আখতার-উজ-জামান
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১, ০৬:১০ এএম
মৃদু ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলেছে বাইগার নদী। রোদ ছড়ালে বা জোছনা ঝরলে এখানে পানি ঝিকমিক করে রূপোর মতো। আজ বাঙালি জাতির প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, উন্নয়নের রূপকার, দেশরত্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এই বাইগারের পাশেই টুঙ্গিপাড়ায় ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার আপোষহীন নেত্রীর জন্ম। তাই আজকের দিনটি বাঙালি জাতির জন্য একটি খুশির দিন। যে দিনটিতে এই মহান নেতার সাহসী কন্যার জন্ম। বাংলার এই সাহসী কন্যাকে সাড়ে ষোল কোটির বাঙালির সাথে সাথে আমাদেরও প্রাণঢালা অভিনন্দন এই দিনটিতে। শেখ হাসিনা- নামটি একেবারে অসাধারণ।
একটি ন্যায়, নিষ্ঠা এবং আদর্শবান পরিবারে জন্ম এই মেয়েটির। শৈশব থেকে সাদামাটা মেয়েটি সব সময় ছিল সবার আদরের। মেধা ও মননশীলতায় ছিল অন্যান্যদের চেয়ে অনেক উর্ধ্বে। বাবার আদর্শকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছে এই মেয়েটি। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে এই এতিম মেয়েটিকে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। কখনো অন্যায়-অত্যাচারকে প্রশ্রয় দেননি শেখ হাসিনা। বাবার মত বুক ভরা সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমান বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট এই পিতৃ-মাতৃহীন মেয়েটি।
বাবার আদর্শকে লালন করে বেড়ে ওঠা সেই দিনের শিশু কন্যা; আজকের সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির অহংকার শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি কবিতা তাঁর জন্মদিনের শুভেচ্ছা হিসেবে তুলে ধরলাম। তারিখটি ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ ইংরেজি, ১৪ জিলক্বদ, ১৩৬৬ আরবি, ১৩ আশ্বিন, ১৩৫৪ বাংলা বাঙালির অবিসংবাধিত নেতা এক সাহসী বীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘরে জন্মেছিল শেখ হাসিনা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে যে পিতা চেয়েছিল পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে ৫০ বছরের আজকের বাংলাদেশকে। দাদা-দাদির কোলে আদরের নাতনি হাসু বেড়ে ওঠেছে বাবার ন্যায়-নীতি আর আদর্শ লালন করে। চিরচেনা মধুমতি নদীর তীরে বেড়ে ওঠা গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার পাড়াগাঁ দেখেছে সেই ছোট্ট মেয়েটি। শেখ মুজিব ও বেগম মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার মনে আজো রয়েছে অনেক বিদারক স্মৃতি আদর্শবান পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ হাসিনা। কেন বঞ্চিত হলো মা-বাবা’র আদর থেকে।
১৯৭৫’র ১৫ আগস্টে পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এতিম বানিয়েছে এই মেয়েটিকে। পিতা মুজিবকে খুব একটা কাছে না পেলেও শৈশব-কৈশোর আনন্দেই কেটেছে শেখ হাসিনার। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সাথে তাই তার নাড়ির টান। গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরবর্তী প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় বেড়ে ওঠা অবুঝ মেয়েটির ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে ঐ গ্রামটিতে। তারা পাঁচ ভাই-বোন। অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ভাই-বোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন। সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন।
শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেই সাথে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায় থেকে।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ নামে খ্যাত। শুরু হয় তার ঢাকা শহরে বসবাসের পালা। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। এ সময় শেখ হাসিনার জীবন ও তার পরিবারের ওপর নেমে আসে দুঃসহ কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকার একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় প্রথম পুত্র সন্তানের মা হন। তিনি হলেন সজীব ওয়াজেদ জয়-যিনি আজকের বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র তথ্য উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তানের মা হন শেখ হাসিনা। তিনি হলেন, শিশু মনস্তত্ত্ববিদ ও অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। যিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিশু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। নেদারল্যান্ডের হেগ-এ অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারী হওয়ার ইতিহাস গড়ে তোলেন তিনি।
১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা সংগ্রাম।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। ঐ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এই সাহসী আর মমতাময়ী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচশ’ নেতা-কর্মী আহত হন।
বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে এক/এগারো এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলা। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করেন; ছুঁড়ে দেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অবশেষে সরকার পিছু হটে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশী আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন নতুন ভূমিকায়। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জীবনদৃষ্টি তাঁকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় তিনি দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কান্ডারি। এই অভিযাত্রায় তিনি বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। শত ব্যস্ততার মাঝেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম। তিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থানে করছেন। বরাবরের ন্যায় নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনেও যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের এক আলোচনায় শেখ হাসিনা অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের সব দেশকে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য কোটা ও শুল্ক মুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়ার দাবিও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সাম্প্রতিক বিশ্বের অন্যতম সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে শরণার্থী সমস্যা। আর এ সমস্যা সমাধানকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এ সম্মেলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের শরণার্থী শিবিরের বর্ণনা এবং ৭৫ পরবর্তি সময়ে নিজের শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ৭৫ এর ক্ষত বয়ে বেড়ানো বাইগার নদীপাড়ের সেই মেয়েটি এখন ৭৫ এ।
স্বাধীনতার ৫০ এ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কারিগর। জন্মদিনে রাজনীতির এই বাতিঘরকে শুভেচ্ছা অযুত লক্ষ নিযুত কোটি প্রাণের। দারিদ্র, গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাসসহ নানা কারণে মাতৃভূমি ছেড়ে বিভিন্ন উন্নত দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে জীবন দিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্ব নেতাদের নিয়ে আয়োজন করেন শরণার্থী বিষয়ক সম্মেলন। এসময় বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সাথে ভ্রাতৃত্বের আচরণ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন খাতে বিনিময় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে ‘সাউথ সাউথ নেটওয়ার্ক অব পাবলিক অরগানাইজেশন’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসীদের অর্থ ও অস্ত্রের যোগান বন্ধ করে এর মূলউৎপাটনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি। জঙ্গিবাদের মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার নেতৃত্বে। এ অগ্নিকন্যার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয় তার সরকারের নেতৃত্বে। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া, ঢাকায় মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলা শহরের সংযোগ সড়ক চার-লেনে উন্নীতকরণ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বহুমুখী প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে। সব বিভাগে আইসিটি পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২২২৭ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি ও পুরস্কার প্রদান করে। শেখ হাসিনার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া। জ্যেষ্ঠ পুত্র সজীব আহমেদ ওয়াজেদ একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ। একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন।
এদিকে, নারী ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে জাতিসংঘ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অবিসংবাধিত নেতা যেভাবে জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনিও তার সুযোগ্য সন্তান একইভাবে আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের দরবারে। সব কিছুকে প্রতিহত করে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
তাই সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে আজকের দিনটিতে বাংলার সাহসী কন্যার জন্য আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমীনের কাছে দীর্ঘায়ু কামনা করি যেন এই দেশটিকে আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে পারে। জাতির জনকের সাহসি কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন, ব্যক্তিগতভাবে তার হারানোর কিছু নেই; কিন্তু দেশবাসীকে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার আছে সবকিছু। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন বলেই দেশবাসী ভাবতে পারছে, আমরাও পারি আমরাও পারব। ভালোমন্দের সাথে লড়াই করে মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে আমরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হব। দেশবাসী এই শুভ জন্মদিনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুস্থ-সবল-সক্রিয়-সফল-সুদীর্ঘ জীবন কামনা করে এবং জানায় সশ্রদ্ধ অভিবাদন ও শুভেচ্ছা।
লেখা: আখতার-উজ-জামান। লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
আমারসংবাদ/এমএস