Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

করোনার ছোবল ও বাংলাদেশের গতিশীল অর্থনীতি

ইয়াহিয়া নয়ন

অক্টোবর ১৬, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


করোনার ছোবল ও বাংলাদেশের গতিশীল অর্থনীতি

করোনা মহামারির ছোবল থামাতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা। বেশ কয়েক বছরের কঠোর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের মনশ্চক্ষুতে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার চিত্রে ভেসে ওঠা বাংলাদেশ আজ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির একনিষ্ঠ উদ্যোগের প্রতীক হিসেবে পুরোপুরিই স্পষ্ট। হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র সেই দেশ সম্পর্কেই এখন প্রাক্কলন করা হচ্ছে ভবিষ্যতের ‘এশীয় বাঘ’ রূপে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দাতাদের অবসাদ ও সেকেলে করপ্রশাসনের সুবাদে রাজস্ব ঘাটতির দরুন প্রচুর চাপ সত্ত্বেও বেশ কয়েক বছর যাবৎ গড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে মাথাপিছু আয়ের দ্রুত পরিবর্ধনই আজ অর্থনৈতিক বিশ্বের কাছে বড় বিস্ময় বাংলাদেশ। অর্থনীতির চাকা সচল রেখে করোনা ভাইরাসকে মোকাবিলা করার রহস্য জানতে প্রতিবেশী দেশগুলোও আজ উদগ্রীব।

এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে দেশে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১-এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। শিল্প খাতে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের কারণে এমন প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং সরকারি উৎপাদনবান্ধব নীতিমালার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এ পর্যায়ে যাবে। 

এদিকে দেশের মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। হালনাগাদ প্রতিবেদনে গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে এনেছে এডিবি। বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে— যা আগে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। জীবিকা রক্ষায় জীবন বাঁচানোর জন্য সরকারের নীতিগুলো বাংলাদেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে, যা সাম্প্রতিক কঠিন সময়ে প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটিতে রাখতে সহায়তা করেছে। বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, উদ্দীপক ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দক্ষ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের মহামারি অবস্থায়ও অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা, দ্রুত টিকা দেয়া এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের উন্নতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো প্রশংসাযোগ্য। ব্যবসার প্রতিযোগিতা, বিদেশি বিনিয়োগ, রপ্তানি বৈচিত্র্য, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য ধারাবাহিক সংস্কার বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উদ্দীপিত করবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকেও ত্বরান্বিত করবে ।

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সব দেশের অর্থনীতিই আক্রান্ত হয়েছে, যার ফলে কমেছে মাথাপিছু আয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। আসলে এখানে মূল কৃতিত্বটা অন্য জায়গায় নিহিত। বন্যা, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাহায্য করেছে। ক্ষুদ্র দেশ, অথচ লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ৮০ লাখ। এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে যথাসময়ে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ, সুদূরদর্শী নগদ উদ্দীপনা, রপ্তানি আয় ও দৃঢ় রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহ। বিশাল জনসংখ্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মডেল আজ বিশ্বের কাছে এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত, যেটি তাকে সাহায্য করেছে এশীয় অঞ্চলে সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়ার নায়ক বানাতে। করোনার বিস্তার রোধে লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি যখন সংকুচিত হচ্ছিল, সে জায়গায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের সুফল সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। অবশ্য এক্ষেত্রে আমরা একা নই। অবশ্য মানুষে মানুষে পার্থক্য সব যুগেই ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বৈষম্য বা অসমতা যা-ই বলি না কেন, সারা বিশ্বেই তা বিদ্যমান। 

আসলে নতুন তথ্য হচ্ছে, অসমতার মাত্রা সম্পর্কে সবাই যা জানে, প্রকৃত মাত্রা তার চেয়ে অনেক বেশি। এক কথায় যা ভয়াবহ। নতুন এক বিশ্লেষণে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। অসমতার সরকারি হিসাবে শুধু সেসব অর্থই বিবেচনায় আনা হয়, যার প্রতি কর আদায়কারীদের নজর পড়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার পর এসব তথ্য জানিয়েছেন পৃথিবীর তিন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যালেট স্টাডসেটার, নিলস জোহানসেন ও গ্যাব্রিয়েল জুকম্যান। তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞে পানামা ও সুইজারল্যান্ডের কাছে থাকা অত্যন্ত গোপনীয় দলিলের সাহায্য নেয়া হয়েছে। যেগুলো জানার পর বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই আর এর মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে কর ফাঁকির বিস্ময়কর সব তথ্য উঠে এসেছে, যার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা সম্পদশালীরা। করোনা মহামারিতে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও জোরালো প্রবৃদ্ধি ও বিপুল উন্নয়ন চাহিদার কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতোই ‘স্থিতিশীল’ থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি)। বাংলাদেশের ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘বিবি-’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘বি’ বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা সংস্থাটি। বাংলাদেশের ওপর এসঅ্যান্ডপির বার্ষিক রেটিং পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়। ঋণমানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জোরালো প্রবৃদ্ধির ধারা গড় আয় বাড়াতে থাকবে এবং বছরজুড়ে বাহ্যিক ঝুঁকি মোকাবিলা করে টিকে থাকবে বলে যে প্রত্যাশা ছিলো— র্যাটিংয়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

