Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫,

আজ পয়লা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০৭:২৩ এএম


আজ পয়লা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন

আজ বুধবার। পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথমদিন। বসন্ত মানে পূর্ণতা, নতুন প্রাণের কলরব, তাই তো জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে নগরবাসী পেয়েছেন প্রকৃতির ছোঁয়া। বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বটতলায় ধ্রুপদী সংগীত পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় এবারের আয়োজন।

উৎসব আয়োজনের ২৫ বছর উপলক্ষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়ও ছিলো ভিন্নতা। বকুলতলাসহ চারটি স্থানে চলা এই বসন্ত বরণ উৎসবে অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন হাজান শিল্পী। যেখানে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনার পাশাপাশি ছিলো আবৃত্তি আর বসন্ত কথন।
সকাল ৭টায় শুরু হয়ে উৎসবের প্রথম পর্ব চলে ১০টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে বিকাল সাড়ে ৩টায় চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

বসন্তকে কে ঋতুরাজ বানিয়েছে?
বসন্তকে বিখ্যাত করেছেন আসলে কবিরা। নীরদ সি চৌধুরী বলেছিলেন, বাঙালি আসলে প্রেম করতে জানত না, তাদের প্রেমের জায়গাজুড়ে ছিল শরীর, বাঙালিকে রোমান্টিকতা শিখিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র। বাঙালি জীবনে বসন্তের কোনো ভূমিকা থাকার কোনো কারণ নেই, বাঙালিকে বসন্ত চিনিয়েছেন দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিকেরা। এর মধ্যে সংস্কৃত কবিরা আছেন, বিলেতি কবিরা আছেন এবং আছেন বাঙালি কবিরা।

বিলেতিদের জন্য বসন্তবন্দনা খুবই স্বাভাবিক, শীতকালে চারদিকে সাদা তুষার, ঠান্ডায় জীবন যায় যায়, গাছপালায় কঙ্কালের মতো নিষ্পত্র শাখা, তারপর আসে বসন্ত, প্রাণ ফিরে আসে চরাচরে, গাছে গাছে, পাতায় পাতায়, মানুষের জীবনে। আর আমাদের দেশে? পাতা ঝরে না, পাতা ঝরে আসলে চৈত্রে, মানে বসন্তে, আর যদিও বসন্তে কিছু বৃক্ষে নব কিশলয় দেখাও দেয়, ধুলোয় তারা থাকে ধূসরিত।

বাংলাদেশে বসন্তে ফুলই বা কই। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা, তার সঙ্গে বর্ষা কিংবা শরতের সম্পর্ক থাকতে পারে, বসন্তের সম্পর্ক নেই, আর ঢাকা শহরকে সবচেয়ে সুন্দর দেখায় কৃষ্ণচূড়ার কালে, পলাশ কিংবা শিমুলের কালে নয়। তবুও যে বসন্ত নিয়ে আমরা এত মাতামাতি করি, তার কারণ কবিরা লিখে লিখে এটাকে বিখ্যাত করে গেছেন। বসন্তের দখিনা সমীরণেও এত দূষণ যে একে আর মলয় বলবার উপায় নেই, ও তো নির্মল নয়।

বসন্তের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কামের। মহাকবি আলাওল (১৬০৭-১৬৮০) ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে লিখেছেন...
মলয়া সমীর হৈলা কামের পদাতি।
মুকুলিত কৈল তবে বৃক্ষ বনস্পতি॥
কুসুমিত কিংশুক সঘন বন লাল।
পুষ্পিত সুরঙ্গ মল্লি লবঙ্গ গুলাল॥
ভ্রমরের ঝঙ্কার কোকিল কলরব।
শুনিতে যুবক মনে জাগে মনোভব॥

পুরাণ মতে
উপদেবতারূপে কামদেবের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ: তাঁর সঙ্গীরা হলো একটি কোকিল, একটি পারাবত, ভ্রমরের দল, বসন্ত ঋতু ও মলয় বাতাস। এগুলো সবই বসন্তের প্রতীক। কামদেবের উৎসব হলো হোলি, হোলিকা বা বসন্ত। (উইকিপিডিয়া)

বসন্তবন্দনা রবীন্দ্রনাথ করেছেন, কাজী নজরুল ইসলাম করেছেন, নির্মলেন্দু গুণও করেছেন। আমাকেও করতে হবে! তা না হলে কবির খাতা থেকে নাম কাটা যাবে?

যাক। তবু সাহস করে বলি, কোকিলের কুহু কুহু মোটেও ভালো লাগে না। এর চেয়ে বউ কথা কও সুন্দর লাগে। পলাশ-শিমুলের চেয়ে ভালো লাগে শিউলি কিংবা কামিনি বা কৃষ্ণচূড়া। তবে, হ্যাঁ, আমের মুকুল ভালো লাগে। রবীন্দ্রনাথের—‘ও মা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে’—এটা আমি মানতে রাজি আছি।

এর বাইরে এই ধুলোবালি, এই গা চরচরে ভাব, এই রুখো প্রকৃতি আমার পছন্দ না।
রবীন্দ্রনাথ যতই গান:
ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল
ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল‍—

তাতে আমার মন টানে না। কিন্তু যখন তিনি গান, ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে আমাদের মধুর মিলন রটাতে’—তখন ভালোই লাগে। সেটা বসন্ত মধুর বলে নয়, মিলনটা মধুর বলে।

বাংলার শ্রেষ্ঠ ঋতু বর্ষা। গাছে গাছে বৃষ্টিধোয়া সবুজ নধর পাতা। বেলিফুলের সৌরভ বাতাসে। কৃষ্ণচূড়াও কিছু অবশিষ্ট থাকে। কোকিল না ডাকুক, গ্রামে এখনো বোধ হয় ব্যাঙ ডাকে। আর রাধা অভিসারে যান নীলাম্বরি পরে। বিরহী যক্ষের কথা ফুটে ওঠে মেঘদূতে। বসন্তকে কবিরা বলেছেন ঋতুরাজ। কেন বলেছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।