Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪,

বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ: ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার বিকল্প নেই

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ: ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার বিকল্প নেই

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করলেও নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। গত কয়েক দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। গত আগস্ট মাসে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬৯৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। আর এ রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই তিন হাজার ২০০ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে মশার বিচরণ থাকায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন শত শত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে; ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু রয়েছে যাদের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটি মহামারি যদি একত্রে চলমান থাকে, তাহলে মানুষের জীবনের জন্য একটি প্রবল হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আবার করোনা ভাইরাসের সাথে ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ মিলে যাওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন বলেও ধরে নিচ্ছেন। ফলে জটিলতা আরো বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বছর এপ্রিল ও মে মাস থেকেই বেশ বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা— এই তিনটা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক বিধায় এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি হতে পারে এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের ছিলো। তারা ধারণা করছেন, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবটা বেশি থাকবে। এদিকে বড় আশঙ্কার কথাটি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআর। তাদের একটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের রোগীদের মধ্যে তারা ডেঙ্গুর নতুন সেরোটাইপ বা ধরন ডেনভি-৩-এ ঢাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেনভি-১ ও ২-এর বিরুদ্ধে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন এই ধরনটি আগের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
রাজধানীতে এডিসের তাণ্ডব নতুন নয়। এডিস নিয়ন্ত্রণে কি করণীয় এটাও সবার জানা। এ প্রেক্ষাপটে সবাই আশা করেছিল, গত বছরের মতো এবার আর এডিসের তাণ্ডবে অস্থির হতে হবে না। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এবারো ডেঙ্গুর মৌসুমে তাণ্ডব শুরু করেছে এডিস। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হলেও এর সুফল মিলছে না কেন? করোনা প্রতিরোধে সবাই যখন ব্যস্ত সময় পার করছেন, বস্তুত তখনই নীরবে-নিভৃতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। অনেকের জ্বর হলেও করোনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না। এ জন্য ডেঙ্গু আক্রান্তের সঠিক চিত্রও প্রতিফলিত হচ্ছে না। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি রোধে আগে থেকেই কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, এ তথ্য সবারই জানা।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে কার্যক্রম পরিচালিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। দুঃখজনক হলো, অন্য বছরের মতো এবারো এডিসের তাণ্ডব শুরুর পরই মশা নিধনে কর্তৃপক্ষের বিশেষ তৎপরতা দৃশ্যমান হলো।

ডেঙ্গুর কোনো টিকা নেই। কাজেই এ ক্ষেত্রে সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায় হলো মশার কামড় থেকে মানুষকে রক্ষা করা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো— যেসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, সেসব স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ এবং মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা।

যেখানে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, সেখানে স্বভাবতই কয়েকদিন ধরে পানি জমে থাকে। এসব জায়গায় জমে থাকা পানি অপসারণের পাশাপাশি নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এডিস মশা যেন কোনোভাবেই ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়। কোনো ব্যক্তি একই সাথে ডেঙ্গু ও কোভিডে আক্রান্ত হলে রোগীর নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে।

উদ্বেগজনক তথ্য হলো— এমন রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমানো নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা এখনো হয়নি। কাজেই নিরাপদ ও সুস্থ থাকার জন্য সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিক মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতন ও সতর্ক থাকবেন, এটাই কাম্য।