Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ছাত্র রাজনীতির একাল-সেকাল 

মালিহা মুনতাসীর আরশী

জানুয়ারি ১৫, ২০২২, ১২:০০ পিএম


ছাত্র রাজনীতির একাল-সেকাল 

ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা এবং তাদের স্বার্থের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগ করাকে ছাত্ররাজনীতি বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে ছাত্র রাজনীতির সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা তোলা, এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করানো এবং সেই এজেন্ডার পক্ষে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে পরিচালিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ছাত্র রাজনীতি বলা যায়। সংজ্ঞাটি বৈশ্বিক। বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সংজ্ঞা একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখানে ছাত্ররাজনীতি শুধুই ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণ নিয়ে কাজ করে না। 

এখানে ছাত্ররাজনীতির পরিধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে দেশময় ছড়িয়ে আপামর জনতার কাছে পৌঁছে গেছে। এখানকার ছাত্ররাজনীতি প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস ভিন্ন। এখানে ছাত্ররা দেশ স্বাধীন করে ফেলেছে। 

এখানে ছাত্ররা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে। এখানে ছাত্ররা অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এখানে ছাত্ররা শোষিতের পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক অর্জন। সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির যেসব অর্জন আছে, তা বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। এই জায়গাগুলোতেই মূলত আমাদের ছাত্ররাজনীতি অনন্য।

তাই ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা এ দেশে দিনদিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের জনসংখ্যা বেশি। দেশের মানুষের মধ্যে এখনো ১০% এর উপরে চরম দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। মানুষের মধ্যে এখনো রাজনৈতিক জ্ঞান পুরোপুরি প্রসারিত হয়নি। এখানে সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অভাব, এখানে এখনো নেতাদের মধ্যে ক্ষুদ্রস্বার্থের প্রভাব অনেক, এ দেশের মানুষ এখনো অনেকাংশে নিরক্ষর, এইসব বিষয় বিবেচনা করেই এ দেশে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা অনেক। ছাত্ররাজনীতি নেতৃত্ব গুণ তৈরি করে, ছাত্ররাজনীতি সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়াকে কাছে থেকে দেখতে সাহায্য করে, ছাত্ররাজনীতি বৃহদস্বার্থের মূল্য শেখায়, ছাত্ররাজনীতি শোষকের হাত থেকে শোষিতদের বাঁচানোর তাগিদ দেয়, ছাত্ররাজনীতি অধিকার সচেতনতা শেখায়, ছাত্ররাজনীতি দেশের প্রকৃত চাহিদার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দেয়, ছাত্ররাজনীতি নেতাদের মধ্যে নৈতিকতা তৈরি করে। ছাত্ররাজনীতি বৈশ্বিক রাজনীতির সাথে সামঞ্জস্য করে সুষ্ঠু রাজনীতি করা শেখায়। তাই ছাত্ররাজনীতিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।

তবে বর্তমান সময়ে ছাত্ররাজনীতির মধ্যে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোকে অবশ্যই শক্ত হস্তে মূলোৎপাটন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি জৌলুস ধরে রাখতে হবে। এ দেশে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা এখনো অনেক। আগামী দিনের ছাত্ররাজনীতি হবে আরও সমৃদ্ধ এবং অমিত সম্ভাবনার। 

লেখা-  মালিহা মুনতাসীর আরশী।
বাংলা বিভাগ, সরকারী কাজী নজরুল কলেজ।