Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫,

জীবননগরে যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

প্রিন্ট সংস্করণ॥ আজাদ হোসেন/মনিরুল ইসলাম

জানুয়ারি ৩০, ২০১৮, ০৯:০৪ পিএম


জীবননগরে যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আব্দুস সালাম ঈশা সভাপতি, খায়রুল বাশার শিপলু সাধারণ সম্পাদক ও শরীফুল ইসলাম মিন্টুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট জীবননগর উপজেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা

কঠোর নিরাপত্তা ও টানটান উত্তেজনার মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর পর জীবননগর উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন গতকাল মঙ্গলবার শাপলাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় সম্মেলন এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা সম্মেলন এলাকায় সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন। একই স্থানে পাল্টা সমাবেশ ডাকলেও প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাউকে অবশ্য সমাবেশ করতে দেখা যায়নি। সম্মেলন শেষে আব্দুস সালাম ঈশা সভাপতি, খায়রুল বাশার শিপলু সাধারণ সম্পাদক ও শরীফুল ইসলাম মিন্টুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট জীবননগর উপজেলা যুবলীগের নবনির্বাচিত কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় এ সম্মেলনকে ঘিরে যুবলীগের অপর একটি গ্রুপ শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে উপজেলা যুবলীগের নামে আহ্বানকৃত ওই সম্মেলনকে বিতর্কিত সম্মেলন আখ্যায়িত করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলন বন্ধ করা না হলে তা প্রতিহত করতে বাসস্ট্যান্ডে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঈশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক আসাদ। এসময় তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া যুবলীগে কোনো নেশাখোর, সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। পরিচ্ছন্ন ও সাহসী কর্মীদের নেতৃত্বে আনতে হবে; যাতে করে জামাত-বিএনপির সকল ষড়যন্ত্র ও হুমকি মোকাবিলা করে আবারো নৌকাকে বিজয়ী করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব উপহার দিতে পারে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ যুবলীগের ঐতিহ্যবাহী গর্বের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আজকে যে যুবলীগের কমিটি এখানে গঠন করা হবে সেটা কোনো সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার সেলুনের হবে না, আলী আজগার টগরের হবে না, আমি আজাদেরও হবে না। প্রকৃত অর্থেই সেই যুবলীগ হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগার টগর। তিনি বলেন, মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে ২০০৮ সালে আমাদের সরকার যাত্রা শুরু করে আজ পর্যন্ত উৎপাদন করেছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৬০ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বছরের পয়লা তারিখেই বিনামূল্যে নতুন বই দেয়া হয়। অপরদিকে বিএনপি সরকার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বই দিত নতুন পুরনো মিলিয়ে। তিনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মার্তৃত্বকালীন ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, বিশ্বের কোথাও এগুলো নেই। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক জননেতা হাসেম রেজা বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন, আমি আপনাদের সন্তান, আপনাদের সাথে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করতে এবং চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যুবলীগের সম্মানিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে সারাদেশে যুবলীগ আজ সুসংগঠিত ও ইস্পাত কঠিন শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ। আগামীতে এই যুবলীগের ছেলেরাই আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে সকল অপপ্রচার, অপরাজনীতি আর নেতিবাচক কর্মকা- প্রতিহত করতে সক্ষম বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল ইউনিটে শক্তিশালী যুবলীগের কমিটি গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের অপর সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. কায়সার আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহমেদ, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্তুজা, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবির, জিল্লুর রহমান ও নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান, ঝিনেদা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আশফাক আহমেদ জন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সালাউদ্দীর কবির।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে এখানে যুবলীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ কমিটি দীর্ঘ ১৬ বছর বলবৎ থাকলেও নানা কারণে তারা যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি দীর্ঘ ৬ বছর কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আব্দুস সালাম ঈশাকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের আবারো একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ আহ্বায়ক কমিটি ৩ বছর পর গতকাল সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলন শুরুর আগে সকাল ১০টায় স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা জননেতা হাশেম রেজাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জীবননগর উপজেলার হাসাদহে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাধ্যমে বরণ করে শোভাযাত্রা সহকারে সম্মেলন স্থলে নিয়ে আসে।