Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর দর্শন উপেক্ষিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র

এ কে এম এ হামিদ

জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০৮:০০ পিএম


বঙ্গবন্ধুর দর্শন উপেক্ষিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বেনিয়া শাসন অপরিহার্য করার লক্ষ্যে ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করেছিল। এ নীতিতে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে সাম্প্রদায়িক বিবাদ উস্কে দেয়। কর্মক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করে শোষণ বঞ্চনাকেও উস্কে দিয়েছিল। জাতিগত বিবাদ ও শোষণ প্রক্রিয়াকে উস্কে দিয়ে শাসনকার্য দীর্ঘায়িত করাই ছিল তাদের এ অপকৌশলের উদ্দেশ্য।

পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় পাকিস্তান উপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী একই নীতি গ্রহণ করে। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পৃথক দুটি অঞ্চলে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়, সেখানেও একই ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষের আধিক্য থাকা সত্ত্বেও অপশাসন, শোষণ ও বঞ্চনা অব্যাহত থাকে। 

এক্ষেত্রে পাকশাসক গোষ্ঠিও ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করে। এ নীতিতে ধর্মীয় অপব্যবহারের পাশাপাশি অঞ্চল ভেদে শোষণ ও বঞ্চনার ব্যাপকতা লক্ষ্য করা গেছে। একই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীনে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রকট বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। সম্পদ বণ্টন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের জনগণ অধিক সুবিধা পায়। বঞ্চিত হয় পূর্বাঞ্চলের জনগণ। 

বিষয়টি গভীরভাবে পীড়া দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মানুষের এ দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, মেহনতি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন। ধাপে ধাপে মানুষকে সংগঠিত করে তিনি মুক্তির অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে উপনীত হন এবং নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটান। 

এ সংগ্রামের অঙ্গীকার ছিল শ্রমিক কৃষকসহ মেহনতি মানুষের শোষণ মুক্তির মাধ্যমে একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবে জানান দিয়েছেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।’

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকারের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু সুদৃঢ় করেন। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির লক্ষ্যে বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে-কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা’। ১৫(খ) অনুচ্ছেদে কর্ম ও মজুরির অধিকার নিশ্চিতকল্পে বলা হয়েছে ‘কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করে যুক্তিসংগত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার; যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার’। 

৩৪ অনুচ্ছেদে জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছে ‘সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লংঘিত হইলে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে’। অনুরূপভাবে বৈষম্য ও শোষণ প্রক্রিয়াকে তিনি জাতির প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা দিবসের বঙ্গবন্ধুর ভাষণে। তিনি চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনি চাকরি করেন আপনার মায়না দেয় ঐ গরিব কৃষক, আপনার মায়না দেয় ঐ গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়, আমি গাড়ি চলি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলুন, ওরাই মালিক। 

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ৫৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি বৈষম্যমুক্ত সমাজ নির্মাণে লড়াই করে গেছেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার জাতীয় বেতন স্কেলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য ১০টি গ্রেডের একটি সুষম বেতন কাঠামো উপহার দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সামাজিকভাবে অবস্থান মানুষ ভেদে যা থাকুক না কেন, মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে কোন ব্যবধান থাকতে পারে না। সবাইকে জীবন ধারণের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে সংবিধান বিলের বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সরকারি কর্মচারীদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। তাদের উচিত অন্যান্য দেশের সংবিধান পড়া। সরকারি কর্মকর্তারা ভিন্ন শ্রেণির নন। তারা আমাদের ভাই, তারা আমাদের বাপ। তারা আলাদা শ্রেণির নয়।’ 

বৈষম্য হ্রাসে বঙ্গবন্ধু আমলাদের জন্য অসংখ্য গ্রেড কমিয়ে মাত্র ১০টি গ্রেডে নিয়ে এসেছিলেন। জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণের পর ১৯৭৭ সালের বেতন স্কেল ১০টি গ্রেডের পরিবর্তে ২২টি গ্রেড প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের সূত্রপাত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে সচিবালয়ের সঙ্গে সচিবালয়ের বাইরের কর্মচারীদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে এ বৈষম্যকে আরেক দফা বৃদ্ধি করা হয়। 

এরপর থেকেই শোষণ আর বৈষম্য ঘিরে কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রাম চলতে থাকলেও তার অবসান না হয়ে বরং বিভিন্ন কৌশলে এ বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ড. ফরাসদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় চাকরি ও বেতন কমিশন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের বৈষম্য হ্রাসে পর্যায়ক্রমে ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১৬টি গ্রেড নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল বলে জানা যায়।

কিন্তু কতিপয় উচ্চ বর্ণবাদ ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বৈষম্যের মাঝে নিজেদের আভিজাত্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রস্তাবের চরম বিরোধিতা করে এবং চূড়ান্তভাবে ২০টি গ্রেড বহাল রাখে। শতাংশ বিবেচনায় বেতন বৃদ্ধির চমকপ্রদ ঘোষণা থাকলে ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের টাকার অঙ্কে বেতন দেখানো হলেও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়নি। 

একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ন্যায্যতা, সুশাসন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য বৈষম্যমুক্ত হওয়া জরুরি। অথচ, বৈষম্যের বিস্তারের মধ্য দিয়ে আজ মুক্তির পথ খুঁজছেন অতি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। প্রজাতন্ত্রের বেতন কাঠামো বৈষম্যের পাশাপাশি আজকাল জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবাস্তব জনবল কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামোর তারতম্য। বিশ্বব্যাপী একটি বিষয় স্বীকৃত যে, উপর স্তরের জনবল সংখ্যা মধ্যম ও নিম্নস্তরের জনবলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম হবে। 

এক্ষেত্রে পিরামিড ফর্মূলাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান। কিন্তু প্রশাসনের অতি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সেই বিশ্বস্বীকৃতি রীতি সংস্কৃতি উপেক্ষা করে উপরের স্তরে জনবল সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি নিম্নস্তরে জনবল সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস করে ফেলছে। জনপ্রশাসন, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও সেবার সর্বক্ষেত্রে একই ধরনের অরাজকতা বিরাজমান। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের তুলনায় শুধুমাত্র পদ-পদবি অলঙ্করণের তাগাদা থেকে উচ্চ স্তরে পদ সংখ্যার বৃদ্ধির কারণে সরকারে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। 

অথচ, তাদের নিকট থেকে জাতি সে ধরনের সেবা পাচ্ছে না। বরং, লক্ষ্য করা যায় অনেক কর্মকর্তা শুধুমাত্র পদবি অলঙ্কৃত করে বড় অঙ্কের বেতন ভাতা, বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে বিলাস ভ্রমণ, গাড়ি, বাড়ি ও সহায়ক কর্মচারীর সুযোগ সুবিধা অনৈতিকভাবে গ্রহণ করছে। এ ধরনের অনৈতিক ব্যয় আড়াল করতে আমলাতন্ত্রের অতি সুবিধাবাদী শ্রেণি এখন বিভিন্ন সংস্থায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। নিম্নস্তরের কাজ করার জন্য বিভিন্ন সংস্থায় আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে। ব্যাপক বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে অতি সুবিধাবাদী শ্রেণি যাদের আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করছে, তারা বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিলেও বছর শেষে বেতন বৃদ্ধির সুযোগসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছেন। 

বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমে জাতির আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণের বাসস্থানের মৌলিক অধিকার পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাউজিং অথরিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা অথরিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার গৃহায়ন সমস্যা সমাধানে ন্যূনতম উদ্যোগও নেয়নি। তারা স্বীয় দায়িত্ব পালন না করে ঢাকায় রাজকীয় জীবনযাপন করছে। 

বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও সমাজ রাষ্ট্রের সর্বত্র এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর নেপথ্য কারণ অতি সুবিধাভোগীদের শোষণ মানসিকতায় সৃষ্ট কর্মপ্রতিক্রিয়া। শোষণ, বঞ্চনা, কর্মহীনতা ও বৈষম্যকে সাথে নিয়ে কোনো জাতি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ করেছি। মহাকাশেও আমাদের সরব উপস্থিতি। এরপরও কেন আমরা ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। 

সেটির গভীরে প্রবেশ করা এখন সময়ে দাবি। আমরা যদি প্রকৃত সত্য অনুধাবন করতে না পারি, বঙ্গবন্ধুকে হূদয় থেকে ধারণ না করতে পারি, তাহলে বাহ্যিক উন্নয়নে রাষ্ট্র ধনী হলেও গণমানুষ অধিকার বঞ্চিতই থেকে যাবে। শোষণ বঞ্চনা বৈষম্যমুক্ত সমাজ রাষ্ট্র নির্মিত হবে না। বরং সুবিধাবাদী শ্রেণির আয়, ক্ষমতা, আভিজাত্য সবই গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। একদিন শোষিত, বঞ্চিত মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাগ্রত হলে সব অর্জন ম্লান হয়ে পড়বে। সেটি হবে স্বাধীনতার চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী মানুষের জন্য হতাশাজনক। 

কর্মশক্তিতে বলীয়ান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অথচ, ৫০ বছর পর আজ বিশ্বব্যাপী সেই কর্মমুখী আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতা-নির্ভর প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা সম্প্রসারণের কথা বলা হচ্ছে। উন্নত দেশসমূহে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার হার আজ ৫০ থেকে ৭০ ভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে ন্যূনতম ৫০ ভাগে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্কুল পর্যায়ে ২০২০ সালে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা প্রবর্তনের নির্দেশনা দিলেও নানা অজুহাতে ২০২০ সালে তা চালু হয়নি। ২১ সালে করা হয়নি, ২২ সালেও করা সম্ভব হবে না। 

শোনা যাচ্ছে ২৩ সালে নাকি করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে-এ ধরনের দীর্ঘসূত্রিতার মাধ্যমে কি শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ কে আংশিক হলেও বাধাগ্রস্ত করা হয়নি? ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে করাচিতে একটি ও ঢাকায় একটি পলিটেকনিক স্থাপনের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা যাত্রা শুরু করে। আজ পাকিস্তানে সরকারি পলিটেকনিকের সংখ্যা ১১/১২০০, ভারতে কয়েক হাজার হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে ৪৯টি পলিটেকনিক। 

এ বিষয় থেকে স্পষ্টত বলা যায়, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে বা দেশপ্রেম বিবর্জিত ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনকে উপেক্ষা করেছে। দেশকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বাধীনতার চেতনায় সমৃদ্ধ করতে হলে আমাদের অবশ্যই মানহীন বাণিজ্যিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা গেছে- কোন সময়ে সরাসরি-সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আবার কখনো সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের নানামুখী কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথ বা দর্শন থেকে বিচ্যূত করে জাতিকে ভিন্ন পথে ধাবিত করা হয়েছে ও হচ্ছে। যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকে উস্কে দিচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকলে দেশের গণমানুষ অধিকার বঞ্চিত হবে এবং চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। 

লেখক : উন্নয়ন গবেষক ও সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)