Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

‘গণতন্ত্র ব্যতিরেকে উন্নয়ন হতে পারে না’

জুন ৭, ২০১৫, ১২:৩২ পিএম


‘গণতন্ত্র ব্যতিরেকে উন্নয়ন হতে পারে না’

সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। রোববার বিকেল ৪টা থেকে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গণতন্ত্র ব্যতিরেকে উন্নয়ন হতে পারে না উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেছেন, আজকের বাংলাদেশে গণতন্ত্র পরে হবে উন্নয়ন আগে হবে সেটা হতে পারে না। যদি না দেশে বিচারব্যবস্থা সবার ওপরে না থাকে। যদি না দেশে পুলিশ বিভাগ সম্পূর্ণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করতে না পারে।

মঈন খান আরও বলেন, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেফতার থাকাসহ সার্বিক বিষয়গুলো উঠে এসেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, গণতন্ত্র, ইত্যাদি ইস্যুতে মোদির সঙ্গে বিএনপিপ্রধান কথা বলেছেন।

মঈন খান বলেন, ‘আমরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করেছি। কথা হয়েছে সার্কের পরিমণ্ডলে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন নিয়েও।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। আমি কেবল নিজের পরিমণ্ডলে শান্তশিষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে থাকব, অন্য কেউ সমস্যা সৃষ্টি করবে না তা হতে পারে না। আজকে বিরোধী দলের ওপরে অত্যাচার, মহাসচিব থেকে শুরু করে, স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে হাজার হাজার কর্মীর ওপর যেভাবে অত্যাচার-অনাচার করা হচ্ছে এ বিষয়গুলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে আলোচনায় আপনাআপনি উঠে এসেছে।’

বিএনপির এই নেতা বৈঠক সম্পর্কে আরো বলেন, ভারতে যেভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি তৃণমূল পর্যায় থেকে আজকে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, সেটা সম্ভব হয়েছে কেবল গণতন্ত্রের কারণে। এটা স্পষ্ট, কেবল দক্ষিণ এশিয়া না সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্র ব্যতিরেকে কোনো মানুষের কল্যাণ হতে পারে না। এ জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে, তা অর্থহীন যদি এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে।

‘আমরা আয়তনে ভারতের চেয়ে ছোট হতে পারি কিন্তু যে কথাটি আমরা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি, আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক নির্দেশক যদি ভারতের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আমরা দেখব ভারতের চেয়ে অনেক ওপরে অবস্থান করছি। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় গণতন্ত্র। সে ক্ষেত্রে আমরা ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছি। এ দেশে কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ সরকারের কাছ থেকে পাইনি,’ যোগ করেন মঈন।

একান্ত বৈঠকের আগে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মোদির বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, গণতন্ত্র, ইত্যাদি ইস্যুতে মোদির সঙ্গে বিএনপিপ্রধান কথা বলেছেন।

তবে গত শুক্রবার সকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছিলেন, সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকের কোনো সম্ভাবনা নেই।

অবশ্য ওই দিন বিকেলেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব সুব্রমানিয়াম জয়শঙ্কর জানান, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

মোদির ঢাকা সফরের প্রথম দিন গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম স্থলসীমান্ত চুক্তির প্রটোকলের অনুসমর্থনে সই। এর মধ্য দিয়ে দেশভাগের পর থেকে জিইয়ে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান হলো।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮-দলীয় জোট। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এই দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে নির্বাচন দেয় এবং জয়লাভের পর সরকার গঠন করে। যদিও সেই সময়ই আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ফলে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও হারায় বিএনপি।

চলতি বছরের শুরুর দিকে বর্তমান সংসদের মেয়াদের এক বছর উপলক্ষে আবারও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে বিএনপি ও এর জোটসঙ্গীরা। এই নিয়ে মহাজোট ও ২০-দলীয় নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষা দিবস ও বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করে। এ উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক দেয় ২০-দলীয় জোট।  কিন্তু পুলিশি বাধায় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় থেকে বেরই হতে পারেননি খালেদা জিয়া। পরে সেখান থেকেই ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন তিনি। টানা ৯৩ দিনের অবরোধ-হরতালের পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ২০-দলীয় জোট। বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া।

সর্বশেষ, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয় ২০-দলীয় জোট। এই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে এনে তা বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি।