Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ছাত্র অধিকার পরিষদের নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা

জুলাই ১৬, ২০২১, ০৩:৪৫ পিএম


ছাত্র অধিকার পরিষদের নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হানিফ প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রথম কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন।  আগামী ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণা করে হবে। আজ (১৬ জুলাই) ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়।  আগামী১৮ জুলাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ২৩ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমাদান। ২৬ জুলাই মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ ও প্রকাশ এবং ২৭ জুলাই প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষ দিন। 

তফসিল ঘোষণা কালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারুণ্যের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগকে সামনে রেখে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে ছাত্র অধিকার পরিষদকে নতুন আঙ্গিকে পরিপূর্ণ একটি কাঠামোগত রূপ দেওয়া প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো এই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ভোটে কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচিত নেতৃত্ব সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। 

সেই নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে গত ০২ জুলাই কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ এর জরুরি আলোচনা সভায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর খসড়া গঠনতন্ত্রের ১৪ নং অনুচ্ছেদ বলে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। উক্ত কমিশনে আমরা দায়িত্ব প্রাপ্ত হই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। 

আবু হানিফ জানান,  নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার আগেই খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে। তফসিল ঘোষণা করে প্রার্থীতা চূড়ান্তের আগে/পর খসড়া ভোটার তালিকা ঘোষণা করা হবে। ২৪ (চব্বিশ) ঘণ্টার মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকার উপর আপত্তি দেয়া যাবে। নির্বাচন কমিশন বরাবর সরাসরি বা ই-মেইলে লিখিতভাবে আপত্তি দেয়া যাবে। খসড়া ভোটার তালিকার বিষয়ে আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা ঘোষণার তারিখ তফসিলে উল্লেখ থাকবে।

ভোটার হওয়ার যোগ্যতা
১. ভোটার হতে হলে অবশ্যই কাউন্সিলর হতে হবে। কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটির দেয়া কার্ড দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম থাকা সাপেক্ষে ভোট দিতে পারবেন। অথবা নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে একটি ভোটার কার্ড ইস্যু করতে পারবেন। 
২. কেন্দ্রীয় কমিটির সকল পর্যায়ের পদধারী পদাধিকার বলে কাউন্সিলর বিবেচিত হবেন। কেউ পদত্যাগ করলে বা কাউকে ইতোপূর্বে বহিষ্কার বা পদ স্থগিত করা হলে তার ভোটাধিকার থাকবে না। 
৩. সকল জেলা/মহানগর /বিশ্ববিদ্যালয়/সমপর্যায়ের সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আহ্বায়ক কমিটির ক্ষেত্রে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদাধিকার বলে কাউন্সিলর হবেন। এক্ষেত্রেও কেউ বহিষ্কার হলে তার স্থলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাউন্সিলর হিসেবে গণ্য হবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ না থাকলে ঐ পদ শূন্য থাকবে।   
৪. একই ব্যক্তি একাধিক পদে (কেন্দ্র ও শাখায়) থাকলে ভোটার তালিকায় একবারই নাম থাকবে।

প্রার্থীর যোগ্যতা

১। নির্বাচনে যে কোনো পদে প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষে সংগঠনে ০২(দুই) বছরের বেশি সময় ধরে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ দিতে হবে।  এই বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণাদি দাখিল করতে হবে। কোন মিথ্যা বা ভুল প্রমাণাদি দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
২। সংগঠনে পদ গ্রহণের জন্য প্রার্থীর বয়সসীমা ২৮ বছরের মধ্যে হতে হবে। বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে এসএসসির সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
৩. প্রার্থীগণের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আদালতে চলমান আছে কি/না, থাকলে তা কেন হয়েছিল তার বিবরণ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দিতে হবে। প্রার্থীগণ অতীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন থেকে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বহিষ্কার হলে বা পদ হারালে বা পদ স্থগিত হলে সেই বিবরণও নির্বাচনী মনোনয়পত্রের সঙ্গে দাখিল করবেন। এ সংক্রান্ত কোনো বিবরণ মিথ্যা প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। 
৪. প্রত্যেক প্রার্থীকে অবশ্যই শিক্ষা জীবন চলমান আছে এ সংক্রান্ত প্রমাণপত্র মনোনয়পত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীকে ন্যূনতম স্নাতক পাশ হতে হবে। সাংগঠনিক সম্পাদকের ক্ষেত্রে কমপক্ষে অনার্স তৃতীয় বর্ষ পাস( এই শর্ত শুধু ১ম কাউন্সিলের জন্য) হতে হবে এক্ষেত্রে শিক্ষা জীবনের সর্বশেষ সনদপত্র/নম্বরপত্র/প্রবেশপত্র  মনোনয়পত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও কাগজপত্র মিথ্যা বা জাল প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল হবে। 
৫।সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদে যেকোনো (বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ /জেলা/ মহানগর ) ইউনিটের কাউন্সিলর এক্ষেত্রে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে। একেত্রে সে তার আগের পদ থেকে পদত্যাগ করে আসতে হবে এবং পরাজিত প্রার্থী কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে হলে মোট ভোটের ১৫% ভোট পেতে হবে। পরাজিত হয়ে নিজের পুর্বাস্থা যেতে পারবে না।
৬। প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিট থেকে প্রাথমিক সদস্য, সাবেক অথবা পদে ছিলেন এমন প্রমাণাদি দাখিল করতে হবে।
৭। প্রত্যেক প্রার্থীকে অবশ্যই সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি রঙ্গিন ছবি দাখিল করতে হবে। 
৮। জেলে আটককৃতগণ উপরের শর্তাদি পূরণ করে প্রার্থীতা করতে পারবে। তাদের পক্ষ থেকে একজন মনোনীত ব্যক্তি তাদের পক্ষের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। তবে উক্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা সাংগঠনিক সম্পাদক ভোটার কিংবা প্রার্থী হতে পারবেন।
৯। যেকোনো পদে নির্বাচন করতে হলে বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধি

১. নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে যেকোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি সমান অধিকার লাভ করবেন। প্রত্যেক প্রার্থী শুধু একটি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। নির্বাচনে কোনো প্রার্থী প্যানেল ঘোষণা বা প্যানেল ভিত্তিক প্রচারণা চালাতে পারবেন না।  
২। প্রার্থীগণ কোন প্রকার মুদ্রিত পোস্টার, ব্যানার  নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তবে অনলাইন প্লাটফর্মে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন। জেলে আটককৃত কেউ নির্বাচন করলে তার পক্ষে মনোনীত যেকোন একজন তার যাবতীয় কাজ করতে পারবেন।প্রার্থী বত্যীত অনলাইন পোস্টারে অন্য কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। 
৩. অনলাইনে প্রচারণার ক্ষেত্রে শুধু সংগঠন নিয়ে নিজের পরিকল্পনা ও ইশতেহার তুলে ধরা যাবে। তবে কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থক অনলাইনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য কোনো প্রার্থীকে হেয় প্রতিপন্ন করে বা প্রার্থীর প্রতি বিদ্রুপ বা কুৎসা রটনামূলক, উস্কানিমূলক বা মানহানিকর বক্তব্য বা বিবৃতি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে প্রচারণা করতে পারবেন না। 
৪. তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীগণ বা মনোনীত ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। তবে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে সমস্ত প্রচারণা বন্ধ থাকবে। প্রার্থী বা তার পক্ষে কাউন্সিল বা নির্বাচন চলাকালে কোনো প্রচারণা চালানো যাবে না। প্রার্থী/এজেন্টগণ নির্বাচনকালে শুধু ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। 
৫. প্রার্থীগণ নিজের পরিচয়, সংগঠনে নিজের কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উল্লেখ করে অনলাইনে বা ছাপা লিফলেটের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারবেন।  
৬. তিন সংগঠনের সমন্বয়ক, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কারও পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। 
৭. প্রার্থী বা তার সমর্থকগণ কোনো প্রকার সভা, সমাবেশে আপ্যায়ন বা কোন ধরনের উপহার সামগ্রী কিংবা অর্থ লেনদেন করতে পারবেন না। 

৮. এই আচরণবিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ শুধু নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে বা ই-মেইলের মাধ্যমে দেয়া যাবে। গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অভিযোগ শেয়ার করা যাবে না। 
৯. তফসিলের পর নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। অভিযোগ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল কমিশনের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে করণীয় নিয়ে সুপারিশ করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 
১০. কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে উক্ত ব্যক্তির প্রার্থীতা বাতিলসহ যেকোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনার গ্রহণ করতে পারবেন।

ভোটগ্রহণ ও ফলাফলের পদ্ধতি:

ভোটারগণ নির্ধারিত সময়ে ও নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত স্থানে শারীরিক উপস্থিতি অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে (নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্ধারণ করেন) ভোট দিতে পারবেন এবং এই বিষয়টি যথা সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। ভোটগ্রহণের পর নির্বাচন কমিশন বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল ঘোষণা করবে। ফলাফলে প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা উল্লেখ থাকবে। নির্বাচনী ফলাফল অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেক সদস্য কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে।

আমারসংবাদ/ইএফ