Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নৌ-দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ

এম. রনি ইসলাম

জানুয়ারি ৬, ২০২২, ০৭:৫০ পিএম


নৌ-দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ

সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে যানবাহন তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রাচীনকালে চাকা আবিষ্কারের মাধ্যমে যানবাহনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উদ্ভব ঘটে। যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের ইতিহাসকে যেমন নানাভাবে প্রভাবিত করে। যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যেকোনো স্থানের ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব সর্বাধিক।  বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় প্রাচীন কাল থেকে নৌপথ এদেশের একটি নিরাপদ-ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিববেশ বান্ধব যোগাযোগব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। 

আবার কিছু এলাকায় একমাত্র যোগাযযোগ ব্যবস্থা বাংলাদেশের পরিবহণখাতের অন্যতম অনুষঙ্গ এই নৌ-পথ। তবে সামপ্রতিক বছরগুলোতে নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনায় অপেশাদারী ও অতিমুনাফাকেন্দ্রিক মনোভাব, দুর্নীতি এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বস্ত যাতায়াতের এই খাত হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর মিলে সর্বমোট প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে। 

তন্মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীন নৌপথে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ব্যাপক নদী জরিপ করে মোট ১৩ হাজার ৭৭০ কিলোমিটার নাব্য নৌপথকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃক সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে নদীতে পলিমাটি পড়ে নাব্যতা হ্রাস পেতে পেতে ১৯৮৮ সালে এসে নৌপথ ৫ হাজার ৯৯৫ কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। 

বাংলাদেশের উপকুল, হাওর ও নদী তীরবর্তী জেলাসমূহ বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম এই বিস্তৃত নৌপথে ধনী-গরীব-জনসাধারণ, শিশু-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রতিদিনই পারাপার হয়।

ক্রমান্বয়ে সড়ক প্রসস্থকরণ, নতুন সড়ক নির্মাণ, পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চললেও নৌ-পথের গুরুত্ব কখনো কমে যাবে না বা এসব পথে চলাচলকারী যানের সংখ্যাও কমবে না বরং দিন দিন বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল পরিবহণ, নতুন নৌ-পথ চালু করে প্রান্তিক অঞ্চলে যোগাযোগ, ঝক্কিবিহীন যাতায়াতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ পর্যটক-ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পরিমাণ বাড়ায় এখনও নৌ-যান নির্মান সংশ্লিষ্ট ইয়ার্ড গুলোর কার্যক্রম বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে যাচ্ছে। 

এ অবস্থায় নৌপথগুলোর উপর প্রতিনিয়ত নতুন চাপ যেমন বাড়ছে তেমনই কমছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা-দায়িত্বশীলতা, ব্যবস্থাপনা, যথাযথ নজরদারী, আইনের প্রয়োগ, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীসাধারণ উভয়ের গণসচেতনতা। যার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বাড়ছে নৌদূর্ঘটনা; লঞ্চ-ট্রলার-কার্গো ডুবি এবং শত মায়ের কোল খালির আহাজারি, ঝরে যাচ্ছে অগণিত প্রাণ, দীর্ঘ হচ্ছে দুর্ঘটনার তালিকা। নৌ দুর্ঘটনার কারণকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়; নৌযানের অবকাঠামো ও মালিক কেন্দ্রিক সৃষ্ট সমস্যা এবং নৌযান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রিক অবহেলা। 

আলাদা করে দেখতে গেলে, (১)নৌ-পথের উন্নয়ন ও সংস্কারের অভাব: প্রকৃতির উপহার হওয়ায় নৌ-পথ তৈরীতে তেমন খরচ করতে হয় না আবার প্রতি কিলোমিটার সড়ক ও রেলপথের তুলনায় নৌপথের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, গুরুত্বপূর্ণ এসব নৌ-পথের উন্নয়ন ও সংস্কারে কর্তৃপক্ষের তেমন সুদৃষ্টি পড়েনি এবং প্রতিনিয়তই এই খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট সড়ক ও রেলপথের তুলনায় অনেক কমে আসছে। 

(২)নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা: দেশে যাত্রীবাহী দু হাজার লঞ্চসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নিবন্ধীত প্রায় ১৪ হাজার নৌ যানের চলাচল করছে। এর বিপরীতে নৌযানের সার্ভের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রাম দপ্তরে সার্ভেয়ারের সংখ্যা মাত্র এক জন করে। জাহাজের ইঞ্জিন পরিচালনা, ডেক পরিচালনা, স্থাপত্য বা নির্মাণ কৌশল সম্পর্কিত বিষয়সহ বহুমুখী বৈশিষ্ট্য থাকে। প্রতিটি বিষয় একে-অপরের থেকে আলাদা হওয়ায় শুধুমাত্র একজন সার্ভেয়ার দিয়ে এসব নৌযান পরিদর্শন করানোয় সব ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হয় না। আবার একজন সার্ভেয়ারকে বছরে যে সংখ্যক জাহাজ সার্ভে করতে হয় তা যৌক্তিকভাবে করা সম্ভব না হলেও সার্ভে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে। অতএব সার্ভের সময় নিরাপত্তা বিধানের জন্য সতর্কতা বা যথাযথ মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। 

(৩) নৌ-পথের টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও ঠিকাদারী কর্তৃপক্ষ উপরমহলকে ম্যানেজ করে দায়সারা কাজ শেষে প্রস্থান করছে। 

(৪) ঘাট ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ত্রুটি: ঘাট ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল কাজ কিন্তু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চঘাটসমূহে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত নেই। ফলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম লক্ষ করা যায়। 

(৫) নৌপথের নাব্যতা সংক্রান্ত জটিলতা: অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্যতা সংকট দূরীকরণে ড্রেজারের সংখ্যা ও সংরক্ষণ ড্রেজিং বাবদ বরাদ্দের পরিমাণও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। ​আবার যেসব ড্রেজার আছে তার উল্লেখযোগ্য অংশ বছরজুড়ে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকে, ফলে ড্রেজিং কাজ বন্ধ। 

(৬) মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই : যাত্রীবাহী লঞ্চ সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই হয়ে থাকে। আবার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ প্রতিরোধী আইনটি অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত যেসব বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই ঘটেছে এই এক কারণে। (

৭) রোটেশন পদ্ধতি : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলরত লঞ্চ মালিকরা উপর্যুপরি মুনাফা লাভে নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ২০০২ সাল হতে লঞ্চচালনায় নিয়ন্ত্রণসুচী বা রোটেশন পদ্ধতি চালু করেন। 
রোটেশন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট দিনে শুধু মাত্র একটি বা নির্দিষ্ট কোম্পানির লঞ্চ চলাচল করবে ফলে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝায় ও ভাড়া আদায় সাপেক্ষ মালিকগণ একচেটিয়া লঞ্চ চালনা করে থাকেন। 

(৮) নৌ-যান পরিচালকবৃন্দের অদক্ষতা : ঝড়-চর প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া, নৌযান পরিচালক, সারেং, সুকানীদের অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা ইত্যাদিও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। 

(৯) নৌযানসমূহের ত্রুটিপূর্ণ নকশা: সামপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া প্রায় প্রতিটি নৌ-দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হচ্ছে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নৌযান নির্মাণ করা হয় নি। উত্থাপিত এই অভিযোগ বেশ গুরুতর। 

(১০)নৌ-পথে সিগনাল ব্যবস্থার ত্রুটি : দেশের মোট যাত্রীর ১৪-১৭ শতাংশ এখনও নৌ-পথ নির্ভর তবুও এই পথে কার্যকর এবং যথেষ্ট সিগন্যালিং ব্যবস্থা নেই। 
(১১) অন্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা : আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও লঞ্চ চালনায় যুক্ত ব্যক্তিরা অনেক সময়ই কে আগে পৌঁছাতে পারে এই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনার উদ্ভব ঘটায়। 

(১২) যান্ত্রিক ত্রুটি : অনেক লঞ্চে সমুদ্রগামী জাহাজের পুরনো ইঞ্জিন ব্যবহার করায় প্রায়শই ইঞ্জিনত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা লক্ষ করা যায়। এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে তবে প্রান্তিক অঞ্চলের এবং ছোট ঘটনা গুলো তেমন জানাজানি না হওয়ায় সেসব অন্তরালেই থেকে যায়। বড় দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই উপস্থিত হন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সদস্যগণ; পর্যায়ক্রমে স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর, বিআইডব্লিওটিএ-র প্রতিনিধিবর্গ। দুর্ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ শেষে শিশুর মুখের একমাত্র ডাক ‘মা’ এর মতো জেলা প্রশাসন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর, বিআইডব্লিওটিএ, ফায়ার সার্ভিস একটি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে যা তিন থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। সাধারণত মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এসব তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেসব কমিটি প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ, দায়ী ব্যক্তি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে লিখিত সুপারিশ করেন। এরপর প্রতিবেদন পত্র চলে যায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে। কিছু প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় আর বড় অংশই থেকে যায় অগোচরে, কর্মকর্তার অফিসে আগের জমানো তদন্ত প্রতিবেদনের বস্তায়। ব্যস! এটুকুতেই দায়িত্ব শেষ! অ

