Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বপ্নপূরণের সফল কারিগর শেখ হাসিনা

অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া

অক্টোবর ২৮, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


স্বপ্নপূরণের সফল কারিগর শেখ হাসিনা

একবার চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন, ২০০৫ সালের বাংলাদেশ ও ২০২১ সালের বাংলাদেশ! এখানে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ধারা এখন দৃশ্যমান তা কেবলই শেখ হাসিনার অবদান। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়িকে যেই জহুরি উন্নয়নের তীর্থস্থান হিসেবে রূপান্তরিত করেছে তিনি আর কেউ নন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। যার রাজনৈতিক নেতার চেয়েও বড় পরিচয় তিনি একজন যোদ্ধা, একজন অভিভাবক, একজন ক্রাইসিস ম্যানেজার। 

একটি কথা প্রচলিত রয়েছে— তিনি হার মানতে জানেন না। দেশের প্রায় সব মানুষই স্বীকার করেন, হার না মানার যোদ্ধার নামই শেখ হাসিনা। যখনই কোনো সংকট দেখা দেয়, সবাই যখন অজানা আশঙ্কায় প্রহর গুণতে থাকে। তখনই একজন মানুষ অদম্য দৃঢ়তায় সেই আশঙ্কাকে দূর করে দেন, তিনিই শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ও বাস্তাবায়িত হচ্ছে। জাতির পিতার অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো তার চরিত্রে মানুষের প্রতি বিশ্বাস-ভালোবাসা, সততা, দক্ষতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার বিশেষ গুণ বিদ্যমান। তার কর্ম ব্রত ও হিমালয়সম দৃঢ়তা তাকে স্থান দিয়েছে মহাকালের অনন্তযাত্রায়। 

রেকর্ড চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেছেন। এ জন্যই তিনি আজ বিশ্বনেতা। নানা বাধা-বিপত্তি, বৈরিতা এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই তাকে পথ চলতে হয়েছে, চলতে হচ্ছে। অদম্য মনোবল, সাহস এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি দেশ এবং আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতার কন্যা এখন জাতির অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন। তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশের।

রাজনীতিবিদ পিতার ঘরে জন্ম নিলেও তিনি আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের সভাপতি হবেন এবং পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব তার ওপরই বর্তাবে এটি হয়তো তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। তার পিতা, যার রক্তে মিশেছিল রাজনীতি, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি সেই শেখ মুজিবুর রহমানও তেমনটি ভাবেননি, হয়তো চানওনি। অথচ সেটাই হয়েছে এবং ইতিহাসই হয়তো এটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। 

শিশু বয়স থেকেই শেখ হাসিনা বাবাকে খুব খেয়াল করতেন, বাবার কাজে আগ্রহ দেখাতেন, অনুকরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন। বাবার নেতৃত্বের গুণ ছাত্র জীবন থেকেই শেখ হাসিনার ধমনীতে প্রবাহিত ছিলো, তাই ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে নাম লেখান। ইডেন কলেজে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালেও তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে শুরু করে গোটা জীবন তার নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে। 

সারা বিশ্বে দূরদর্শিতার চিহ্ন তিনি এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত রেখে চলেছেন। পদ্মা সেতুসহ জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষমাত্রার প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের স্বাক্ষর রেখে ইতোমধ্যে তিনি সমগ্র বিশ্বে অর্থনীতির রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তির দর্শন, চেতনা আর মানবতাবাদী পদক্ষেপ সারা বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরে ছোট্ট গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাদের দুই সন্তান তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় ও আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। 

বিশ্বের মানচিত্রে শান্তির পতাকার রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ও সুরক্ষা নিশ্চিতে তাদের জন্য আলাদা অবকাঠামো নির্মাণ করে সমগ্র বিশ্বের প্রশংসিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সবসময়ই আপসহীন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব তার সরকার ১৯৭১ সালে সংগঠিত মানবতাবাদী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এই ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে এবং রায় কার্যকর করা হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন তিনি। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। হত্যার জন্য কমপক্ষে ২২ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাকে দু’বার গৃহবন্দি করা হয়। 

১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দি হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় এক বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। 

শেখ হাসিনা সরকারের যত অর্জন : ২০০৯-১৩ মেয়াদে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে— বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, পাঁচ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ বছরে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস, জাতিসংঘ কর্তৃক শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ ইত্যাদি। 

২০১৪-১৮ মেয়াদে উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থলসীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন, (এর ফকে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন শুরু, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ ইত্যাদি।

২০১৯ থেকে চতুর্থ মেয়াদে এ পর্যন্ত অর্জিত উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্তিকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া এবং ঢাকায় মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলা শহরের সংযোগ সড়ক চার-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। 

রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বহুমুখী প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে। সবগুলো বিভাগে আইসিটি পার্ক নির্মাণকাজ চলমান। বর্তমানে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। 

লেখক : সদস্য তথ্য ও গবেষণা-বিষয়ক উপ-কমিটি, আওয়ামী লীগ