Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

লিবিয়ার ভিসা পেয়েও পথে বসেছেন ৫ হাজার শ্রমিক!

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬, ১১:২৪ এএম


লিবিয়ার ভিসা পেয়েও পথে বসেছেন ৫ হাজার শ্রমিক!

বেলাল হোসেন:  যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ায় জণশক্তি রপ্তানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা। ভিটেমাটি বিক্রি করে পথে বসেছেন তারা। আবার কেউ কেউ ধার-দেনা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ লিবিয়ায় যেতে না পারলে এ দেনা কেমন করে পরিশোধ করবেন। আবার অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মনের দুঃখে কেউ কেউ বলছেন দেশে কষ্ট করার চেয়ে লিবিয়ায় গিয়ে মরলেও শান্তি পাবেন। জানা গেছে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের চিঠির প্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এদিকে বিদেশে শ্রমিক পাঠাচ্ছেন এমন রিক্রুটিং এজেন্সির তথ্যমতে এ সিদ্ধান্তের ফলে ভিসা হাতে পেয়েও বাংলাদেশ ত্যাগ করতে পারছেন না সারাদেশের অন্তত ৫ হাজার শ্রমিক। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে লিবিয়ায় যেতে না পেরে শ্রমিকদের অনেকেই এখন ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ধরণা দিচ্ছেন বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিতে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) লিবিয়ার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে চিঠি দিয়েছে বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশ থাকায় এসব বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবেও দূতবাসে যোগাযোগ করেছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। তবে কয়েকজন এজেন্সি মালিক দাবি করেন, লিবিয়ার বেশিরভাগ এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

দেশটিতে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী অবস্থান করছেন। তারা নিয়মিত দেশে রেমিটেন্সও পাঠাচ্ছেন। জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত লিবিয়ায় খোঁজখবর করে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ইফতেখার হায়দার আমার সংবাদকে জানান, বর্তমানে লিবিয়ায় কোনো গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে।

লিবিয়ায় বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এখন তিউনিশিয়া থেকে অফিসিয়ালি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। তার চিঠির প্রেক্ষিতেই সরকার সেখানে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রেখেছে। কবে নাগাদ লিবিয়ায় শ্রমিকদের পাঠানো হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। দেশটির পরিস্থিতি অনুকূলে হলে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে দেশের মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো যাবে কিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাওয়ার অনুমতি দিলেও তাদের মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব লেবার কাউন্সিলর দিয়ে আবার যাচাই করা হবে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, লিবিয়ার পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল নয়। দেশটিতে দেশি-বিদেশি সকলেরই নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বর্তমানে সেখানে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে ভাবছে না সরকার।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভিসা মধ্যস্থতাকারী আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমানে যারা লিবিয়ার ভিসা নিয়ে যেতে পারছে না তারা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। ওইসব ব্যক্তি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে ভিসার কাজে লাগিয়েছেন। এখন তাদের বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না বলে ঋণের টাকা পরিশোধের চাপ আসছে। এতে অনেক ব্যক্তি চরম বিপদের মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস জানিয়েছে, যেহেতু ওই দেশে এখন কোনো ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে না, এ জন্য তারা লিবিয়ার ভিসা প্রাপ্তদের যাওয়ার অনুমতি দেবে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে লিবিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ত্রিপোলি ও বন্দরনগরী বেনগাজিতে ঝুঁকির মধ্যে আবাসস্থল থেকে কাজে যাওয়া-আসা করছেন বাংলাদেশীরা। তাদের মনে নানা ভয়ভীতি থাকলেও অর্থের টানে কাজ করে চলেছেন এসব শ্রমিক। তবে লিবিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি শ্রমিকরা বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাতে পারছেন না। কারণ গত এক বছর ধরে টাকা পাঠানোর জন্য সবগুলো এজেন্সি বন্ধ। এ বিষয়টির সুরাহা কয়েকটি দেশ করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়নি। জানা গেছে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক বসবাস করছেন লিবিয়ায়। এক সময় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ছিল লিবিয়া।

সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০০৯ ও ২০১০ সালে ৩৫ হাজার বাংলাদেশি লিবিয়ায় গেছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় লিবিয়ার বাজারে সেসময়ে জাল ভিসায় লোক পাঠানো শুরু করে দালালচক্র। এদের অনেকেই বিমানবন্দরে আটক হন। এসব কারণেই ২০১০ সালে লিবিয়া বাংলাদেশ থেকে লোক নেয়া বন্ধ করে দেয়। তবে ২০১১ সালে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা শুরুর পর ৩৬ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসেন। ওই বছর মাত্র ৮৯ জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় যান।

তবে গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর দেশটির পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলে আবারও লোক নেয়া শুরু করে লিবিয়া। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ১৪ হাজার ৯৭৫ জন, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ১৭৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৪৬১ জন কর্মী যান দেশটিতে। আর ২০১৫ সালে মাত্র শতাধিক কর্মী গেছেন। আর বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে ৪০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশই আছেন রাজধানী ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে।