Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন কমেছে, সরকারের মতোই কথা বলছে বিএমএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১, ২০২১, ০৮:৪৫ এএম


খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন কমেছে, সরকারের মতোই কথা বলছে বিএমএ

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি লিভারের মারাত্মক জটিলতাসহ কয়েকটি জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় তার রক্তের হিমোগ্লোবিন কমেছে। বাংলাদেশের যত চিকিৎসা প্রযুক্তি আছে তার জন্য সবগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন তাকে পূর্ণ সুস্থ করতে হলে অবিলম্বে বিদেশের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো জরুরি। 

এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতারা যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন তা সরকারেরই বক্তব্য। 

বুধবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এমএ সেলিম, ডাঃ মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহীদ হাসান, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো: মেহেদী হাসান, ডাঃ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডাঃ পারভেজ রেজা কাকন, ডাঃ সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডাঃ খালেকুজ্জামান দীপু, ডাঃ নিলোফা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড্যাবের দফতর সম্পাদক ডাঃ ফখরুজ্জামান ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. মোঃ আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া করোনা পরবর্তী জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রিউমোটয়েড আর্থ্রাইটিস, লিভার, কিডনি ও হার্টের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা খুবই আশংকাজনক। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। 

গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানিয়েছেন এবং তার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন।

ডা. সালাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্যের পর চিকিৎসক সমাজ সহ বাংলাদেশের মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। মেডিকেল বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা আর বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তার বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। 

মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এফএম সিদ্দিকী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া বহুদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। তার লিভারের সমস্যার কথা বিবেচনা নিয়েই ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করনো হয়। ওইদিন রাতে খুবই রক্ত বমি হয়। তার খাদ্যনালীতে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে দ্রুত রক্ত ও প্লাজমা ফ্লুইড দেয়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দ্রুত এন্ডোসকোপির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ৬টি জায়গায় ব্যান্ড লাইগেশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই মুহুর্তে তিনি শক এ চলে গিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার ফলে সেই যাত্রায় জীবন রক্ষা পায়। খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস ও হার্ট ফেইলিউরের রোগী। উনার হার্ট ফেইলিউর এমন পর্যায়ে থাকে যে কোনো ডিকম্পেসেশন হলে হার্ট ফেইলিউর হয়। তবুও দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টার ফলে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়। 

তিনি বলেন, তবে এসকল রোগীর পুনরায় রক্তক্ষরণ খুবই স্বাভাবিক (প্রথম সপ্তাহে শতকরা ৫০ ভাগ এবং ৬ সপ্তাহের মধ্যে যা শতকরা ৭০ ভাগ)। পরবর্তীতে ফের রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য আমাদের দেশে যে প্রযুক্তি আছে তা ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া আধুনিক পদ্ধতির প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই, এমনকি উপমহাদেশের বা এশিয়ার অন্য কোনো দেশেও নেই। এই প্রযুক্তিটি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে উল্লিখিত দেশের উন্নত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা পরবর্তীতে স্থানান্তর করাও মুশকিল হয়ে যাবে। 

ডা. সালাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম এর স্ত্রী। গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনে দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তন করেন। তার পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। অথচ আমরা বেদনাহত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি একজন নাগরিকের পছন্দমতো চিকিৎসা নেয়ার মৌলিক অধিকার থেকে তিনি ক্রমাগতভাবে বঞ্চিত। মিথ্যা সাজানো মামলায় রায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ায় আজ ভয়াবহ শারিরীক জটিলতায় উপনীত। ড্যাবসহ বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অংগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানালেও ফ্যাসিবাদী সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। পরিবারের লিখিত আবেদনেরও কোনো গুরুত্ব দেয়নি। হিংসার বশবর্তী হয়ে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে বারবার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গত তিন বছরে সরকারের নিষ্ঠুরতায় বয়স্কা এই নারী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। 

‘এমতাবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমরা জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি মানবিক বিবেচনায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিবেন।’

‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব’ বিএমএ নেতাদের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, এটা অত্যন্ত দু:খজনক। সমাজকে বিভক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষ। খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার মেডিকেল বোর্ড বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে তো নয় বরং উপমহাদেশেও সম্ভব না। সুতরাং বিএমএর নেতৃবৃন্দ যা বলেছেন তা সরকারেরই বক্তব্য। তারা সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আশা ছিল খালেদা জিয়ার এই দু:সময়ে তারা সঠিক কথা বলবেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবেন। 

বিদেশে থেকে চিকিৎসক আনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগের সব চিকিৎসা হয়। তারপরও আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হলে তাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করানো হয়েছে। বিদেশ থেকে একজন চিকিৎসক আনলেই হবে না। এটা টিমওয়ার্ক। সুতরাং এই কথার মানে হচ্ছে সময় ক্ষেপণ করা।

আমারসংবাদ/জেআই