ঢাকা
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,
জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০৭:৫৫ পিএম
শহরাঞ্চলে কিশোর গ্যাং কালচার দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমনকি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না তারা।
উদ্বেগের বিষয় হলো, মাদক নেশার টাকা জোগাতে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো কিশোর অপরাধীরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর অপরাধী, এলাকার ত্রাস। আরও উদ্বেগের বিষয়, ভাড়াটে হিসেবে তারা এখন মানুষ হত্যার মতো অপরাধেও যুক্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে টপটেন পোশাক কারখানার এক কর্মচারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারদের একজন জানিয়েছে, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিহতের চাচাতো ভাই দুই লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের ভাড়া করেছিলেন। শুধু এ ঘটনাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় খাটছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। গ্যাং কালচারের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অবস্থা এখন এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে কিশোর অপরাধের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তারা আরও বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সমাজ ও পরিবারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কিশোর গ্যাং কালচার থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। তিনি বলেছেন, কিশোররা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলেও বয়সের কারণে তাদের শাস্তির আওতায় আনা যায় না। তাদের পাঠানো হয় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে সংশোধিত হওয়া দূরের কথা, তারা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে বেরিয়ে আসে।
সাবেক আইজিপির এ কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে অবশ্যই। কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলো কেন কিশোর অপরাধীদের অপরাধপ্রবণ চরিত্র পালটাতে পারছে না— সে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। বস্তুত কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে নানা কারণ কাজ করছে।
দেখা গেছে, গ্যাং সদস্যদের অধিকাংশই দরিদ্র ও স্কুল থেকে ঝরেপড়া ছাত্র। এসব কিশোর পরিবারসহ বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে প্রথমে মাদকের নেশায় জড়ায়। পরে এরা সমবয়সি অন্যান্য কিশোরের সঙ্গে মিলে অন্য একটি জগৎ তৈরি করে। এরপর কয়েকজন মিলে তৈরি করে একটি গ্যাং। কিশোর বয়সের এসব অপরাধীর মধ্যে এক ধরনের হিরোইজমও কাজ করে থাকে। কার্যকরণ যা-ই হোক, পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ছাড়া গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতা তথা অভিভাবকদের। অভিভাবকদের তীক্ষ দৃষ্টিই তাদের সন্তানদের বিপথগামিতা থেকে রক্ষা করতে পারে। সন্তান কী করে, কার সঙ্গে মেশে, কোথায় সময় কাটায়— এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটর করতে পারলে তাতে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করি।
এছাড়া কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়াটাও জরুরি। তবে কিশোর অপরাধ দমনে সবচেয়ে বড় দায়িত্বটা পালন করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই। দ্রুত এই কালচার রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। এজন্য পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালো পদক্ষেপ জরুরি।
