Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫,

অল্প সম্মানিতে দুঃখ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের

জানুয়ারি ১৫, ২০১৭, ০৫:৪৫ এএম


অল্প সম্মানিতে দুঃখ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সম্মানি বাড়িয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে দেশের প্রায় ৬৭ হাজার জনপ্রতিনিধির মধ্যে সবচেয়ে কম সম্মানি নির্ধারণ করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের মাসিক সম্মানি ৫ হাজার টাকা। আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্মানি হলো ৮ হাজার টাকা। অথচ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রতিমাসের সম্মানি করা হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। কম সম্মানি পেয়ে মন খারাপ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান আমার সংবাদকে বলেন, তারা একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের থেকে অনেক বেশি কষ্ট করি এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হই। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং জমজমাটও। তাই কোনোভাবেই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্মানির দিক থেকে ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্মানির এত ব্যবধান থাকা উচিত নয়। শ্যামনগর উপজেলাধীন কাশীমারি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, একজন উপজেলা ভাইস চেয়াম্যানের তুলনায় একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সম্মানি খুবই কম। এটা ঠিক হয়নি। আরও মূল্যায়ন করা উচিৎ ছিল।

তবে স্বাধীনতার পর এদিকে কেউ তাকায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিছুটা হলেও আমাদের মূল্যায়ন করেছেন। একই আক্ষেপ ইউপি মেম্বার বা সদস্যদেরও। কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, তাদের বেশিরভাগই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। এ অবস্থায় সম্মানিও সব থেকে কম। তাতে সংসার চলবে কি করে। তাদের কথার সঙ্গে প্রায় একমত স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীদের সম্মানি সঙ্গত কারণেই বেশি হবে কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বরারদের সম্মানি এত কম হবে এটা বাঞ্ছনীয় নয়। তিনি বলেন, একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সম্মানি ২৭ হাজার টাকা আর একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সম্মানি ৮ হাজার এবং একজন ইউনিয় পরিষদ সদস্যের সম্মানি ৫ হাজার এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কী কারণে এটা করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। এ ক্ষেত্রে একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিৎ।

এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ক্ষেত্রে সম্মানি দুই ভাগে দেয়া হয়। অর্ধাংশ সরকারি তহবিল থেকে বাকি অংশ ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে। যা অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সম্মানি কম থাকলে দুর্নীতি বাড়বে আর সম্মানি বেশি হলে দুর্নীতি কমবে, বাড়বে জনসেবা। এদিকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের মাসিক সম্মানি ৮৫ হাজার টাকা ও কাউন্সিলরদের ৩৫ হাজার টাকা। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানি ৫৪ হাজার টাকা ও সদস্যের মাসিক সম্মানি ৩৫ হাজার টাকা। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার মেয়রের সম্মানি ৩৮ হাজার ও কাউন্সিলরদের ৮ হাজার টাকা। ‘খ’ শ্রেণির মেয়র ২৮ হাজার ও কাউন্সিল ৭ হাজার টাকা। ‘গ’ শ্রেণির মেয়র ২৪ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৬ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি পান। আর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানি ৪০ হাজার টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যানের ২৭ হাজার টাকা।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় মেয়র এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা মূল ভাতার পাশাপাশি অন্য কিছু ভাতাও পান। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তেমন কিছু পান না। এরপরও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানির সরকারি অংশ ৩ হাজার ৬শ টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদের অংশ ৪ হাজার ৪শ টাকাসহ মোট ৮ হাজার টাকা। সদস্যদের সরকারি অংশ ২ হাজার ৩৭৫ টাকা ও পরিষদের অংশ ২ হাজার ৬২৫ টাকাসহ মোট পাঁচ হাজার টাকা। জানা গেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মানি যথাক্রমে এক লাখ ২০ হাজার ও এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। স্পিকারের সম্মানি এক লাখ ১২ হাজার টাকা, মন্ত্রীদের এক লাখ ৫ হাজার, প্রতিমন্ত্রী ৯২ হাজার, উপমন্ত্রী ৮৬ হাজার ৫শ এবং সংসদ সদস্যদের মাসিক সম্মানি ৫৫ হাজার টাকা।

২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্মানি ও বিভিন্ন প্রকার ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে তাদের সম্মানি প্রায় দ্বিগুণ করা হয়। সম্প্রতি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সম্মানিও দ্বিগুণ করা হয়েছে। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়। এখানে সর্বোচ্চ বেতন ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন করা হয় ৮ হাজার ২৫০ টাকা। আর মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্যসচিবের বেতন ৮৬ হাজার টাকা। সিনিয়র সচিবের বেতন ৮২ হাজার টাকা নির্ধারিত। তবে সরকারি কর্মকর্তারা যে বেতন পান বিশেষ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পেছনে মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা খরচ করতে হয় সরকারকে।

রাষ্ট্রপতির সম্মানি এক লাখ ২০ হাজার টাকা (মূল বেতন) হলেও এর সঙ্গে সুবিধাদি ও ভাতা রয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে তার বিমার জন্য ২৭ লাখ টাকা। তার স্বেচ্ছাধীন তহবিলে থাকবে ২ কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রপতির চিকিৎসা ও খাবার খরচ রাষ্ট্র বহন করে। তবে রাষ্ট্রপতির সম্মানি এর আগে ছিল ৬১ হাজার ২শ টাকা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানি ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর সঙ্গে তার অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়িয়ে যথাক্রমে ১ লাখ টাকা ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি বাড়িতে থাকলে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ পাবেন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। বিমান ভ্রমণের বিমার ২৫ লাখ টাকা।

ঢাকার বাইরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা ৩ হাজার টাকা ও স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার দেড় কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা ও খাবার খরচ সরকার বহন করে। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি ও সচিবদের সম্মানি আরও বেশি হওয়া উচিত। কারণ অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এমনও কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের বেতন আরও অধিক। উল্লেখ্য, স্পিকার, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, ডেপুটি স্পিকার, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের আনুপাতিক হারে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রীরা বেসরকারি বাড়িতে বাস করলে বাসাভাড়া পাবেন ৮০ হাজার টাকা। আগে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার টাকা।

তবে মন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় বেসরকারি বাড়িতে বসবাস করলে ২৫ হাজার টাকা ভাতা পান। আর সংসদ সদস্যরা পান দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা, মাসিক ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৫ হাজার টাকা, স্বেচ্ছাসেবী তহবিল ৫ লাখ টাকা, মাসিক লন্ড্রি ভাতা ১ হাজার ৫শ টাকা, ক্রোকারিজ ইত্যাদি মাসিক ভাতা ৬ হাজার টাকা, নির্বাচনি এলাকার মাসিক খরচ ১২ হাজার ৫শ টাকা, মাসিক পরিবহন খরচ ৭০ হাজার টাকা, বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ খরচ এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আরও রয়েছে অফিস খরচ ৯ হাজার টাকা, অধিবেশনকালীন যাতায়াত ভাতা ২শ টাকা, অন্যান্য সময় ৭৫ টাকা। অধিবেশনকালীন অ্যালাউন্স ৮শ টাকা, বিমা সুবিধা ১০ লাখ টাকা, টেলিফোন ভাতা ৭ হাজার ৮শ টাকা।