থচ দরকার ছিলো, প্রতিবেদনে উল্লেখিত দুর্ঘটনার কারণ এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের জানানো এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ যাতে অন্যান্য নৌ-যান একই ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত না হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে ৫৩৫টি বড় ধরনের নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। এ

ই ৫৩৫টি নৌ দুর্ঘটনার বিপরীতে ৮৬৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিছু পরামর্শ ও দিক নির্দেশনাসহ সুপারিশ প্রণয়ন করে প্রতিবেদন জমা দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি এসব সুপারিশের তেমন কোন অংশ। এও শোনা যায় যে, সম্পাদিত প্রতিবেদনগুলোর যে অংশে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর ভিতরের পাতা গায়েব হয়েছে, আবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট কেউ নিজেদের ভেতরের লোক হলে তার বিরুদ্ধে যাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় বা না যায় সে রাস্তা তৈরী করে দেওয়া হয়েছে অর্থ্যাৎ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ-ই করা হয় না। আ

রেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বছরে উল্লেখযোগ্য নৌ দুর্ঘটনার সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে সর্বমোট ২৭৮টি সুপারিশ রয়েছে। সেসবের অধিকাংশই প্রায় সকল প্রতিবেদনে বিদ্যমান। অতএসব বোঝাই যাচ্ছে পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন-সুপারিশ যখন বাস্তবায়নই হয়না,তাহলে দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের নামে টাকা ব্যয় বা আই ওয়াশের কিইবা দরকার! এ

সব নৌ দুর্ঘটনা এড়ানো সহ নৌ-পথকে নিরাপদ এবং যাত্রীবান্ধব করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তর, সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থা, নৌ-আদালতসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের লোকবল-বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং যথাযথ তদারকির মাধ্যমে এসব পথের নাব্যতা রক্ষা সহ চলাচলকারি যানসমূহের পরিচালক, সারেং, সুকানীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, যাত্রী সচেতনতায় প্রতিটি লঞ্চ-জাহাজে লিখিত নির্দেশনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি, যান নির্মাণে যথাযথ নির্দেশনার অনুসরণ, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী যান পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই পথের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনে রাতে মালবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণাও করা যেতে পারে। এক সাহিত্যিক তাঁর লেখায় প্রেয়সীকে সম্বোধন করে লিখেছিলেন, ‘তোমার সেই প্রেমপত্র সরকারি প্রেসনোটিশের মতোই মিথ্যা’। প্রেসনোটিশের মতো তদন্ত কমিটিগুলো নিয়েও জনগনের ধারণা, এটিও মিথ্যা। জনগণ ধরেই নিয়েছে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটবে, শত শত মানুষ মারা যাবে আর সরকারের পক্ষ থেকে আসবে শুধু একটি উপহার, আর তা হলো ‘তদন্ত কমিটি’। সমপ্রতি ঝালকাঠিতে সুগন্ধা নদীর ওপর অভিযান-১০-এ আগুন লাগার পর দুই সপ্তাহ পার হলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। পুড়ে যাওয়া লঞ্চ থেকে ৪৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু কতজন নিখোঁজ আছেন, তা জানা যায়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা ছবি নিয়ে এখনো দুর্ঘটনাস্থলের কাছে আহাজারি করছেন। তাঁদের একটিই আকুতি, অন্তত স্বজনের মরদেহটি ফেরত দেওয়া হোক। আমাদের রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এসব আহাজারি-আর্তনাদের কোনো মূল্য আছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ এখন আর শুধু তদন্ত বা টকশো চায়না। তারা চায় এসব দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের সরাসরি শাস্তি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। তাই তিনিই পারেন এর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। আমরা আশাবাদী তিনি এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানসহ এ খাতের নৈরাজ্য দূরীকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা