Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ঢাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জেগে ওঠার আহ্বান ফখরুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ৩০, ২০২১, ১১:০৫ এএম


ঢাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জেগে ওঠার আহ্বান ফখরুলের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা দেখি যখন কোনো বোন ধর্ষিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন প্রতিবাদ মিছিল হয় না। আমরা টিপাইমুখ নিয়ে কথা বলি, বাঁধ তৈরি করতে চাই যাই, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না। আবার গণতন্ত্রকে যখন ধ্বংস করা হয়, আবরারের  মতো ছাত্রকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দেয়া হয় , তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না, এটা দুঃখের কথা। তরুণরা, আমাদের যুবকেরা যদি জেগে না উঠে পরিবর্তনটা আসবে কিভাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আজ তরুণদের জেগে উঠতে হবে। 

শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে হোটেল সোনারগাঁও "পদ্মা হল" এ "অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী সংবর্ধনা গ্রন্থ" অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকেই এখন হতাশ। আজকে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিল এই অবস্থা আর কতদিন চলবে? এটাই এখন মানুষের মধ্যে একটা বড় জিজ্ঞাসা!  যে পরিবর্তনটা কবে আসবে..  চতুর্দিকে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। এই অবস্থা থেকে আমরা কবে বের হতে পারব। এ সমস্ত কথাগুলো আমি সহজ উত্তর দিতে চাই।  আমরা অবশ্যই বের হতে পারব । কারণ এদেশের মানুষ কখনোই পরাজয় বরণ করেনি। পাকিস্তান সময় , ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ,  মানুষ যখন জেগে উঠেছে তখন পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।  তাই মানুষকে জেগে উঠতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, আজ শুনেছি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়,  স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি  নথি চুরি হয়ে গেছে।  শাহবাগ থানায় ডায়েরি করা হয়েছে।  এই হচ্ছে বর্তমান সরকারের শাসকদের শাসন ব্যবস্থা। এই অবস্থা শুধু এখানে নয় দেশের প্রতিটা জায়গায় চরম নৈরাজ্য চলছে । লক্ষ্য একটি কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়।  মানুষের কল্যাণের জন্য,  দেশের কল্যাণের জন্য,  সেটির কোন চিন্তাই নেই । আমরা করোনার  সময় দেখেছি কিভাবে ভয়াবহ সময় মানুষ মারা যাচ্ছে , আহাজারি।  সে সময়ে ছিল অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা । স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ড্রাইভারেরও চারশ কোটি টাকা। এই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে শিক্ষাখাতে।  রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে একরাতে ১৬৯ ব্যক্তিকে  রাতের অন্ধকারে নিয়োগ দেয়া হয়। এখন যে সমাজ তৈরি করেছি,  যে পরিবেশ তৈরি করেছি এখান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না । সেই যায়গায় প্রফেসর আনোয়ারুল হক চৌধুরীর কৃতিত্বকে জায়গায় এইখানে।  সবার মধ্যে যখন খাইখাই তিনি কিন্তু খাওয়ার চিন্তা করেননি।  এখানে তার বিজয়। এখানে তার শান্তি।  এসমস্ত গুণীজনদের আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা করি । তারা এখনো আমাদেরকে আশার আলো দেখায়। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এক ভিন্ন জগতের মানুষ, আমাদের চিন্তা ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে । আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী সময় ছাত্র রাজনীতি একটা প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে। সেই সময় ষাটের দশকে যখন গোটা বিশ্বে রাজনীতির ধরনটা ছিল ভিন্ন। ধরণটা ছিল সমাজ পরিবর্তনের । রাজনীতি উচ্চগতিতে তরঙ্গের মতো চলছিল। সে সময় আমরা ছাত্ররা,  ছাত্ররাজনীতি পরিবর্তনের রাজনীতি সমাজটাকে বদলে দিতে হবে।  তখন আমরা বলতাম ঘুনে ধরা সমাজ তাকে পাল্টে দিয়ে নতুন করে সাজাতে হবে। মানুষের জন্য,  বিশেষ করে সাধারন মানুষের জন্য,  খেটে খাওয়া মানুষের জন্য , একটা অধিকারের রাষ্ট্র , একটা জীবন তৈরি করতে হবে। 

[media type="image" fid="148259" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

কিন্তু প্রফেসর আনোয়ারুল হক চৌধুরী সেই সময়ের যে কাজগুলো, যে ধারণা যে কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছেন এবং আমাদেরকে তিনি যেভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন এখনো কিন্তু তার কাজের মধ্য দিয়ে তার লেখা ও চিন্তার মধ্য দিয়ে সেই ধারণা সে স্বচ্ছতা এখনো বজায় রেখেছেন। আমি বলব তিনি অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।  আর যেটা পারেনি সেটা বলব এ সমাজ তাকে সফল হতে দেয়নি।  তবে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন সফল মানুষ,  একজন ভালো শিক্ষক ছিলেন,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তিনি ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন,  তিনি কূটনৈতিক হয়েছেন , রাষ্ট্রদূত হয়েছেন,  এখনো তিনি শিক্ষকতা পেশায় আছেন।  নিঃসন্দেহে তিনি অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী তৈরি করেছেন।  তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন,  প্রায় দু'ডজন উপরে তার ছাত্র এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর,  তার অধীনে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি লাভ  করেছেন। 

[media type="image" fid="148258" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

মির্জা ফখরুল বলেন,  কিন্তু দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় যেটি ছিল,  যে সময়টাকে আমরা পাই এবং মনে হয় তা হচ্ছে নষ্ট সময়।  আমরা এমন একটা সমাজে বাস করছি,  এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি,  আমরা যে ধারণা গুলো তৈরি , করেছিলাম , আমরা যে মূল্যবোধগুলো সৃষ্টি করেছিলাম , আমরা যে  আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম,  এখন মনে হচ্ছে সেগুলোর জন্য কোন মূল্যই নেই।  আগে যখন শিক্ষকরা হেঁটে যেতেন তখন ছাত্ররা উঁচু মাথা নিচু করে থাকতেন।  বলতো একজন পন্ডিত মানুষ হেঁটে যাচ্ছেন।  এখন যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে দেখি তাদের কথা যখন শুনি,  বলতে এখন দ্বিধা নেই লজ্জিত হই!  এই একটা পরিবেশে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি।  আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করলাম,  সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে আঙ্গুল তুলে কথা বলা হয় , সরি টু সে,  অনেকে কষ্ট পাবেন তবু আমাকে বলতে হচ্ছে।  এই ব্যবস্থাটা এমন একটা জায়গায় চলে গেছে আজ শিক্ষার ব্যবস্থাকে বরাদ্দ নেই,  আসলে এখানে তো বরাদ্দ পাওয়ার কথা না,  বরাদ্দ হবে মেগা প্রজেক্ট গুলোতে । যেগুলোতে কমিশন পাওয়া যাবে প্রচুর আয় হবে। 

বাংলা একাডেমির সাবেক মহা-পরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসার সভাপতিত্বে ও বিএনপি চেয়ারপার্সন  উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য কবি আব্দুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, নাগরিক ঐক্য, আহবায়ক  মাহমুদুর রহমান মান্না,  সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন , প্রফেসর লাকি নাসরিন , প্রফেসর জাহিদুল ইসলাম ,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর রেজাউল করিম ,প্রফেসর আব্দুর রহমান সিদ্দিকী প্রফেসর ড.সুকমল বড়ুয়া, সংসদ সালাউদ্দিন, খৈয়াম ওমর, প্রফেসর খলিলুর রহমান প্রমুখ।


আমারসংবাদ/ইএফ