Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনা নেগেটিভদের হজের সুযোগ দেয়া উচিত 

মুহাম্মদ জাকারিয়া হারুন

জুন ১৩, ২০২১, ০১:৫০ পিএম


করোনা নেগেটিভদের হজের সুযোগ দেয়া উচিত 
  • হজ প্রভু প্রেমের অনন্য ইবাদত। হজ পালন মহান প্রভুর ভালোবাসার বর্হিপ্রকাশ। আর্থিক ভাবে সাবলম্বী, শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে পরিপূর্ণ প্রস্তুত ব্যক্তির জন্য হজ আদায় করা ফরজ। মহান আল্লাহ হজ আদায়ে মহাপূণ্যের ঘোষণা দিয়েছেন। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদিআরব সরকার এবার করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের কারণে শুধু তাদের নাগরিক এবং দেশটিতে বসবাসরত লোকজনকে হজ করার সুযোগ দেবে। এ বছর সর্বমোট ৬০ হাজার মানুষ হজ করতে পারবেন। এ বিষয়ে কথা হয় গাজীপুর চৌরাস্তা পালের পাড় জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমীর সাথে। 

আমার সংবাদ : ইসলামে হজের গুরুত্ব জানতে চাই?

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম, অনস্বীকার্য। হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। আর্থিকভাবে সাবলম্বী, শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে পরিপূর্ণ প্রস্তুত ব্যক্তির জন্য হজ আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক সামর্থবান ব্যক্তির ওপর মহান আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত : ৯৭)

পবিত্র হজ আদায় সর্বোত্তম আমল- এ মর্মে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বাধিক উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর ঈমান আনয়ন করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজে মাবরুর বা মকবুল হজ।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৪২৯)

হজ দারিদ্রতা দূর করে দেয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও উমরাহ পালন কর। কেননা হজ ও ওমরাহ উভয়টি দারিদ্রতা ও পাপরাশিকে দূরীভূত করে যেমনি ভাবে রেত স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহার মরিচা দূর করে দেয়। আর মাবরূর হজের বদলা হল জান্নাত।’ (জামে তিরমিজি : ৮১০)

আমার সংবাদ : করোনার প্রকোপ কি পৃথিবীর সর্বত্রই একই মাত্রায় যাচ্ছে?

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : করোনার প্রকোপ একেক দেশে একেক রকম। ইংল্যান্ড, ইটালি, ভারত ইত্যাদি দেশে করোনার সংক্রমণ বেশি থাকলেও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ ইত্যাদি রাষ্ট্রেসংক্রমণ তুলনামূলক কম। প্রায় দুইবছর হতে চলল করোনার উদ্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করছে আর প্রত্যেক সরকার সাধ্যমতো সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। করোনার সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য গণসমাবেশ থেকে দূরে থাকার নিয়ম। রোগটি নতুন হওয়ায় রোগের গতিবিধি, সংক্রমণের কারণ ও পরিধি ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করা মুশকিল; তবুও সম্ভাব্য কারণ থেকেও দূরে থাকছে মানুষ। ইতোমধ্যে করোনার ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়েছে। প্রথম ডোজ ব্যবহার করেছে অনেক মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ ব্যবহারের দোরগোড়ায়। এই পরিস্থিতিতে গেল বছরের মতো এবছরও সৌদি সরকার বিদেশীদের জন্য হজ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কেবল সৌদি আরবে বসবাসকারী মানুষ হজ করতে পারবে। কয় হাজার মানুষ এই সুযোগ পাবে, কী কী বিধিনিষেধ আরোপ হবে,এসব এখনও নির্ধারিত হয়নি। 

আমার সংবাদ : লকডাউন কেমন চলছে? এ লকডাউন কি হজ নিষদ্ধের মত উপযুক্ত কারণ মনে হয়?

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : বাংলাদেশেও কিন্তু এখন কাগজে-কলমে লকডাউন চলছে। কিন্তু রাস্তা-ঘাটে বের হলে আমর লকডাউনের বাস্তব অবস্থা দেখতে পাই। এই লকডাউন কেবল সরকারের নথি পত্রে আছে, কোনো বাস্তবায়ন নেই। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছুই খোলা। বাজারে, বিপণিকেন্দ্রে লাখ লাখ মানুষের জমায়েত। এত মানুষের জমায়েতের পরেও করোনার সংক্রমণ উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু হয়নি। এটা বাংলাদেশের চিত্র। কিন্তু সৌদি আরবের অবস্থা হয়তো আরও ভিন্ন। কিন্তু সৌদি আরবেও বাজারঘাট খোলা। সেখানেও মহামারি তেমন ছড়ায়নি। 

আমার সংবাদ : ইসলামের ইতিহাসে আর কখনো হজ বন্ধ থাকার মত ঘটনা ঘটেছে?

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : করোনার কারণে পরপর দুইবছর হজ বন্ধ হওয়া একটি বিরল ঘটনা। বিভিন্ন কারণে হজ বন্ধ বা কমসংখ্যক মানুষের হজ করার ঘটনা ইতিহাসে আরও রয়েছে। কিন্তু করোনার মতো অনির্দিষ্ট ও সম্ভাব্য একটি রোগসংক্রমণের দোহাই দিয়ে হজে সামান্য কয়েক হাজার লোককে সুযোগ দেওয়া অনুচিত হয়েছে মনে করি। 

আমার সংবাদ : এ ক্ষেত্রে সৌদি সরকার কী কী পদক্ষেপ নিতে পারতেন?

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী : সৌদি সরকারের উচিত ছিল, যেসব দেশে করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সেসব দেশ থেকে হজ যাত্রীনিষিদ্ধ করা; আর অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে সীমিত পরিসরে এবং নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করে হলেও হজের সুযোগ দেওয়া। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সংক্রমণ উল্লেখ করার মতো ভয়াবহ না। চেকাপ করানোর পর যাদের করোনা নেগেটিভ তাদেরকে হজের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। তারা সৌদিতে গিয়ে কয়েকদিন আইসোলেশনে থাকত। তারপর ওমরাহ ও হজের কাজ শুরু করত। অন্যান্য বছর সাধারণত ৪০/৫০ লাখ মানুষ হজ করলেও এই বছর ১০/১৫ লাখ মানুষকে হজের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।

আমারসংবাদ/জেআই