এপ্রিল ৭, ২০১৬, ০৭:৪৭ এএম
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর খুনিদের আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে ২৫ এপ্রিল আধাবেলা হরতাল পালনের ডাক দিয়েছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাইকোর্ট মোড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের সম্বনয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সোহেল।
তিনি বলেন, ‘তনু হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্র তদন্ত নামের নানান নাটক শুরু করেছে।’ সোহেল বলেন, ‘সারাদেশে নারীর নিরাপত্তা নেই। অন্যদিকে নিরাপত্তাবাহিনী বাশঁখালীর মতো এলাকায় গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। ছাত্রসমাজ এতোদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে গেছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে ছাত্রসমাজ তা রুখে দেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘২৪ এপিলের মধ্যে তনু হত্যকারীর প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার না করা হলে ২৫ তারিখ আধাবেলা হরতাল পালন করা হবে।’
গত রোববার দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১১টার দিকে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এসে জড়ো হন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দোয়েল চত্বর মোড়ে আসলে পুলিশ তাদের ব্যারিকেডের দিয়ে বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা হলে আবার তাদের হাইকোর্ট মোড়ে আবার ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ।
পরে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট মোড়ে সমাবেশ করে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সামজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের ৭ জন আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।
রমনা জুনের এডিসি ইব্রাহিম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের সচিবালয় ঘেরাও না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারপরও সচিবালয় ঘেরাও করতে গেলে আমরা বাধা দিই। এসময় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে প্রতিদিনের মতো তনু ঘর থেকে বের হন। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ হলে যে বাসায় টিউশনি করতেন সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওই বাসা থেকে তিনি বের হয়ে গেছেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। গলাকাটা মৃতদেহ নগ্ন অবস্থায় কালভার্টের পাশে ঝোপঝাড়ের ভেতর পড়েছিল। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। মোবাইল ফোনটিও পড়েছিল পাশে।কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও থিয়েটারের নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর বাবা মো. ইয়ার হোসাইন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ছিলেন। তনুর বাবা অনেক দিন ধরেই অলিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট তনু।তনুর লাশ উদ্ধার করার পর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। প্রথম দফায় ময়নাতদন্ত শেষে নানা প্রশ্ন দেখা দিলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য ১০ দিন পর গত বুধবার লাশ তোলা হয়। এ ঘটনা তদন্তে র্যাব, পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নামে। ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) থেকে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।