Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

পূর্ববঙ্গে বই প্রকাশনার ক্রমবিবর্তন

মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

মার্চ ১১, ২০২২, ০৬:৩০ পিএম


পূর্ববঙ্গে বই প্রকাশনার ক্রমবিবর্তন

মনীষী চিন্তাধারার লিপিবদ্ধ ও সুসংবদ্ধ গ্রন্থনার অপর নাম গ্রন্থ। সুচিন্তিত এই ভিত্তির ওপরই গড়ে উঠে মানুষের সমাজ সংস্কার ও সভ্যতা। একখানা ভালো গ্রন্থ বা বই বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সৃষ্টি যা বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ, জীবনের পর জীবন। 

আদিকালে কোনো পুস্তক ছিল না। মাটি-গাছের পাতা বা ছাল, পাহাড়ের গা, কাদার তৈরি চাকতি, প্যাপিরাস ভেলাম, পার্চমেন্ট ইত্যাদির বহু সংস্কারণ আর বিবর্তনের ফলশ্রুতি আজকের বই। আদিম যুগে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশে বিভিন্ন রকমের সাংকেতিক চিহ্ন এবং শব্দ উচ্চারণ করত, পাহাড়ের গুহায় ছবি আঁকত । ৩১ হাজার বছর আগের এরকম ছবি নামিবিয়ায় পাওয়া যায়। ছবি, প্রতীকী চিহ্ন, সংখ্যা অতঃপর অক্ষরের উদ্ভবের মধ্যে দিয়ে কখনো গাছের পাতায়, কখনো পাহাড়ের গাঁয়ে খোদাই করে রাখতো। 

কালক্রমে সর্বপ্রথম চীনে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ছাপার কাজ শুরু হয়। মাটি, কাঠ ও তামা খোদাই করে ছবি,অতঃপর চীনা হরফে ব্লক বানিয়ে তা কালি দিয়ে কাপড়ে ও কাগজে ছাপার কাজ চলতে থাকে। কালির পর জলপাই এ তেল ব্যবহারে ছাপায় বৈচিত্র্য আসে। এ ধারা অনুসরিত হতে যাকে ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকায়। মোঘলযুগে মসলিন সরঞ্জাম তৈরির জন্য পশ্চিম ভারত থেকে যেমন কিছু কর্মকার নিয়ে আসা হতো। 

তেমনি তারা বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য হাতে তৈরি কাগজ ব্যবহার করত যা এই ঢাকায় তৈরি হত ঢাকার একটি অঞ্চলেই কাগজ তৈরির প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে কাগজীটোলা হিসেবে গড়ে উঠে, যেখানে রাজাদের ব্যবহারের উপযোগী দলিল দস্তাবেজ, ফরমান জারির জন্য উন্নতমানের কাগজ তৈরি করত। সর্বসাধারণের জন্য কাগজ তৈরি হত ঢাকার অদূরে বিক্রমপুরে। 

ঢাকার কাগজে স্থানীয় ছাপাখানায় মুদ্রিত সাহিত্য সাময়িকী, দলিল দস্তাবেজ বাঁধাইয়ে নিযুক্ত কারিগরগণ এসেছিলেন লাক্ষেৗ থেকে। তারা সেখানে আরবি, ফারসি বই বাঁধাইয়ে পারদর্শী ছিলেন। পরবর্তীতে কাজের স্বার্থেই তারা ঢাকা আসেন ও প্রকাশনা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যান ১৮৩৬ সালে হাজি মোহম্মদ মুহসীন কর্তৃক হুগলি কলেজ স্থাপিত হওয়ার পর সেখানে পূর্ববাংলার বেশ কিছু মুসলিম ছাত্র ইংরেজি ও বাংলা পড়তে যায়। 

এর প্রায় আড়াই দশক পর ১৮৬০ সালে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয় বাংলা মুদ্রণযন্ত্র ’বাঙালা প্রেস। দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পন ইতিহাস খ্যাত নাটক মুদ্রিত হয় এই প্রেস থেকে। প্রকাশনার শুরুতেই অর্থাৎ উনিশ শতকে প্রকাশনা খাতে মূলত সংবাদ পত্রের প্রকাশকাল। ১৯ শতকে ঢাকার সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকের নামের পরিবর্তে থাকতো প্রকাশকের নাম। প্রায় ক্ষেত্রে সম্পাদককে একই সংগে রিপোর্টার ফিচার লেখক, অনুবাদক সব কিছুর দায়িত্ব পালন করতে হতো। 

১৮৬১ সালে ‘বাঙালা যন্ত্র’ প্রেস থেকে ঢাকার প্রথম সংবাদ নির্ভর সংবাদপত্র সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘বাঙালা যন্ত্র’ ঢাকার সাহিত্য-সংস্কৃতি তথা সামাজিক জীবনে কতবড় বিপ্লব এনেছিল উপরিউক্ত প্রকাশনা থেকে অনুমান করা যায়। এ ঘটনাটি শুধু ঢাকা নয়, গোটা পূর্ববাংলার মুদ্রণ শিল্পের বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে। ‘বাঙালা যন্ত্র’ প্রেসকে অনুসরণ করে ষাটের দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে আরও পাঁচ-ছয়টি প্রেস ঢাকায় স্থাপিত হয়। এগুলোর মধ্যে নুতন যন্ত্র, সুলভ যন্ত্র, গিরিশ যন্ত্র, পূর্ববঙ্গ প্রেস, শীতল প্রেস অন্যতম। সত্তর দশক পর্যন্ত ঢাকার মুদ্রণ যন্ত্রের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েকটি। সত্তরের পর এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা ২০ শতকের শুরুতে এসে পৌঁছায় ৪০ এর কাছাকাছি।  

উনিশ শতকে ঢাকা থেকে যে সকল বই প্রকাশিত হয়, তার বেশির ভাগই ছিল কবিতার বই। এ প্রসংগে ১৮৭০ সালে ঢাকার একটি সংবাদপত্রে মন্তব্য ছিল ‘এখন এদেশে পদ্য পুস্তকের এক প্রকার স্রোত প্রবাহিত হইতেছে। সে সকলের আয়তন অতি ক্ষুদ্র। কোনখানি ১২ পৃষ্ঠায়, কোনখানি ১৮ পৃষ্ঠায়, কোনখানি ২৪ পৃষ্ঠায়, ঊর্ধ্ব সংখ্যার ৩৬ পৃষ্ঠার পরিচিত। 

কবিতার প্রতি দুর্বল আকর্ষণে সে সময়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ’ এবং কবিতা পত্রের মধ্যে ছিল ১৮৯২ সালে প্রকাশিত কুশাই সরকারের নানাবিধ গান, ১৮৬০ সালে কৃষ্ণযন্ত্র মজুমদারের সম্প্রাদনায় প্রকাশিত হয় কবিতা কুসুমাবলী। এছাড়া উনিশ শতকে বেশ কিছু পুথিও প্রকাশিত হয়েছিল। যেগুলো হলো ১৮১৭ সালে প্রকাশিত আজিমউদ্দিনের গজবনামা, ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত আহমদ আলীর জুলমাত, মনিরুদ্দিন আহমদের ঝড়ের পুঁথি ইত্যাদি।

ঢাকার প্রেসসমূহ কোনো এক বিশেষ অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত ছিল না। অধিকাংশ প্রেস স্থাপিত হয়েছিল বাংলাবাজার মোড়ে, বাবুবাজার হয়ে বেগমবাজার এলাকায়। এর বাইরে মোগলটুলী বা অরমানিটোলায়ও সময় সময় স্থাপন করা হয়েছিল প্রেস বা মুদ্রণযন্ত্র। তবে প্রেস বা ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত পুস্তক বিক্রয়ের কেন্দ্র পাটুয়াটুলী থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় খুব সম্ভব অধিকাংশ মুদ্রণ যন্ত্রই স্থাপিত হয়েছিল এ অঞ্চলে। 

কিন্তু বাংলাদেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনার প্রসার নিয়ে বলতে গেলে যে নামটি না নিলে এর ইতিহাস সম্পূর্ণ হবে না, তিনি তৎকালীন নদীয়ার (বর্তমানে কুষ্টিয়া) কুমারখালী মহকুমার কাঙাল হরিনাথ মজুমদার। অত্যাচারীত কৃষকদের অধিকার আদায়ে একসময় তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রথমে লিখতেন সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায়। 

