Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪,

ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি বন্ধ

প্রিন্ট সংস্করণ॥ নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১০, ২০১৮, ০৮:৪৫ পিএম


ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি বন্ধ

ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) স্থাপিত ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি এখন কর্মহীন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের (পিডি) স্বেচ্ছাচারিতা-আত্মীয়করণ ও দুর্নীতি অনিয়মের কারণে এই অচলাবস্থা চলছে বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগে জানা গেছে। জানা গেছে, ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির ল্যাবটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খুন, ধর্ষণ, পিতৃত্ব নির্ণয় ও অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, ডিভিশনাল স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরিতে কর্মরত জনবলসমূহের চাকরি জাতীয়করণ ও বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। গতকাল শনিবার সরজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ল্যাবটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ সেখানে নেই। গুরুত্বপূর্ণ এই ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহসহ সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাকর্মচারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মবিরতির পাশাপাশি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রথম ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি (এনএফডিপিএল) ও ডিভিশনাল ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি (ডিডিএসএল) সমূহে কর্মরত কর্মচারীবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। ১৯৯৭ সালে জুন মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক বিশেষজ্ঞদের সভার সুপারিশ অনুযায়ী মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গৃহীত ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম’ শীর্ষক প্রকল্পের ১ম পর্বে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২০০৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এনএফডিপিএল কার্যক্রম শুরু করা হয়। যার অধীনে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত বিচারব্যবস্থা ও জাতীয় বির্পযয় মোকাবেলায় ধর্ষণকারী সনাক্তকরণ, পিতৃত্ব, মাতৃত্ব, ভ্রাতৃৃত্ব, অভিবাসন, অজ্ঞাত ব্যক্তি, কিডনি দাতা-গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা হচ্ছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সাতজন সেনা কর্মকর্তার, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশন ট্রাজেডিতে নিহত ৫৭জন শ্রমিকের, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত ৩২২জন শ্রমিকের পরিচয় সনাক্তকরণ উল্লেখ্যযোগ্য। যা জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ৪র্থ পর্ব চলমান রয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৬৯১টি মামলার বিপরীতে প্রায় ১৪ হাজার ৯৯৪ নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব খাতে এই ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার ফি বাবদ প্রায় ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় হয়েছে বলে জানা গেছে। এরআগে ৩য় পর্যায়ের মেয়াদান্তেও ডিপিপিতে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হয়নি। গত ২০১৬ সালের জুন মাসে ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৩য় পর্ব সমাপ্ত হয় এবং কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে প্রকল্পের ৪র্থ  পর্বে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে গত ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে রাজস্ব খাতে স্থনান্তর ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী গত ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল এনএফডিপিএল পরিদর্শন করেন এবং বকেয়া সমেত রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রায় একবছর পার হলেও বকেয়া বেতনসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এর বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি বলে কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য জিওবি উন্নয়ন অংশে কর্মরতদের বেতন দেওয়া হবে না অথচ প্রকল্পের ডানিডা অংশের কর্মচারীরা তাদের বকেয়া বেতন পেয়েছেন। এ অবস্থায় ১২ বছরেরও বেশি সময় কর্মরত থেকেও চাকরি রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর ও বকেয়া বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য এনএফডিপিএল এবং ডিডিএসএল এর দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলসমূহকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ড. আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ল্যাবের যাত্রা শুরু।