করেছেন।

লেখা : শিক্ষার্থী সরকারি তিতুমীর কলেজ

আমারসংবাদ/এমএস