পরে ১৮৬৩ সালের এপ্রিল মাসে (বাংলা ১২৭০) কলকাতার গিরিশ চন্দ্র বিদ্যারত্ন মুদ্রণযন্ত্র থেকে প্রকাশিত হলো মাসিক গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা। এরপর কাঙাল হরিনাথ ১৮৭৩ সালে মথুরনাথ মৈত্রের সহযোগিতায় কুমারখালীতে কাঙাল হরিনাথ মথুরনাথ যন্ত্র স্থাপন করেন। এটি এম এন প্রেস নামে বিখ্যাত হয়। মথুরনাথ যন্ত্র সর্বশেষ ব্যবহূত হয়েছে ১৯৮৪ সালে, ভোটার তালিকা ছাপানোর কাজে। কুমারখালী স্টেশন বাজারে কাঙাল হরিনাথের প্রেসের নাম অনুসারে এমএন প্রেস নামে প্রেসটি এখনো আছে।

সত্তর দশক পর্যন্ত ঢাকার মুদ্রণ যন্ত্রের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েকটি। সত্তরের পর এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা ২০ শতকের শুরুতে এসে পৌঁছায় ৪০ এর কাছাকাছি। ঢাকার প্রেসসমূহ কোনো এক বিশেষ অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত ছিল না। 

বাংলাদেশের প্রকাশকরা পূর্ববঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরুর পূর্বে সমাজের প্রতি যে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ছিল না। পাকিস্তান পর্বের বেশির ভাগ সৃজনশীল প্রকাশক ছিলেন লেখক কিংবা সাংস্কৃতিকধর্মী এ তালিকায় মোহাম্মদ নাসির আলী, কাদের খান, আতিকুল, মাওলা, মহিউদ্দিন আহমেদ, হামিদুল ইসলাম প্রমুখ। পাকিস্তান আমলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি ব্যক্তিগত সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে। 

গড়ে উঠে ভাষা আন্দোলন, প্রতিষ্ঠান হয় বাংলা একাডেমিকেন্দ্রিক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে থাকে। প্রকাশনা জগতে উনবিংশ শতাব্দী থেকেই যেসব প্রকাশক সংস্থা গ্রন্থপ্রকাশে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তন্মধ্যে গ্লোব লাইব্রেরি, ইউপিএল, মুক্তধারা, মাওলা ব্রাদার্স, আহমদ পাবলিশার্স, খান ব্রাদার্স, সোলায়মানিয়া বুক ডিপো, খোশরোজ কিতাব মহল, আদিল ব্রাদার্স অন্যতম। 

১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত ঢাকার ব্যবসায়িক স্থান চকবাজার, বড় মসজিদের আশপাশে পুথি প্রকাশনা ও বিক্রয়ের স্থান হিসেবে গড়ে উঠে। মোহাম্মাদিয়া ও এমদাদিয়া লাইব্রেরিতে আল কুরআন ও সিপারার মতো ধর্মীয় গ্রন্থের কয়েকটি প্রকাশনা ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান আমলে ওয়াইজঘাট এলাকায় মুসলিম পাবলিশিং হাউস, আরমানিটোলায়, সিদ্দিকীয়া লাইব্রেরি, পরবর্তীতে নিউ মার্কেটে বইপাড়া গড়ে ওঠে। তবে বর্তমানের বই ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র বাংলাবাজারকেন্দ্রিক বই প্রকাশনা ও বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে গত শতকের ছয় দশকে গড়ে উঠে বলে জানা যায় (বই প্রকাশেরকলা কৌশল : কাদের মাহমুদ)

দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজার বাংলাবাজার জায়গাটি মূলত মোগল আমলের আগেই ঢাকা শহরের একটি জনসমাগমপূর্ণ এলাকা ছিল। ওই সময় এই এলাকাটি ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। আরও পরে এসে ঢাকা শহর পশ্চিম দিকে বেড়ে যায়। যার ফলে চকবাজার হয়ে উঠে ব্যবসা-বাণিজ্যের আসল ঠিকানা। কিন্তু বইয়ের জন্য বাংলাবাজার ঠিকই থেকে যায়। কারো কারো মতে, বাংলাবাজার নামটি সেখান থেকেও আসতে পারে। কারো কারো মতে বাংলাবাজার এলাকাটিতে শুরু থেকে বাঙালিরা বসবাস করতেন। তারা সেখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যার কারণে এর নামকরণ হয়ে যায় বাংলাবাজার।

মূলত উনিশ শতকের শেষ চতুর্থাংশে বাঙালি মুসলিম সমাজের ক্ষুদ্র শ্রেণির শিক্ষিত অংশটি উপলব্ধি করেন যে তাদের সমাজটি পৃথিবীর সভ্য সমাজ থেকে এমনকি প্রতিবেশী হিন্দুদের তুলনায় বহুগুণ পিছিয়ে আছে। এই উপলব্ধি তাদের আত্মজাগরণকে উৎসাহিত করে। এই যাত্রাকে তরান্বিত করার জন্য সওগাত সাহিত্যে সমাজ, মুসলিম সাহিত্য সমাজের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাসের এই প্রগতিশীলতা ও রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই উন্মেষ ঘটে সৃজনশীলতার। ধর্মীয় চেতনার বাইরে কুসংস্কার শোষণ আর নীপিড়নের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন একদল প্রগতিমনা ও সৃজনশীল লেখক, বিশ্বব্যাপী বিশ্বযুদ্ধের আবহ, সমাজতান্ত্রিক দেশ সমূহের উন্মেষ ও স্বদেশের বিপ্লববাদের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিহানির আশঙ্কা এই তরুণদের আলোড়িত করেছিল। 

এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৯ সালে ঢাকার অদূরে বাকল্যান্ড বাঁধের ধারে নিয়মিত আড্ডায় বসতেন ব্রিটিশবিরোধী তরুণ লেখকরা এই তরুণরাই গড়ে তোলেন ‘প্রগতি লেখক সংস্থা’। তারা কলকাতায় প্রকাশ করতেন প্রগতি নামের পত্রিকা। প্রগতির অনুরূপ একটি সংলাপ ঢাকা থেকে প্রকাশে রনেশ দাশ গুপ্তের প্রস্তাবে ১৯৪০ সালে প্রগতি লেখকদের পত্রিকা ক্রান্তি। প্রকাশক ছিলেন সোমেন চন্দ। কুলুটোলা ঢাকার জুবলি রোড থেকে প্রকাশিত ও জুবলি প্রেস থেকে মুদ্রিত এই ক্রান্তি পত্রিকায় প্রকাশ পায় কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, অনুবাদ, নিবন্ধ।

আজ বাংলাদেশে যেসব লেখক প্রতিষ্ঠিত তাদের অনেকের ভিত্তি তৈরি করেছিল ঢাকার প্রগতি সাহিত্য আন্দোলন। তন্মধ্যে সরদার ফজলুল করিম, মুনীর চৌধরী, কবীর চৌধুরী, সানাউল হক, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, কাজী আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ। এ ছাড়া রনেশ দাশ গুপ্ত, সোমেন চন্দ, আহসান হাবীব, শওকত ওসমান প্রমুখ ছিলেন সাহিত্য আন্দোলনের শরীকদের মধ্যে অন্যতম।

আধুনিক প্রজন্ম বই ব্যবসার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থানের কারণে নীলক্ষেত, কাটাবন, আজিজ সুপারমার্কেট হয়ে এখন শাহবাগ ধানমন্ডি বেইলি রোডের দিকেও অগ্রসর হচ্ছে। উল্লেখ্য, কর্পোরেট মিডিয়ার অনুসরণ করে এখন প্রকাশনাও খাতেও কর্পোরেট উপস্থিতি লক্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, বাতিঘর, পাঠকসমাবেশ, দ্যা ডেইলি স্টার বুকস, প্রথমা, অন্যতম। দেশের বাইরে বাংলা বইয়ের চাহিদা রয়েছে। 

কলকাতার পরে লন্ডনসহ বাঙালি অধ্যুষিত যেকোনো দেশেই বইয়ের চাহিদা বিদ্যমান।  তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বইয়ের তথ্য সহজেই পাঠকের হাতে চলে যাওয়ায় অ্যামাজান বা হালের বাংলাদেশের রকমারী.কম অনলাইন শপিং যেন কোনো মাধ্যম বা বিক্রয় কেন্দ্রের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে বই বিক্রয় পদ্ধতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখানে প্রকাশক নিজে তার স্টল থেকে বইমেলায় সরাসরি বই বিক্রি করে থাকেন যা অন্য মাধ্যমে বিক্রয়ের প্রাপ্তি সারা বছরের সমান। 

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলদেশের বই প্রকাশনা শিল্পের এই অগ্রযাত্রা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এটাই প্রত্যাশা। 

লেখক : জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক