Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

আওয়ামী লীগে বিদ্রোহ করলেই শাস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৯, ২০২০, ০৯:২৫ এএম


আওয়ামী লীগে বিদ্রোহ করলেই শাস্তি

বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা নেতাদের বিদ্রোহ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আগামী দিনে আর নৌকা প্রতীক পাবেন না। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শনিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক সূত্র।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, মুহাম্মদ ফারুক খান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

সূত্র জানায়, আসন্ন ২৫ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ১০৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এদের মধ্যে দু-তিনটিতে বিগত নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পাওয়া বিদ্রোহী নেতারাও ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা তোলেন একজন নেতা। পরে জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল সংগঠনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে একাধিক নেতা কেন্দ্রের কঠোর অবস্থান গ্রহণে গুরুত্ব দেন। নেতাদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের আলোকেই ২৫ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, আমরা এখন দলীয় শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সে কারণেই বিদ্রোহীদের পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, ক্ষমতার লোভ, অনুপ্রবেশ ঘটানো এবং দায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি। স্থানীয় সাংসদ এবং জেলা-উপজেলাপর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের বলয়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষ, হামলা-মামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তৎপর আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টি করা জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ উঠলেই সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেসব জেলা ও উপজেলার নেতারা নিজেরা কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর তালিকা ধরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত জানান দলীয় সভাপতি। কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যর্থ হলে দলীয় সভাপতি হস্তক্ষেপ করবেন বলে জানানো হয়। এরইমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত  সাংগঠনিক সম্পাদকরা দলীয় সভাপতির কাছে তাদের রিপোর্ট উত্থাপন করেছেন। ওই রিপোর্টে বিদ্রোহ, দ্বন্দ্ব আর বিভেদে ভরা জেলা, উপজেলা কমিটির তালিকা দিয়েছেন। দলীয় সভাপতি সেইসব তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। শিগগিরই বেশ ক’টি জেলার দলীয় নেতাদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এদিকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের তৃণমূল নেতাদের কাছে দলীয় সভাপতির কঠোর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

সম্প্রতি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কয়েকটি ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত জনপ্রতিনিধি ও দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কঠোর নজরদারিতে আছেন। আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার পাশাপাশি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন নীতি অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল।

তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হয় না। যেকোনো অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া মাত্রই নেয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা স্বপ্রণোদিত হয়ে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন, তা এখনো চলমান আছে, ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। 

রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধ করার কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগে নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল কখনো কোনো অপরাধীকে রক্ষা করার ঢাল হবে না। শেখ হাসিনার কাছে অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই। গুটিকয়েক মানুষের অপরাধের জন্য সরকারের অনন্য অর্জনগুলো ম্লান হতে দেয়া যায় না। অপরাধের দায় ব্যক্তির, দলের নয়। পুরো দেশে সাংগঠনিক নেতৃত্বের ওপর দলীয় সভাপতির দৃষ্টি রয়েছে। 

আমারসংবাদ/জেআই