এসঅ্যান্ডপির পূর্বাভাস অনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে দুর্বল অর্থনৈতিক ভিত্তির প্রভাব মোকাবিলা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমাগত স্বাভাবিক হবে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। এ বছর প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুন মাসে সমাপ্ত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। করোনার ধাক্কা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আগামী এক থেকে দুবছরে সম্ভব হবে। ২০১০ সালে এসঅ্যান্ডপির কাছ থেকে প্রথমবারের মতো ঋণমান পাওয়ার পর বাংলাদেশ একই রেটিং পেয়ে আসছে। অর্থনীতির মূল্যায়নের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের অর্থনীতি, বাজেট ঘাটতি ও বিপুল উন্নয়ন চাহিদার সম্মুখীন হলেও বিদেশি ঋণ ও জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে সুবিধা পাচ্ছে।

অর্থনীতিতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেশের প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করার বিপরীতে ভালো বাহ্যিক পরিস্থিতি, উল্লেখযোগ্য দাতাসম্পৃক্ততা থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, রেমিট্যান্স ও বিশ্বমানের তৈরি পোশাকশিল্পকে তুলে ধরেছে এসঅ্যান্ডপি।

এসঅ্যান্ডপির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সক্রিয় অংশ নেয়ার ফলে ঋণ পরিশোধ সক্ষমতার চলমান উন্নতি লক্ষণীয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক মুদ্রার উল্লেখযোগ্য রিজার্ভ উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও সংগ্রহে দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ, ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাংলাদেশের মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করবে। স্বল্প খরচে ও দীর্ঘমেয়াদে বহিঃঋণ অর্থনীতিতে পুনরায় অর্থায়ন ঝুঁকি হ্রাস করেছে। সহনীয় মাত্রার বৈদেশিক ঋণ, সাশ্রয়ী শর্তে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের সুযোগ, বৈদেশিক মুদ্রার উল্লেখযোগ্য রিজার্ভের উপস্থিতি ইত্যাদি কারণে লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যপ্রবাহ ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি।

করোনা ভাইরাস মহামারির ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বর্তমান বিনিময়মূল্য হিসেবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে এই অর্থ দেবে এডিবি, যা আমাদের অর্থনীতি আরও বেগবান করবে। টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির আওতায় এডিবি বাংলাদেশকে মোট ৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে। এর প্রথম কিস্তির ২৫ কোটি ডলার গত সপ্তাহে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি ২৫ কোটি ডলার আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুমোদন করা হবে বলে এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর মিডিয়াকে জানিয়েছেন।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করতে হবে। তাহলেই টেকসই পুনরুদ্ধার নিশ্চিত হবে। এডিবি বলেছে, ‘এই কর্মসূচি এমনভাবে পরিচালিত হবে, যাতে বাংলাদেশের মানুষের ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষমতা বাড়ে। ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতে (সিএমএসএমই) করোনার যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে।’ এ সহায়তা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনবে। সর্বোপরি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম বেগবান করতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান ‘দ্য প্যারাডক্স অব বাংলাদেশ মিরাকল’ নামে একটি নিবন্ধে বাংলাদেশকে উন্নয়নের উজ্জ্বল মডেল হিসেবে তুলে ধরে তা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের শেখার আছে মনে করেন। ব্লুমবার্গের কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাংকিং অনুযায়ী যেসব দেশের জিডিপি ২০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর, সেই ৫৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩তম। সর্বশেষ এপ্রিল ২০২১-এ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, করোনা অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। বাংলাদেশ কীভাবে করোনা মহামারির মধ্যেও অর্থনীতির গতি ধরে রাখলো, সে বিষয়ে আলোচনার আগে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় করোনা মোকাবিলায় কী কী উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে— সেগুলো উল্লেখ প্রাসঙ্গিক হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এমন সময়ে প্রণয়ন করা হয়েছিল, যখন প্রথম করোনা অভিঘাত প্রবল ছিলো। মার্চের শেষ থেকে মে পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের কারণে জনজীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির ছিলো। পরবর্তী সময়ে সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে লকডাউন খুলে দেয়। এ সময় মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত রাজস্ব, বিনিয়োগ, রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার ফলে দারিদ্র্যরেখার নিচে বা এর ওপরে থাকা জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাত হওয়ার কারণে অনেকের কর্মসংস্থান চলে যায়। সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুত বিস্তৃত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর পরিমাণ এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা এবং এ থেকে উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ কোটি ৮০ লাখ।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট