Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় অগ্রগতি

অক্টোবর ১২, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় অগ্রগতি

নোয়াখালীর ভাসানচরে সরকার কর্তৃক এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক অর্জন অবশ্যই। এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব এবং জাতিসংঘের পক্ষে শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরের ঢাকার প্রতিনিধি।

ইতোপূর্বে ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তর নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা গুজব, ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে এর অবসান ঘটলো। সরকারের উদ্যোগে কয়েকটি ধাপে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮১৬ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে ভাসানচরে। অতঃপর জাতিসংঘের সহায়তায় আগামী ৩ মাসের মধ্যে ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে ভাসানচরে।

সরকার এবং ইউএনএইচসিআরের যৌথ উদ্যোগে এখন থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও রেশন, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিৎসা এমনকি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে। সরকার জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও কর্মীদের সার্বিক দেখভাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে একই সঙ্গে মূল দায়িত্ব মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মানজনক পুনর্বাসনেও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে জাতিসংঘ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীর সহায়তা ও পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যখন লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয় তখন প্রধানত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে অনেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টেছে।

ইতোপূর্বে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভাসানচর ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে ঢাকায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। অতঃপর যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের পরিবেশ কক্সবাজারের চেয়ে ভালো। সেক্ষেত্রে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে সহায়তা করতে সম্মত জাতিসংঘ। এর জন্য সংস্থাটি অর্থসহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা করতেও সম্মত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশে আশ্রিত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের রাখাইনে পুনর্বাসনকল্পে প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকটিও ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী দেশ ভারতও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটি যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন-নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে পাসের বিষয়টি একটি আশাব্যঞ্জক এবং স্বস্তিদায়ক মাইলফলক অর্জন অবশ্যই। বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা, মুসলিম ও মিয়ানামারের অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়।

অতীতে চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো দেশগুলো বিরোধিতা করলেও এবারে তা হয়নি। কূটনৈতিক বিচারে এটিও বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন অবশ্যই। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। রোহিঙ্গা গণহত্যা, যৌন নির্যাতন-নিপীড়নসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার পথও প্রশস্ত হয়েছে এর মাধ্যমে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে মিয়ানামরের ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এই গুরুদায়িত্ব বহনে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে। সব মিলিয়ে বলা যায়, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার এবং রাখাইনে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এসবই একটি বিরাট অগ্রগতি।