Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ডুবে যাওয়া ট্যাংকার সাউদার্ন স্টার্ট-এ ধাক্কা দেয় এমভি টোটাল

ডিসেম্বর ১১, ২০১৪, ১২:২৯ পিএম


ডুবে যাওয়া ট্যাংকার সাউদার্ন স্টার্ট-এ ধাক্কা দেয় এমভি টোটাল

   সংকেতের তোয়াক্কা না করে পরিকল্পিতভাবেই এমভি সাউদার্ন স্টার্ট-৭ ট্যাংকারে ধাক্কা দেয় এমভি টোটাল ট্যাংকার। দুর্ঘটনাকবলিত ট্যাংকারের সুপারভাইজার ওয়ালিউল্লাহ অভিযোগ করে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন,গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে জয়মনি থেকে ট্যাংকারটি রওয়ানা দেয়। ঘন কুয়াশার কারণে ট্যাংকারটি মঙ্গলবার রাতে নোঙর করে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন তিনি আরেকটি ট্যাংকার আসতে দেখেন। ওই ট্যাংকারকে বেশ কয়েকবার সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু সংকেতের তোয়াক্কা না করে পরিকল্পিতভাবে এমভি সাউদার্ন স্টার্ট-৭ ট্যাংকারে ধাক্কা দেয় এমভি টোটাল।

ধাক্কা দেওয়ার পর এমভি টোটাল ট্যাংকারের সঙ্গে আটকে যায় সাউদার্ন স্টার্ট-৭। ধাক্কায় ট্যাংকারটি ডুবে যাওয়ার পর একটু পেছনে গিয়ে গন্তব্যের দিকে আবার রওয়ানা দেয় এমভি টোটাল। তারা বাঁচার জন্য ওই ট্যাংকারে উঠতে চাইলে বা তাদের সাহায্য চাইলে কেউ সাহায্য করেনি। বরং ধাক্কা দেওয়া ট্যাংকারের লোকজন তাদের গালাগালি করেন। তারা সাহায্য করলে হয়তো তাদের মাস্টারের কোনো ক্ষতি হতো না। বলে জানান ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারের সুপারভাইজার ওয়ালিউল্লাহ।
দুর্ঘটনার পর থেকে সাউদার্ন স্টার্টের মাস্টার নিখোঁজ রয়েছেন।

অভিযোগ করে ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর প্রশাসনকে জানান হয়। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আঘাতকারী ট্যাংকারটি খালি ছিল। তারা খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপোতে তেল দিয়ে খালি অবস্থায় চট্টগ্রামে ফিরছিল। আর আমাদের ট্যাংকারটি পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে তেল নিয়ে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল। যা একটি পাওয়ার হাউসের কাজে ব্যবহার হওয়ার কথা।’
তিনি আরও জানান, ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির মালিক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের শ্যালক আমির হোসেন ফরিদ।

সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমান ভুঁইয়া বলেণ সুন্দরবনে ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজ ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে নিবন্ধিত না। এটির লাইসেন্স দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
জাকিউর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘সমুদ্র পথে তেল পরিবহনের জন্য যে ধরনের ক্র্যাইটেরিয়া (উপযোগিতা) থাকার কথা, তা এ জাহাজে ছিল না। তা ছাড়া এগুলো অভ্যন্তরীণ নদীপথে তেল পরিবহন করার জন্য, যা ডিপো থেকে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। তেলবাহী জাহাজের জন্য যে ধরনের স্ট্যান্ডার্ড থাকার কথা তা এই জাহাজে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ জাহাজের লাইসেন্স তারা দেননি। ২০১০ সালে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য পেট্রোবাংলা এ সব জাহাজের লাইসেন্স দেয়। সে সময় থেকে এ জাহাজগুলো তেল পরিবহন করে আসছে।’

অপরদিকে এই ট্যাংকার দুটির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে বন বিভাগ। তাতে সুন্দরবনের শত কোটি টাকার ক্ষতির কথা বলা হয়েছে।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, দুই ট্যাংকারের কারণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আঘাতকারী ট্যাংকারটি ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করলে কোস্টগার্ড ওই ট্যাংকারটি আটক করতে পারত। কিন্তু তারা কেন তা করেনি আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা দুটো ট্যাংকারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
মঙ্গলবার রাতে বরিশাল থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউ) জাহাজ রওয়ানা দিয়ে বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি।

বুধবার সন্ধ্যায় মংলা বন্দরের উদ্যোগে ট্যাংকারের চারপাশ ঘিরে রাবার বয়া বসান হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, তেল যাতে ট্যাংকার থেকে বেরিয়ে কোথাও ছড়াতে না পারে সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ দিন সকাল থেকেই ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।