Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা: বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা: বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

কোনোভাবেই থামছে না অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পরও লাগাম টানা যাচ্ছে না অসাধুচক্রকে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রেডিওলিংকের মাধ্যমে বিস্তৃত হচ্ছে এই অবৈধ ব্যবসা।

ফলে একদিকে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে বৈধভাবে দেশে কল আনা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের ব্যবসাও মার খাচ্ছে। প্রতিদিন বাংলাদেশে আসা কলের যে রাজস্ব তার বেশির ভাগ চলে যায় চোরাকারবারিদের পকেটে। অথচ বৈদেশিক কলের ক্ষেত্রে অরাজকতা দূর করতে নীতিমালা বদলানো হয়েছে। কমানো হয়েছে কলরেট। অ্যাপস এসে গেছে হাতের মুঠোয়।

কিন্তু তারপরও রোধ করা যাচ্ছে না অবৈধ কল। শুধু বিটিআরসি নয়, দেশের মোবাইল কম্পানিগুলোও ভিওআইপির অবৈধ কারবারে রাজস্ব হারাচ্ছে। অভিযান চলছে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ভিওআইপির অবৈধ কারবার। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক বিদেশগামীকে তল্লাশি করে পাওয়া যায় অদ্ভুত ধরনের তিন হাজার কার্ড। কার্ডগুলো নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ শহরে যাওয়ার পথে ছিলেন তিনি।

পরে জানা যায়, কার্ডগুলো বানিয়েছে অবৈধ ভিওআইপি চক্র। পরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে এক হাজারের বেশি মোবাইল সিমসহ অবৈধ ভিওআইপির কাজে ব্যবহূত ৫১২ পোর্টের তিনটি সিম বক্স, ২৫৬ পোর্টের দুটি সিম বক্স, চারটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। ঢাকার আরও অনেক বাড়িতে এ ধরনের কারবার হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে র্যাব।

জানা যায়, অবৈধ ভিওআইপি কারবারে জড়িতদের ধরতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫০০ অভিযান চালানো হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রায় ৮০০ কারবারি। এ সময় টেলিটকসহ অন্য মোবাইল প্রতিষ্ঠানের বিপুল সিমসহ কোটি কোটি টাকার ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সরকার প্রতি মিনিট ইনকামিং আইএসডি কলে তিন সেন্ট হিসাবে রাজস্ব পায়।

তবে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস প্রভাইডারসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী, দেশে দৈনিক ১০ কোটি মিনিটের বেশি বৈদেশিক কল রিসিভ হয়। আর তার প্রায় সাত কোটি মিনিটই চোরাইপথে বা ভিওআইপির মাধ্যমে আসছে। আর এই অবৈধ ভিওআইপির কারণে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আন্তর্জাতিক কল উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে।

বিটিআরসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দৈনিক প্রায় ২০ কোটি টাকার বিদেশি কল ভিওআইপির মাধ্যমে চুরি হয়, যা বন্ধ করা গেলে সরকারের দৈনিক সাড়ে ১২ কোটি টাকা আর বার্ষিক চার হাজার ৫৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হতো।

ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাই হতে পারে বড় সহায়ক শক্তি। আমরা দেখি বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। উদ্ধার করা হয় ভিওআইপির কাজে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি। অনেককে গ্রেপ্তারের খবরও আসে গণমাধ্যমে।

আবার এসব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা সহজেই জামিনে বেরিয়ে যায় বলেও অভিযোগ আছে। কাজেই ভিওআইপির অবৈধ কারবার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। দেশের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এমন যেকোনো তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই।