Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫,

দারকি বেচে জীবন চলে না আয় চলে যায় দাদনের সুদে

প্রিন্ট সংস্করণ॥রোকনুজ্জামান সবুজ, ইসলামপুর (জামালপুর)

নভেম্বর ৪, ২০১৮, ০৮:০৬ পিএম


দারকি বেচে জীবন চলে না আয় চলে যায় দাদনের সুদে

দারকি বিক্রি করে জীবন চলে দারকি তৈরি কারিগরদের। দারকির বুননে বুননে মিশে রয়েছে তাদের কষ্টগাঁথা জীবন। শত কষ্টের মাঝে ধার-দেনায় পুঁজি খাটিয়ে বাপ-দাদার পেশাটি আঁকড়ে ধরে আছে দারকি কারিগররা। গ্রামের নাম বীর হাতিজা। গ্রামটির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে জামালপুরের মেলান্দহ-ইসলামপুর উপজেলার সিমান্ত। বসবাস করেন ২৫০টি পরিবারে ৭ শতাধিক মানুষ। এ গ্রামের অধিকাংশই বংশ পরম্পরা ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মাছধরার দারকি তৈরি পেশার সাথে জড়িত। গ্রামটি দারকি গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়ি যেন দারকি তৈরির ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কারখানা। পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সারাদিন দারকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটে তাদের। বাঁশের তৈরি এ পণ্যটি কোথাও বলে দারকি, আবার কোনো স্থানে চাঁই। একেক এলাকায় মাছ ধরার দারকি একেক নামে পরিচিত। ক্ষুদ্র এই কুটির শিল্পটি গার্মেন্টস শিল্পের মতো। দারকি তৈরির নারী কারিগর মনোয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, পুরো দারকি একজনে তৈরি করে না। একেকজন একেকটা তৈরি করে। প্রথমে বাঁশ কেটে কাঠি তৈরি, তারপর শলা, পা দিয়ে ডলা, গুনন, বুনন, গাঁথুনি, ফিটিং সবশেষে কর্ণার বেঁধে দারকির পুর্ণ রূপ দেয় কারিগররা। প্রতিটি দারকি তৈরিতে খরচ হয় ১২০ টাকা তা বাজারে বিক্রি করি ২০০ টাকায়। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে মাছ ধরার মৌসুমে পণ্যটির ব্যাপক চাহিদা। এখানকার তৈরি দারকি ঢাকার বিক্রমপুর, কলিগঞ্জ, টঙ্গি ও জয়দেবপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়ে থাকে।৬৫ বছর বয়সি বৃদ্ধ ময়নাল হোসেন বলেন, প্রত্যেক পরিবারের প্রতিটি সদস্য দারকি কারিগর। জন্মের পর থেকে মা-বাবার দারকি তৈরি দেখে ৪-৫ বছর বয়সে দারকি কারিগর হয়ে উঠে এখানকার শিশুরা। আমিও ৫ বছর বয়সে বাবা মার কাছে দারকি বানানো শিখেছি। ৬০ বছর ধরে দারকি তৈরি করে আসছি। খরচ বাদ দিয়ে যেকয় টাকা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। কি করমো, অন্য কিছু তো শিখি নাই। শত অভাবের পরও বাপ-দাদার পেশাটি আঁকড়ে ধরে আছি। কথা হয় বাচ্চু শেখ (৬২) নামে দারকি কারিগরের সাথে। তিনি বলেন, ৪ মাস আগে বন্যা হওয়ার কথা ছিলো। সুদে ঋণ নিয়ে পুঁজি খাটিয়ে নিজে ও কারিগর দিয়ে দারকি তৈরি করেছি। বন্যার পানি খাল-বিলে না আসায় দারকি বিক্রি হয়নি। বিক্রি না হওয়া তৈরিকৃত দারকি ঘরে স্তূপ আকারে পড়ে আছে। বিক্রি করে লাভের মুখ না দেখলেও সুদের টাকা গুনতে হচ্ছে। একদিকে সুদের টাকার চাপ অন্যদিকে সংসার চালানো নিয়ে খুবই হিমশিমের মধ্যে আছি। বন্যার খবরে আশায় বুক বেধেছিলাম আটকে পড়া দারকি বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করতে পারবো। এবারও তেমন বন্যা না হওয়ায় খাল-বিলে পানি আসেনি। ছমিরন বেগম (৪৫) বলেন, ঘরে প্রচুর দারকি মজুদ রয়েছে। দাদন ব্যবসায়ীর সুদের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বাঁশজাত এ শিল্পটি পুঁজির অভাবে ঋণের ফাঁদে পড়ে লাভের অংশ দাদনের সুদ গুনতে হয়। মাস শেষে কানাকড়িও হাতে থাকে না। সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাবে অস্তিত্ব ও সংকটের মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পটি। বাংলাদেশ কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জামালপুরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী ব্যবস্থাপক সম্রাট আকবর বলেন, পুঁজির অভাবে সংকটের মুখে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দারকি তৈরির কারিগরদের সহজ শর্তে ঋণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা করি, ঋণ প্রস্তাবনা পাশ হলে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পটি আরও সমৃদ্ধ হবে।