Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মাদকের মূল উৎস বন্ধে ব্যবস্থা নিন

জানুয়ারি ১১, ২০২২, ০৭:৩০ পিএম


মাদকের মূল উৎস বন্ধে ব্যবস্থা নিন

মাদকের ঘাতক কারবার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হলেও মাদক মিয়ানমার ও ভারত সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে। মাদক এখন শুধু মদে সীমাবদ্ধ নয়, ইয়াবা ও আইস নামে নানা মাদক এখন যুবসমাজের সম্ভাবনাময় জীবন নষ্ট করছে। সেই হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আইসকে খুব বিপজ্জনক বলছেন। 

স্বচ্ছ কাচের (ক্রিস্টাল) মতো দেখতে এ মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতিবিভ্রম, মস্তিষ্কবিকৃতিসহ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে এ মাদক সেবনে ওজন হ্রাস, কিডনি ও হূদযন্ত্রের সমস্যা, বিষণ্নতা ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হয়।

অথচ এ মাদক বেশ দামি। এক গ্রাম আইসের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। মাদকাসক্তরা দামের কথা না ভেবে যেকোনো উপায়ে টাকা জোগাড় করে এ মাদক গ্রহণ করে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। আইস বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১৯ সালে প্রথম ধানমন্ডিতে আইসের চালান ধরা পড়ে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, ২০২১ সালে দেশে আইসের ২২টি চালান আটক করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৯টি। অন্যটি পিরোজপুরে। এসব চালানে ৩০ কেজির বেশি আইস জব্দ করা হয়। এখন মূলত মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবার সাথে আইসের চালান আসছে। আর ইয়াবার সাথে আইসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে ঢাকায়। 

তাই দেশের অন্য কোথাও আইস সেভাবে ছড়িয়ে না পড়লেও ঢাকায় একটা বাজার গড়ে উঠেছে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইস উদ্ধারে বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা না করে গতানুগতিক ধারাতেই আইস উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করছে। ফলে আইস-বহনকারী ব্যক্তি ছাড়া এর পেছনের মূল হোতাদের খুঁজে বের করা যাচ্ছে না। 

গত বছরের অক্টোবরে ফেনীতে ২০৩ গ্রাম আইসসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। টেকনাফের বাসিন্দা সে যুবক আইসের চালানটি ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছিল। তাকে গ্রেপ্তার করার পর মামলা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে আসামি করা সম্ভব হয়নি। বিগত দিনের মতোই মাদক-বহনকারী ব্যক্তি মামলায় সাজা পেলেও মাদক সাম্রাজ্যের কর্তা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। 

অন্যদিকে ২০১৯ সালের আগে আইস বাংলাদেশে এসেছে কিনা তারও কোনো তথ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের কাছে নেই। যেকোনো মানুষকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, তারা এর নেতিবাচক দিকই বলেন। দেশের সরকার ও সেবা সংগঠনগুলো মাদককে না বলুন প্রচারণা চালাচ্ছে, তারপরও সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে মাদক দেশে প্রবেশ করছে এবং যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। 

এর পেছনের শক্তিটি কি? সেই শক্তি কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? তবে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? সেই সীমাবদ্ধতা দূর করতে না পারলে মাদকের ঘাতক কারবার থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সরকার যতই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করুন না কেন, মাদকের মূল উৎসের মুখ বন্ধ করতে হবে।