Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

দর্শক বান্ধব নয় মিরপুর চিড়িয়াখানা

মার্চ ১১, ২০১৫, ১২:৩৭ পিএম


দর্শক বান্ধব নয় মিরপুর চিড়িয়াখানা

 

বাংলাদেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা চিড়িয়াখানা। যা এখনও শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বপ্নের চিড়িয়াখানা দেখতে ছুটে আসে মানুষ। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ একটু বিনোদনের জন্য ছুটে আসেন এই চিড়িয়াখানায়। বিশেষ করে বিনোদনের জন্য শিশুদের প্রথম পছন্দ চিড়িয়াখানা।

 বিভিন্ন ছুটির দিনে হাজারো দর্শকের ঢল নামে মিরপুরের এই আকর্ষণীয় স্থানে। বছরে প্রায় ৩০ লাখের বেশি দর্শকের সমাগম ঘটে এই চিড়িয়াখানায় । লাখো মানুষের পছন্দনীয় এই প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক পরিবেশ, প্রাণী বৈচিত্র্য ও সুযোগ-সুবিধা এখনও দর্শকবান্ধব নয়। আর দর্শকবান্ধব না হওয়ায় ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব জু এ্যান্ড এ্যাকুরিয়ামস (ওয়াজা) এর সদস্যও হতে পারেনি।

মঙ্গলবার চিড়িয়াখানায় ঘুরে দেখা যায়, প্রাণীদের যে খাচাঁ রয়েছে তা ময়লা যুক্ত। দুর্গন্ধে অনেক কষ্টে প্রাণি দেখছেন দর্শনার্থীরা। তা ছাড়াও অনেক খাচাঁ রয়েছে ফাকা যাতে কোন প্রাণি নেই।

 বিক্রমপুর থেকে চিড়িয়াখানা দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, ছোট সময় চিড়িয়াখানার ব্যাপারে বইয়ে পড়েছি। তখন থেকেই একটা ইচ্ছা ছিল যে চিড়িয়াখানা দেখব। তবে এখানে আসার পরে আমার সব ধারণা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ বাঘের খাঁচার দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু মন ভরে দেখতে পারিনি দুর্গন্ধের কারণে। এছাড়া মিরপুরের হিমেল ও সুইটির ৫ বছর বয়সের সালমান বলেন,এটা ভাল না। গন্ধ চল মা বের হয়ে যাই আর কোনদিন এখানে আসব না।

এভাবেই দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ জনগণ। পরিবেশ ও অন্যান্য সমস্যার কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থারও অভিযোগ রয়েছে, তাদের মতে ঢাকা চিড়িয়াখানার অবকাঠামো অবস্থা, খাঁচার বিন্যাস ও পরিবেশসহ কোনকিছুই মান-উপযোগী নয়। এ কারণে ঢাকা চিড়িয়াখানাকে সদস্য করেনি। আর সংস্থার সদস্য না হওয়ায় বৈধ পথে পশু-পাখি আনতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ওয়াজা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না ঢাকা চিড়িয়াখানার কোন কর্মকর্তাকে। পঞ্চাশের দশকে প্রথম হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সীমিতভাবে চিত্রা হরিণ, বানর সহ কয়েকটি বন্যপ্রাণী নিয়ে চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু।

১৯৬০ সনে মিরপুর এলাকায় চিড়িয়াখানা স্থাপনের একটি মহা পরিকল্পনা হয়। পরবর্তীতে বন্য প্রাণি সংরক্ষণ,গবেষণা,শিক্ষা ও বিনোদনের উদ্যেশে ১৯৬১ সনে  প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করা হয়। প্রাণীদের বাসস্থান ও অবকাঠামো তৈরি এবং বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রাণি আনার পর হাইকোর্ট থেকে তা স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৪ সনের ২৩ জুন জনসাধণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এই চিড়িয়াখানা। ১৮৬.৬০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানায় বর্তমানে  ১১৫ প্রজাতির ১৬৬৭টি প্রাণি রয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রাণির মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ১০  ভারতীয় সিংহ ১০  আফ্রিকান সাদা সিংহ ২  কাল ভল্লুক ৫ কুমির ২৫ হাতি ৩ অজগর ২৪  নীল ময়ূর ১৭০  সাদা ময়ূর ৩৫ টি রয়েছে। সবছেয়ে  বেশি রয়েছে চিত্রা হরিণ। যার সংখ্যা ১৬৮। এছাড়াও রয়েচে প্রচুর পরিমাণে বানর ও পাখি ।

তবে অবরোধ হরতালের কারণে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে চিড়িয়াখানা। আতঙ্কে আগের মত দর্শনার্থী আসেনা বলে জানিয়েছেন ম্যানেজার শিপন। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার লোক আসত বর্তমানে ২৫‘শ থেকে ৩ হাজার লোকের সমাগম হয়। জনসাধরণ কম আসার কারণে তারা প্রচুর পরিমাণে ক্ষতির শিকার বলে দাবি করেন এই ম্যানেজার। চিড়িয়াখানায় যে সব প্রাণি রয়েছে তার মধ্যে অনেক প্রাণিই বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে। যা দেখার মত নয়। কোনরকম পড়ে রয়েচে খাচার ভেতরে। এ বিষয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ওয়াজার সদস্য হওয়া যাবে। দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সংকট যার কারণে প্রাণী আনা যাচ্ছে না। দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কারণে বিদেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী প্রাণী আনার সুযোগ নাই। সর্বশেষ প্রাণী আনার জন্য ৪ বার দরপত্র আহ্বান করা হয়।

কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়নি। চিড়িয়াখানার প্রাণী ও পাখি আনার জন্য কোন আন্তর্জাতিক দরপত্র গ্রহণ করা হয় না। আর দেশের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিদেশ থেকে প্রাণী আমদানি করে। এর মধ্যে 'ফ্যালকন' ইতিপূর্বে দরপত্রের নিয়ম ভেঙেছে। যথাসময়ে প্রাণী আমদানি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে ওই প্রতিষ্ঠানটি আর দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। বাকি রইলো একটি। চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিও প্রাণী আমদানির ক্ষেত্রে ততটা সক্ষম নয়। এ কারণে বিপাকে পড়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

গত ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৭০টি প্রাণী ও পাখি আনার জন্য ছয় কোটি ৯৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু দরদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কারণে ১১টি প্রজাতির ২৩টি প্রাণী এবং ১৫ প্রজাতির ১৬৭টি প্রাণী সব মিলে মাত্র ১৯০টি প্রাণী ও পাখি আনা হয়। বাকিগুলো আনা হয়নি। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, এই সমস্যা উত্তোরণ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও এব্যাপারে কোন নির্দেশনা পায় নি।

তবে বিশিষ্টজনরা মনে করেন এটা বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহ্য যা ধরে রাখা দরকার। যদি তা ধরে রাখা না যায় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম বিনোদন থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই বিশিষ্টজনরা এব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা মনে করেন যত সমস্যাই থাক না কেন সরকার ইচ্ছা করলে তা সমাধান করা সম্ভব।