Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে চাই সচেতনতা 

হাসনা হেনা শ্রাবনী

জুলাই ২৮, ২০২১, ০৮:১০ এএম


বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে চাই সচেতনতা 

দেখতে দেখতে আবারো চলে এলো ‘বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস’। বিশ্বব্যাপী ২৮ জুলাই পালিত হয় এই দিবস।

প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে প্রকৃতি সুরক্ষার দিকগুলো আলোচনায় উঠে আসে। এ বিষয়ে সচেতনতাও সৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বড় চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এ দিবসটি দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয় গোটা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা। প্রকৃতিকে কেন সংরক্ষণ করা জরুরি তা এই গ্রহের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জানা অবশ্য কর্তব্য।

 আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে ধ্বংস করে ফেলছি। ‘চিরে ফেলা এবং কেটে ফেলা’র কৃষিকাজ এবং শিল্পকারখানার জন্য গ্রীষ্মকালীন বননিধন আজ ক্রমশ বর্ধনশীল। ফলে অতিমাত্রায় গ্রীণহাউস প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মি ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। এটি আমাদের গ্রহের বাস্তুবিদ্যাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বা করে যাচ্ছে অজ্ঞাত উপায়ে, যার শীর্ষভাগে পড়ো পড়ো অবস্থায় আমরা রয়েছি। ভূ-পৃষ্ঠে গ্রীনহাউস গ্যাসের কারণে আটকে যাওয়া তাপমাত্রায় মেরুঅঞ্চলের বরফ গলে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে আটকে থাকা মারাত্বক অনুজীবগুলো সক্রিয় হয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে সেই পরিস্থিতিটা বর্তমানে কল্পনাতীত। 

বর্তমানে কোডিড-১৯ কে নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বিজ্ঞানীদের জন্য। তাহলে সেই সময়ে আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের যতই উন্নয়ন সাধন করি না কেন অসংখ্য অজ্ঞাত অনুজীবগুলোর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মানবজাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব। এ সব সুদূরপ্রসারী ফলাফল থেকে নিস্কৃতি পেতে হলে আমাদের এখনই প্রকৃতি সংরক্ষণের সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় প্রচুর পরিমা গাছ লাগানো। এক্ষেত্রেও আমাদের মধ্যে বদ্ধ গতানুগতিক ধারণা কাজ করে যে, গাছের প্রয়োজন মূলত অক্সিজেনের জন্য।

পৃথিবীর বেশীরভাগ অক্সিজেন আসে সামুদ্রিক শৈবাল থেকে এবং গাছ যদি অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তবুও আমাদির চাহিদার ঘাটতি হবে না। তাই আমাদের জানা উচিত যে গাছ পৃথিবীতে মূলত শীতলতা এবং গ্রীনহাউস প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে গাছ নির্বাচন একটি বিষয়। যেমন আামাদের দেশে অর্থনৈতিক লাভের জন্য প্রচুর পরিমাণে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হয়। কিন্তু ইউক্যালিপটাস গাছ প্রকৃতির জন্য এতোটা ক্ষতিকর যে পানির স্তর নিচে নামিয়ে দেয় এবং এর দহনও বায়ুকে দূষিত করে সে সন্ধন্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেরই অজানা। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে এবং প্রতি জন যদি এই একটি দিনে একটি করে গাছ ফুল বা সৌন্দর্যবর্ধনকারী ছোটোখাটো গাছ ব্যতিরেকে মেহগনি, অশ্বত্থ, বট, নিম জাতীয় বহুবর্ষজীবী পরিবেশের ভারী উপকারী গাছ লাগায় হোক সেটা পৈতৃক জমি বা সরকারি জমিতে তাহলে আমার ধারণামতে এটা একটা মাইলফলক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে। পৃথিবীর সাড়ে সাত বিলিয়ন মানুষ যদি একটি করে উপকারী গাছ লাগায় তবে কয়েক দশকের মধ্যেই আমরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারি। 

এটি মনে রাখার বিষয় যে, ‘মানুষ’ একটি প্রজাতি মাত্র। তাই আমাদের অস্তিত্বকে ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখার সমস্ত ব্যবস্থা আমাদেরকেই গ্রহণ করতে হবে।

শুধুমাত্র এই তারিখেই দিনটি পালন করার মধ্যেই প্রকৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়; কেননা আমরা সবাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা সুন্দর সুব্যবস্থাপনাময় পরিবেশ উপহার দিতে দ্বায়বদ্ধ।

লেখক: হাসনা হেনা শ্রাবনী, শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ 
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আমারসংবাদ/কেএস