Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর চেতনা শুধু কথায় নয়, কাজে বাস্তবায়ন চাই        

আ ফ ম মশিউর রহমান

আগস্ট ২৩, ২০২১, ০৩:১৫ পিএম


বঙ্গবন্ধুর চেতনা শুধু কথায় নয়, কাজে বাস্তবায়ন চাই        

বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, তবে এই বাংলাদেশ কিংবা স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করতে গেলেই সাথে করে আরো একটি নাম আপনাতেই সামনে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এ যেন শুধু একটি নাম নয়, একটি চেতনা, ইহিাস ও আদর্শ। যিনি শুধুমাত্র কোনো অঞ্চল, দল বা জাতির নন, তিনি সকলের নিকট শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার একটি বিশেষ নাম। 

তিনি একদিনে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি, তার অপরিসীম পরিশ্রম, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগই এমন মহৎ আসনে তাকে সমাসীন করেছে। আটচল্লিশ, বাহান্ন, ছেষট্রি, উনসত্তর, সত্তর, একাত্তরসহ তৎকালীন প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনে যিনি অগ্রনায়কের ভুমিকা পালন করেছেন্ সকল চোখরাঙ্গানি ও জেল জুলুম উপেক্ষা করে। কারণ তার চেতনাই ছিল জীবন বাজি রেখে দেশ ও জনগনের সেবা। যে কথা তিনি চমৎকার করে বলেছেন, “সাত কোটি বাঙ্গালির ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি। আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারব না।”

তিনি এমন এক মহানায়ক যার নিজের ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খাই ছিলনা, তার চিন্তা চেতনায় ভীড় করেছিল এদেশের মানুষের মুক্তি। তিনি তাই খুব সহজেই বলেছন, “প্রধানমন্ত্রী হবার কোন ইচ্ছা আমার নেই। প্রধানমন্ত্রী আসে এবং যায়। কিন্তু, যে ভালোবাসা ও সম্মান দেশবাসী আমাকে দিয়েছেন, তা আমি সারাজীবন মনে রাখবে।”

যখন এদেশের মানুষ শোষণ, নিপীড়নের স্টিম রোলারে পিস্ট, যখন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলা মানে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করা ঠিক তখনি তার দ্যর্থহীন বজ্রকন্ঠে ঘোষণা “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!” পুরো জাতির হৃদয় আন্দোলিত করেছে, যার ফলেই এই মহান স্বাধীনতা অর্জন সম্ভবপর হয়েছে। একটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে নতুনকরে গড়ে তুললেও তিনি তার সর্বস্ব চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি কখনোই নীতির প্রশ্নে আপোষ করেননি যা তার বক্তব্যেই সু-স্পষ্ট, “অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোন দিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।” 

প্রত্যেককে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর, তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। “সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচারা দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্মকর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না।” তিনি ছিলেন এমন একজন অবিসংবাদিত নেতা যিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্য, ন্যায় ও নীতিকে সবার ওপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। 

এবার আসি আজকে আমরা যারা সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধুর কথা তুলে ধরছি বাস্তবে কতটুকু তার চেতনাকে ধারণ করছি সেই প্রশ্নে। আজ একটি বড় অংশ মানুষই শুধুমাত্র নিজে আখের গোছাতে এই মহানায়কের নাম জপছে, এমনকি অনেকেই কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর নাম বললেও বাস্তবে তার আদর্শের বিরোধী কাজ করছে যেটি আমরা আজকে পুরো সমাজের প্রত্যেকটি সেক্টরে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অন্যায়, জুলুম দেখলেই সহজে অনুমান করতে পারি। যারা মুখে বঙ্গবন্ধুর চেতনার কথা দিনরাত বলছেন, তারা সকলেই যদি এটি হৃদয়ে ধারণ করে বাস্তবে মেনে চলতেন তবে এই সমাজে ক্ষমতার লোভ কিংবা অপব্যবহার, দুর্নীতি, জুলুম, হয়রানি, মাদক সর্মাজ্য কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত না। সুতরাং আজ সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর চেতনা শুধু কথায় নয়, কাজে বাস্তবায়নের। 

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও এমফিল গবেষক

আমারসংবাদ/জেআই