Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

শৈশব হোক মাত্রাতিরিক্ত চাপমুক্ত

অক্টোবর ৯, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


শৈশব হোক মাত্রাতিরিক্ত চাপমুক্ত

‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিক্ত। অর্থাৎ আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতের পিতা-মাতা। এই শিশুরাই দেশের আগামী দিনের কর্ণধার। মানব সৃষ্টির ইতিহাসে প্রচলিত এই নীতিগুলো প্রকৃতির বিধান হিসেবে বিরাজমান। আদি থেকে এই নিয়ম মেনে চলে আসছে মানুষের সভ্যতা, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা।

কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় মানুষের চিন্তায় ইতিবাচকতার পাশাপাশি আসছে নেতিবাচক পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়ছে আজকের শিশুদের ওপরও। বিশেষ করে পড়ালেখায় এসেছে পরিবর্তন। বিগত দিনের শিশু আর আজকের দিনের শিশুদের মাঝে পড়ালেখার নিয়মনীতিতে বিস্তর ব্যবধান তৈরি হয়েছে। সরকার ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে যে নতুন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে, তাতে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়নি।

২০০৯ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পিইসি ও ২০১০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষা চালু করে সরকার। সেই থেকেই পরীক্ষা দুটি চলে আসছে শিক্ষাবিদসহ নানা মহলের বিরোধিতা ও আপত্তি সত্ত্বেও। তবে ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা দুটি হতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মনে আশা জেগেছিল যে পরীক্ষার বাড়তি চাপ থেকে তারা রেহাই পাবে। কিন্তু অক্টোবরে এসেও পিইসির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ব্যাপারটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এখনো জানে না চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাটি (পিইসি) হবে কি না। নীতিনির্ধারকদের এই সিদ্ধান্তহীনতায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মহা দুশ্চিন্তায়। করোনার কারণে চলতি বছর জেএসসি হবে না, সে কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়ে দিয়েছে।

পিইসি ও জেএসসির পক্ষে সরকারের একমাত্র যুক্তি হলো, এর ফলে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। যদি তা সত্যও হয়ে থাকে, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। শিশুদের আত্মবিশ্বাস জাগানোর নানা পথ আছে। শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি পরীক্ষা চাপালে তাদের শিক্ষার মান বাড়ে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং পরীক্ষার কারণে কোচিং ও গাইড বইয়ের ব্যবসা জমজমাট হয়েছে। পরীক্ষা সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে কোচিংয়ে সময় কাটায় কিংবা বাড়িতে প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে। অধিক পরীক্ষা মানে অধিক জ্ঞানার্জন নয়, বরং অধিক প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করা।

শিক্ষার এই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকার নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছে, যেখানে যৌক্তিকভাবেই দশম শ্রেণি বা এসএসসিতে শিক্ষার্থীদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার যদি নিজের ঘোষিত শিক্ষাক্রমকে অমান্য না করে, তাহলে কোনোভাবে উচিত হবে না পিইসি ও জেএসসিতে পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখা।

এক সময় শিশুরা নানা রকম খেলাধুলায় মেতে থাকত। বিশেষ করে গ্রাম-বাংলার শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেত নানা রকম প্রক্রিয়ায়। মুক্ত মাঠে খেলা করা, খাল-বিল-নদীতে সাঁতার দেয়া, মাছ ধরা, শাপলা, শালুক ও পদ্ম তোলা, গাছে গাছে পাখির বাসা খোঁজা- এসব এখন অনেক শিশুর কাছে অলীক কল্পনা।

এগুলো এখন হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের মাঝ থেকে। তার পরিবর্তে স্থান করে নিচ্ছে লেখাপড়ার অসম প্রতিযোগিতা। পরীক্ষার যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে শিশুদের স্বপ্ন ও স্পৃহা। কেবল নতুন শিক্ষাক্রম নয়, সার্বিকভাবে শিক্ষার স্বার্থে শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমানো প্রয়োজন। কেননা, এসব পরীক্ষার কারণে কোচিং-নোটবই ব্যবসার স্ফীতি ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ নেই। জেএসসির মতো পিইসি পরীক্ষাও বাতিল করা হোক। শিশুদের জন্য চাপমুক্ত জীবন নিশ্চিত করা হোক। তাদের ছেড়ে দেয়া হোক তাদের স্বপ্নের জগতে।