Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই

জানুয়ারি ২২, ২০২২, ০৭:২৫ পিএম


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই

বিশ্বকে করোনা পরিস্থিতি কতটা বিপর্যস্ত করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ফলে বিঘ্নিত হয়েছে জনজীবনের স্বাভাবিকতা। প্রায় প্রত্যেকটি খাতে পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। সম্প্রতি আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণাসহ পাঁচ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।

এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি জনসমাগম করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। 

এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার শিক্ষার্থীদের এ সময়ে করণীয় নির্ধারণ বা শিক্ষা কতটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে— এসব বিষয় সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যাগ গ্রহণ করা। বলা দরকার, দেশে লকডাউন দেয়া জরুরি বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঘরে ঘরে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই লকডাউন দিলে দ্রুত সংক্রমণ কমানো সম্ভব। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ফের সবকিছু খুলে দেয়া যাবে। 

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এখনই লকডাউন দেয়ার পক্ষে নয়। তারা মনে করে, লকডাউন দিলে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। আমরা বলতে চাই, এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে সংশ্লিষ্টদের সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের ওপরে। দেড় মাস আগেও সংক্রমণ ছিল দুই শতাংশের নিচে; অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজারেরও কম। সেই সংক্রমণ এখন প্রতিদিন গিয়ে ঠেকেছে প্রায় সাড়ে আট হাজারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কদিনের মধ্যেই সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। 

প্রসঙ্গত, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে। সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি জনসমাগম করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগদান করবেন, তাদের অবশ্যই টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানাগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। বাজার, শপিংমল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাবেশস্থলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। 

আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ যেন সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালন করা হয়— সে দিকটি সামনে রেখে সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, এর আগে বিধিনিষেধ পালনে অনীহার বিষয়টি উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে করোনা ভয়াবহ হয়ে উঠছে এবং দেশেই শুধু নয়, বিশ্বেও বাড়ছে এর প্রকোপ, তখন করোনা পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। 

এর আগে জানা গিয়েছিল, রোগী যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে ওমিক্রনের সামাজিক ট্রান্সমিশন হয়েছে বলেও মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত রোগী হলে তাদের সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। তখন ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এতে মৃত্যু বাড়তে পারে। আর তাই নিজেকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে— এমন বিষয়ও আলোচনায় আসে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিধিনিষেধের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে মনিটরিং নিশ্চিত করা এবং এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচার চালানো জরুরি। 

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়লে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে আর তখনই মৃত্যু বাড়তে থাকবে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সচেতন না হলে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হতে পারে, সেটি সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক— এমনটিই কাম্য।